কর্মক্ষেত্রে ‘কর্মচারী সহায়তা দল’ (Employee Resource Group – ERG): অন্তর্ভুক্তিমূলক পরিবেশ তৈরিতে সহায়ক।
কর্মক্ষেত্রে কর্মীদের মধ্যে পারস্পরিক সহযোগিতা, সমর্থন এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক পরিবেশ গড়ে তোলার লক্ষ্যে বিশ্বজুড়ে বিভিন্ন সংস্থায় ‘কর্মচারী সহায়তা দল’ বা ইআরজি-র ধারণাটি জনপ্রিয়তা লাভ করেছে। এই দলগুলি কর্মীদের বিভিন্ন পরিচয়, যেমন – লিঙ্গ, জাতিগত পরিচয়, অথবা মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ক সমস্যাগুলির ভিত্তিতে তৈরি করা হয়।
মূলত, কর্মক্ষেত্রে বৈচিত্র্য এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক সংস্কৃতির প্রসারে এই ধরনের দলের ভূমিকা অনস্বীকার্য।
বহু বছর আগে, বিশেষত সত্তরের দশকে, আমেরিকাতে এই ধরনের দলের সূচনা হয়েছিল, যেখানে প্রধানত জাতিগত বিভেদ, লিঙ্গবৈষম্য এবং যৌন অভিমুখীতার মতো বিষয়গুলি নিয়ে আলোচনা করা হতো। সময়ের সাথে সাথে, এই দলগুলির পরিসর বৃদ্ধি পেয়েছে এবং এতে পারিবারিক দায়িত্ব পালন, মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ক সমস্যা, নিউরোডাইভার্সিটি (স্নায়ু বৈচিত্র্য) এবং প্রজন্মের মধ্যেকার পার্থক্য-সহ বিভিন্ন বিষয় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।
এর মূল উদ্দেশ্য হলো কর্মীদের মধ্যে একটি নিরাপদ স্থান তৈরি করা, যেখানে তারা তাদের অভিজ্ঞতা বিনিময় করতে পারে এবং একে অপরের প্রতি সহানুভূতিশীল হতে পারে।
তবে, কিছু ক্ষেত্রে ইআরজি-র সমালোচকরা মনে করেন যে এই ধরনের দলগুলি কর্মীদের মধ্যে বিভাজন তৈরি করতে পারে এবং কর্মীদের মধ্যে কিছু ক্ষেত্রে অনাকাঙ্ক্ষিত সুবিধা সৃষ্টি করতে পারে। কেউ কেউ মনে করেন, এর ফলে কর্মীদের মধ্যে পারস্পরিক সম্পর্ক ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।
যদিও, অনেক সংস্থাই তাদের ইআরজি-র উদ্দেশ্য এবং কার্যকারিতা পর্যালোচনা করে, কর্মীদের উদ্বেগের প্রতি সম্মান জানিয়ে উপযুক্ত পদক্ষেপ গ্রহণ করে।
ইআরজি-র প্রধান সুবিধাগুলির মধ্যে অন্যতম হলো কর্মীদের মধ্যে একটি কমিউনিটি তৈরি করা, যা তাদের নেতৃত্ব দেওয়ার দক্ষতা বাড়াতে সহায়ক হয়। এছাড়াও, এই দলগুলি কর্মীদের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের সঙ্গে তাদের মতামত এবং ধারণা বিনিময় করার সুযোগ করে দেয়।
এর মাধ্যমে কর্মীরা নিজেদের কোম্পানির নীতি নির্ধারণ এবং সিদ্ধান্ত গ্রহণেও অংশ নিতে পারে। বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে, ইআরজি-র সক্রিয়তা কর্মীদের মধ্যে কাজের প্রতি আগ্রহ এবং আনুগত্য বৃদ্ধি করে, যা শেষ পর্যন্ত কোম্পানির উন্নতিতে সহায়ক হয়।
যদি কোনো সংস্থায় ইআরজি-র মতো দল তৈরি করার পরিকল্পনা করা হয়, সেক্ষেত্রে কিছু বিষয় বিবেচনা করা প্রয়োজন। প্রথমে, একজন সিনিয়র নেতার সমর্থন প্রয়োজন, যিনি এই উদ্যোগের পৃষ্ঠপোষক হবেন।
এরপর, সাধারণত ১০-২০ জন কর্মীর সমন্বয়ে একটি দল তৈরি করা যেতে পারে, যারা একটি নির্দিষ্ট বিষয়ে আগ্রহ অনুভব করে। এই দলটিকে তাদের কার্যক্রমের বিষয়ে সুস্পষ্ট ধারণা দিতে হবে এবং কোম্পানির কাছে একটি প্রস্তাবনা পেশ করতে হবে।
এই প্রস্তাবনায় দলের উদ্দেশ্য, কার্যক্রম এবং সম্ভাব্য ফলাফল উল্লেখ করা উচিত।
বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, কর্মীদের মধ্যে সংযোগ স্থাপন এবং তাদের মধ্যে পারস্পরিক সহযোগিতা বৃদ্ধি করতে ইআরজি-র ধারণা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বর্তমানে, অনেক সংস্থাই তাদের কর্মীদের জন্য একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক কর্মপরিবেশ তৈরি করতে আগ্রহী, যেখানে প্রত্যেক কর্মীর সমান সুযোগ থাকবে এবং তারা তাদের মতামত প্রকাশ করতে পারবে।
তথ্য সূত্র: এসোসিয়েটেড প্রেস (Associated Press)