বিখ্যাত ক্যামেরুনীয় শিল্পী এবং কিউরেটর কোয়ো কুওহ আর নেই। গত ১০ই মে, ২০২৫ তারিখে তার প্রয়াণ ঘটে। তিনি ছিলেন মাত্র ৫৭ বছর বয়সী।
কুওহ ছিলেন ২০২১ সালের ভেনিস বিয়েনালে-র (Venice Biennale) প্রথম নারী শিল্পী পরিচালক। শিল্পকলার জগতে তিনি এক উজ্জ্বল নক্ষত্র ছিলেন, যিনি আফ্রিকা মহাদেশ এবং আফ্রো-ডায়াস্পোরার শিল্পকলার প্রসারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন।
কোয়ো কুওহ-এর জন্ম ক্যামেরুনে, এবং তিনি আফ্রিকা মহাদেশের শিল্পকলার উন্নতিতে সারা বিশ্বে পরিচিতি লাভ করেন। তিনি ছিলেন কেপ টাউনের জেইজ মিউজিয়াম অফ কন্টেম্পোরারি আর্ট (Zeitz MOCAA)-এর প্রধান কিউরেটর এবং নির্বাহী পরিচালক।
তার নেতৃত্বে এই জাদুঘরটি আফ্রিকান শিল্পকলার এক গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্রে পরিণত হয়েছিল।
কুওহ-এর কাজের মূল দিক ছিল বিশ্বজুড়ে শিল্পকলার বিভিন্ন ধারার মধ্যে সংযোগ স্থাপন করা এবং প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর শিল্পীদের, বিশেষ করে আফ্রিকান নারীদের শিল্পকর্মকে তুলে ধরা। তিনি চেয়েছিলেন এমন একটি ভবিষ্যতের সূচনা করতে, যেখানে বিভিন্ন সংস্কৃতির শিল্পীরা তাদের কাজের মাধ্যমে নিজেদের কথা বলতে পারে এবং তাদের শিল্পকর্মের মাধ্যমে নিজেদের সংস্কৃতিকে বিশ্ব দরবারে তুলে ধরতে পারে।
ভেনিস বিয়েনাল হলো একটি আন্তর্জাতিক আর্ট প্রদর্শনী, যা প্রতি দুই বছর অন্তর অনুষ্ঠিত হয়। এটি বিশ্বের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ শিল্প প্রদর্শনী হিসেবে পরিচিত।
কুওহ-কে যখন ২০২৬ সালের বিয়েনালের পরিচালক হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছিল, তখন এটি ছিল একটি ঐতিহাসিক মুহূর্ত। কারণ তিনিই ছিলেন এই গুরুত্বপূর্ণ পদে আসা প্রথম কোনো আফ্রিকান নারী। তিনি এই দায়িত্ব গ্রহণের মাধ্যমে বিশ্ব শিল্পকলার ইতিহাসে এক নতুন দিগন্তের সূচনা করেছিলেন।
কুওহ সব সময় চেয়েছেন শিল্পকলার জগতে আরও বেশি অন্তর্ভুক্তিমূলক পরিবেশ তৈরি করতে। তিনি তরুণ শিল্পী এবং কিউরেটরদের উৎসাহিত করতেন, এবং তাদের জন্য একটি সহায়ক পরিবেশ গড়ে তোলার চেষ্টা করেছেন।
তার মতে, শিল্পের ভবিষ্যৎ কেবল দৃশ্যমানতার মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়, বরং এটি পরিবর্তনের একটি শক্তিশালী মাধ্যম।
কোয়ো কুওহ-এর প্রয়াণে বিশ্বজুড়ে শিল্পকলার জগতে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। তার কাজের মাধ্যমে তিনি যে দৃষ্টান্ত স্থাপন করে গেছেন, তা আগামী প্রজন্মের শিল্পীদের জন্য পথপ্রদর্শক হয়ে থাকবে।
তিনি দেখিয়েছেন, কীভাবে শিল্পকলা একটি শক্তিশালী হাতিয়ার হতে পারে, যা বিভিন্ন সংস্কৃতিকে একত্রিত করতে এবং মানুষের মধ্যে পারস্পরিক বোঝাপড়া বাড়াতে সাহায্য করে। তার প্রয়াণ নিঃসন্দেহে শিল্পকলার জন্য এক অপূরণীয় ক্ষতি।
তথ্য সূত্র: The Guardian