যুদ্ধবিরতির আলোচনা: ইউক্রেন ইস্যুতে ট্রাম্পের উপর ক্ষিপ্ত রাশিয়া?

ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধের আলোচনায় অচলাবস্থা, ট্রাম্প শিবিরের সঙ্গে কি পুতিনের সমঝোতা?

আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশেষজ্ঞদের মতে, ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধের জন্য রাশিয়া ও ইউক্রেনের মধ্যে শান্তি আলোচনা কার্যত থমকে আছে। এই পরিস্থিতিতে প্রাক্তন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ঘনিষ্ঠ সহযোগী এবং ক্রেমলিনের মধ্যে গোপন আলোচনা চলছে বলে খবর পাওয়া যাচ্ছে।

যদিও এই বিষয়ে উভয় পক্ষের মধ্যে ঐকমত্যে পৌঁছানো কঠিন হয়ে দাঁড়াচ্ছে।

যুক্তরাষ্ট্রের একটি সূত্র জানাচ্ছে, ডোনাল্ড ট্রাম্প ক্ষমতা ফিরে পেলে দ্রুত এই যুদ্ধের একটা শান্তিপূর্ণ সমাধান করতে চাইছেন। তবে এক্ষেত্রে রাশিয়ার কিছু শর্ত রয়েছে।

জানা গেছে, ট্রাম্পের দূত হিসেবে পরিচিত স্টিভ উইটকফ সম্প্রতি বেশ কয়েকবার মস্কো সফর করেছেন। যদিও তাঁর এই সফরের আনুষ্ঠানিক কোনো ঘোষণা ছিল না।

উইটকফের রাশিয়া সফর এবং আলোচনার মধ্যেই ইউক্রেন এবং ইউরোপীয় মিত্রদের মধ্যে উত্তেজনা বাড়ছে।

বিভিন্ন সূত্রে খবর, ট্রাম্প প্রশাসন ইউক্রেনকে একটি প্রস্তাব দিতে চেয়েছিল, যেখানে ২০১৪ সালে রাশিয়ার ক্রিমিয়া দখলের স্বীকৃতি দেওয়ার কথা বলা হয়েছিল।

কিন্তু ইউক্রেন সেই প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে। এর পরেই ট্রাম্প প্রশাসনের পক্ষ থেকে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি-র প্রতি অসন্তোষ প্রকাশ করা হয়। ট্রাম্প সরাসরি জেলেনস্কিকে আলোচনার অগ্রগতিতে বাধা দেওয়ার জন্য দায়ী করেছেন।

অন্যদিকে, রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন আলোচনার টেবিলে নিজেদের অবস্থানকে শক্তিশালী করতে চাইছেন। তিনি আলোচনার জন্য প্রস্তুত রয়েছেন বলে দেখালেও, ইউক্রেন এবং তার মিত্রদের উপর শান্তির পথে বাধা সৃষ্টির অভিযোগ করছেন।

এমন পরিস্থিতিতে, পুতিন যেন আলোচনার সময়ক্ষেপণ করছেন বলে মনে হচ্ছে।

বিশ্লেষকরা মনে করছেন, ট্রাম্প সম্ভবত ক্ষমতা গ্রহণের প্রথম ১০০ দিনের মধ্যে যুদ্ধবিরতি নিশ্চিত করতে চাইছেন। কিন্তু ক্রেমলিন এক্ষেত্রে কিছুটা ধীরগতি দেখাচ্ছে।

রুশ প্রেসিডেন্টের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ সম্প্রতি ট্রাম্পকে ইউক্রেন সংঘাতের দ্রুত সমাধানে না যাওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন।

বিভিন্ন সূত্রে খবর, রাশিয়া সম্ভবত যুদ্ধ বন্ধের জন্য তাদের পুরনো অবস্থান থেকে সরে আসতে চাইছে। তারা বর্তমানে যুদ্ধবিরতির মাধ্যমে বিদ্যমান ফ্রন্টলাইনগুলোতে সংঘাত বন্ধ করতে চাইছে।

বিনিময়ে ওয়াশিংটন রাশিয়ার ক্রিমিয়া দখলের স্বীকৃতি দিতে পারে এবং ২০১৪ সালের পর থেকে মস্কোর সামরিক সাফল্যের বিষয়টি মেনে নিতে পারে।

তবে, এই প্রস্তাবের বিষয়ে এখনো চূড়ান্ত কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। রাশিয়ার পক্ষ থেকে আলোচনার শর্ত হিসেবে ইউরোপীয় শান্তিরক্ষী বাহিনীকে ইউক্রেনে মোতায়েন করার বিরোধিতা করা হয়েছে।

রাজনৈতিক বিশ্লেষক আলেকজান্ডার বাউনভ মনে করেন, পুতিন সম্ভবত এখনো দ্বিধায় আছেন—ট্রাম্পের সঙ্গে সম্পর্ক বজায় রাখবেন, নাকি রাশিয়ার স্বার্থ রক্ষার জন্য তাকে ব্যবহার করবেন।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ট্রাম্প যদি ইউক্রেনকে সামরিক সহায়তা বাড়াতে রাজি না হন, তাহলে ক্রেমলিন সম্ভবত তেমন একটা উদ্বিগ্ন হবে না। কারণ, সেক্ষেত্রে পরিস্থিতি আগের মতোই থাকবে, যা রাশিয়ার জন্য সুবিধা নিয়ে আসবে।

তথ্য সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *