আতঙ্কের খবর! ক্ষেতে প্লাস্টিক, শরীরেও? বন্ধ করা যাবে?

**বাংলাদেশের কৃষিতে প্লাস্টিকের দূষণ: এক গভীর উদ্বেগের কারণ**

দেশের আনাচে-কানাচে ছড়িয়ে থাকা প্লাস্টিক দূষণ এখন একটি পরিচিত সমস্যা। শহর থেকে গ্রাম পর্যন্ত, এর প্রভাব দৃশ্যমান।

বিশেষ করে, কৃষিক্ষেতে প্লাস্টিকের ব্যবহার এবং এর থেকে সৃষ্ট দূষণ মারাত্মক উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। একদিকে যেমন খাদ্য নিরাপত্তা হুমকির মুখে, তেমনই পরিবেশের উপর পড়ছে এর নেতিবাচক প্রভাব।

সম্প্রতি আন্তর্জাতিক সংবাদ সংস্থা অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস (এপি)-এর একটি প্রতিবেদনে এই বিষয়ে আলোকপাত করা হয়েছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সারা বিশ্বেই কৃষিকাজে ব্যবহৃত প্লাস্টিক মাটির সঙ্গে মিশে যাচ্ছে। উন্নত দেশগুলোর পাশাপাশি, উন্নয়নশীল দেশগুলোতেও এর প্রভাব বাড়ছে, যা উদ্বেগের কারণ।

উদাহরণস্বরূপ, উগান্ডায় কফি চাষের জন্য ব্যবহৃত প্লাস্টিক ব্যাগগুলো (স্থানীয় ভাষায় ‘বুভেরা’) এখন মাঠের পর মাঠ ছেয়ে ফেলছে। আমাদের দেশেও একই ধরনের সমস্যা দেখা যায়, বিশেষ করে নার্সারি ও সবজি চাষে ব্যবহৃত প্লাস্টিক সামগ্রীর কারণে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে কৃষকরা তাঁদের ফসল রক্ষার জন্য প্লাস্টিকের উপর আরও বেশি নির্ভরশীল হয়ে পড়ছেন। বৃষ্টির জল ধরে রাখা, পোকামাকড় দমন, এমনকি মাটির আর্দ্রতা ধরে রাখতেও প্লাস্টিকের ব্যবহার বাড়ছে।

কিন্তু এর ফলে একদিকে যেমন মাটির উর্বরতা কমছে, তেমনিভাবে এই প্লাস্টিকগুলো ধীরে ধীরে মাইক্রোপ্লাস্টিকে পরিণত হয়ে খাদ্য শৃঙ্খলে প্রবেশ করছে, যা মানবদেহের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর।

জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার (FAO) একটি প্রতিবেদন অনুযায়ী, কৃষিতে ব্যবহৃত প্লাস্টিক বর্জ্যের প্রধান আধার হলো মাটি। কিছু গবেষণায় দেখা গেছে, সমুদ্রের চেয়েও বেশি পরিমাণে মাইক্রোপ্লাস্টিক মাটি দূষিত করছে।

এই পরিস্থিতিতে, বিজ্ঞানীরা এর প্রতিকারের উপায় খুঁজছেন। যেমন, বর্জ্য পরিশোধনের মাধ্যমে তৈরি হওয়া ‘বায়োসলিড’ সার হিসেবে ব্যবহারের ফলে মাটির নিচে মাইক্রোপ্লাস্টিকের পরিমাণ বাড়ছে কিনা, তা নিয়েও গবেষণা চলছে।

এক্ষেত্রে, কৃষকদের সচেতনতা বাড়ানো এবং প্লাস্টিকের বিকল্প ব্যবহারের সুযোগ তৈরি করা জরুরি। উন্নত বিশ্বে যেখানে পুনর্ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিকের ব্যবহার বাড়ছে, সেখানে আমাদের দেশেও এই বিষয়ে গুরুত্ব দিতে হবে।

অনেক দেশে কৃষকরা তাঁদের ব্যবহৃত প্লাস্টিক ফেরত দিয়ে অর্থ উপার্জন করেন। আমাদের দেশেও এমন ব্যবস্থা চালু করা যেতে পারে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, প্লাস্টিক দূষণ কমাতে হলে প্রয়োজন সমন্বিত পদক্ষেপ। সরকারের পাশাপাশি, বিভিন্ন এনজিও এবং সাধারণ মানুষের সচেতনতা এক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।

প্লাস্টিকের ব্যবহার কমিয়ে, বিকল্প উপায়ের অনুসন্ধান এবং কৃষকদের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধির মাধ্যমে আমরা আমাদের কৃষিক্ষেত্রকে প্লাস্টিক দূষণের হাত থেকে রক্ষা করতে পারি।

তথ্য সূত্র: এসোসিয়েটেড প্রেস

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *