যুক্তরাষ্ট্রের বৃহৎ সুপারমার্কেট চেইন ‘ক্রোগার’-এর প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার (সিইও) পদত্যাগ নিয়ে এখনো রহস্য কাটেনি। প্রায় পাঁচ দশক ধরে এই কোম্পানির সঙ্গে যুক্ত থাকার পর, রডনি ম্যাকমুলেন নামের ওই শীর্ষ কর্মকর্তার আকস্মিক প্রস্থানের কারণ হিসেবে জানা গেছে, তার ‘ব্যক্তিগত আচরণ’-এর বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ।
এই ঘটনার জেরে এবার আলোড়ন তুলেছে নব্বই দশকের জনপ্রিয় শিল্পী জুয়েল কিলচারের সঙ্গে ক্রোগারের একটি মামলা।
জানা গেছে, ‘ওয়েলনেস ইউর ওয়ে’ শীর্ষক একটি উৎসবের অংশীদারিত্ব নিয়ে চুক্তিভঙ্গের অভিযোগ এনে এই মামলাটি দায়ের করা হয়েছে।
যদিও ম্যাকমুলেন এই মামলার সরাসরি বিবাদী নন, তবে তাকে সম্ভাব্য সাক্ষী হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।
বিষয়টি নিয়ে মুখ খুলতে চাননি ম্যাকমুলেন এবং তার আইনজীবী। তারা আদালতে একটি ‘সুরক্ষা আদেশ’ চেয়েছেন, যাতে এই ‘অপ্রীতিকর’ বিষয় নিয়ে কোনো প্রশ্ন না করা হয়।
তবে, ওহাইও অঙ্গরাজ্যের একটি আদালত ম্যাকমুলেনকে তার পদত্যাগের কারণ হিসেবে জড়িত ব্যক্তিদের নামসহ লিখিত জবাব দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন।
মামলার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট আইনজীবীরা বলছেন, ম্যাকমুলেনের পদত্যাগের কারণ জানতে চাওয়া ‘রুটিন’ প্রক্রিয়া এবং এর মাধ্যমে ক্রোগারের ভেতরের সংস্কৃতি সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যেতে পারে।
এদিকে, ক্রোগারের পক্ষ থেকে এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করা হয়নি। যদিও আদালতের অনুমতিসাপেক্ষে ম্যাকমুলেনের লিখিত জবাব গোপন রাখা হতে পারে।
তবে আদালত যদি সুরক্ষা আদেশের আবেদন খারিজ করে দেয়, তাহলে ম্যাকমুলেনের পদত্যাগের বিষয়ে আরও তথ্য প্রকাশ্যে আসার সম্ভাবনা রয়েছে।
এই মামলার শুনানি সম্ভবত ২০২৬ সালের মে মাসে অনুষ্ঠিত হবে।
জুয়েল কিলচারের একটি কোম্পানির সঙ্গে ‘ইনক্লুশন কোম্পানিজ’-এর প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ট্রেভর ড্রিঙ্কওয়াটারের মাধ্যমে ‘ওয়েলনেস ইউর ওয়ে’ উৎসবের ধারণা আসে।
ড্রিঙ্কওয়াটারের কোম্পানি এর আগেও বিভিন্ন সেলিব্রিটি-অংশগ্রহণে রিটেইল-স্পন্সরড উৎসবের আয়োজন করেছে।
এই উৎসবের অংশ হিসেবে ২০১৮ থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত জুয়েল মোট ১২টি অনুষ্ঠানে গান গেয়েছেন এবং ৪৫টি প্যানেলে অংশ নিয়েছেন।
মামলার অভিযোগ অনুযায়ী, উৎসবগুলো লাভজনক হওয়ার পরে ক্রোগার ড্রিঙ্কওয়াটার এবং জুয়েলের কোম্পানিকে সরিয়ে দেয় এবং তাদের জায়গায় ক্রোগারের নির্বাহী কলিন লিন্ডহোলজের বোনকে নিয়ে আসে।
আইনজীবীদের দাবি, এটি ক্রোগারের ব্যবসায়িক নৈতিকতা নীতির লঙ্ঘন।
মামলার নথিতে আরও বলা হয়েছে, লিন্ডহোলজ ড্রিঙ্কওয়াটারকে জানান, এই উৎসবটি ক্রোগারের বার্ষিক গুরুত্বপূর্ণ অনুষ্ঠানে পরিণত হয়েছে এবং সিইও রডনি ম্যাকমুলেনও এটিকে তার কর্মজীবনের অংশ করতে চেয়েছিলেন।
এই ঘটনার পরে, ক্রোগার এবং নতুন কোম্পানি ‘অ্যাডভান্টেজ’ ২০২২ ও ২০২৩ সালে আরও দুটি উৎসবের আয়োজন করে।
এতে বাদীর ২ মিলিয়ন মার্কিন ডলার ক্ষতি এবং কমপক্ষে ৫ মিলিয়ন ডলার মুনাফা থেকে তারা বঞ্চিত হয়েছে বলে অভিযোগ করা হয়েছে।
ম্যাকমুলেনের আকস্মিক প্রস্থানের কারণ জানতে আগ্রহী হয়েছে ক্রোগারের প্রতিদ্বন্দ্বী কোম্পানি ‘আলবার্টসনস’-ও।
তাদের দাবি, ম্যাকমুলেনের আচরণের কারণে তাদের সঙ্গে ক্রোগারের ২৫ বিলিয়ন ডলারের একত্রীকরণ চুক্তি বাতিল হয়ে যায়।
আলবার্টসনস চাইছে, ম্যাকমুলেনের পদত্যাগের কারণগুলো যেন প্রকাশ করা হয়।
কারণ, তাদের মতে, এই বিষয়টি একত্রিতকরণের সময় ম্যাকমুলেনের দায়িত্ব পালনে ব্যাঘাত ঘটিয়েছিল।
জানা গেছে, ২০২৩ সালে ম্যাকমুলেনের আয় ছিল ১৫.৭ মিলিয়ন মার্কিন ডলার।
পদত্যাগের কারণে তিনি ১১ মিলিয়নের বেশি ডলারের শেয়ার এবং বিকল্প সুবিধা থেকে বঞ্চিত হয়েছেন।
তথ্য সূত্র: সিএনএন