যুদ্ধ শেষের কয়েক ঘণ্টা আগে জাপানের কুমাগায়া শহরে বোমা হামলা, আজও পোড়া ক্ষত:
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সমাপ্তির কয়েক ঘণ্টা আগে, ১৯৪৫ সালের ১৪ই আগস্ট, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র জাপানের কুমাগায়া শহরে বোমা বর্ষণ করে। এই ঘটনাটি যুদ্ধের ইতিহাসে একটি বিতর্কিত অধ্যায় হিসেবে চিহ্নিত হয়ে আছে, যেখানে আত্মসমর্পণের কয়েক ঘন্টা আগেও বোমা হামলা চালানো হয়েছিল।
বোমা হামলায় নেপাম বোমা ব্যবহার করা হয়েছিল, যা শহরটির প্রায় ৭৫ শতাংশ ধ্বংস করে দেয়। এতে অন্তত ২৬০ জন নিহত হয় এবং আহত হয় প্রায় ৩,০০০ জন। বোমারু বিমানগুলো শহরটির উপর কয়েক টন জেলিযুক্ত গ্যাসোলিন (নেপাম) নিক্ষেপ করে, যার ফলে ব্যাপক অগ্নিকাণ্ড ঘটে।
কুমাগায়ার বাসিন্দা কাজুমি ইয়োনেদা, যিনি বোমা হামলার দিনটিতেই জন্মগ্রহণ করেছিলেন, সেই ভয়াবহ স্মৃতি আজও বয়ে বেড়াচ্ছেন। তিনি পরবর্তীতে “আমি যেদিন জন্মেছিলাম” নামে একটি কবিতার বই প্রকাশ করেন, যেখানে তিনি সেই দিনের মর্মান্তিক অভিজ্ঞতার কথা তুলে ধরেছেন। তাঁর কবিতায় শহরের ধ্বংসযজ্ঞ এবং মায়ের কোলে আশ্রয় নেওয়া শিশুদের করুণ চিত্র ফুটে উঠেছে।
যুদ্ধ শেষ হওয়ার প্রাক্কালে কেন এই বোমা হামলা চালানো হয়েছিল, তা নিয়ে আজও প্রশ্ন রয়েছে। ঘটনার কয়েক ঘণ্টা পরেই জাপানের সম্রাট হিরোহিতো আত্মসমর্পণের ঘোষণা করেন। অনেকের মতে, এই বোমা হামলা ছিল “অযৌক্তিক” এবং “অর্থহীন”।
বোমা হামলার সময়কার প্রত্যক্ষদর্শী কাজুয়ে হোজো, যিনি তখন সাত বছরের শিশু ছিলেন, সেই রাতের বিভীষিকার কথা বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেন বোমাগুলো বৃষ্টির মতো ঝরে পড়ছিল এবং আগুন এতটাই তীব্র ছিল যে দিন ও রাতের মধ্যে কোনো পার্থক্য ছিল না।
কুমাগায়া শহরের সেকিজোজি বৌদ্ধ মন্দিরে আজও সেই ধ্বংসযজ্ঞের চিহ্ন বিদ্যমান। মন্দিরের প্রধান পুরোহিত তেতসুয়া ওকায়াসু জানান, মন্দিরের একটি কাঠের মূর্তি, কোবোডাইশির মুখ আগুনে ঝলসে গিয়েছিল। তাঁর বাবা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে মূর্তিটি রক্ষা করেছিলেন।
যুদ্ধ শেষ হওয়ার পর, ক্ষতিগ্রস্ত শহরটিতে ধীরে ধীরে স্বাভাবিক জীবন ফিরে আসে। বর্তমানে, কুমাগায়ার জনসংখ্যা প্রায় দুই লাখ। স্থানীয় লাইব্রেরিতে বোমা হামলার স্মৃতিচিহ্ন সংরক্ষণ করা হয়।
কুমাগায়ার এই ঘটনা যুদ্ধের ভয়াবহতা এবং এর ধ্বংসাত্মক প্রভাবের একটি উদাহরণ। এই ঘটনা যুদ্ধের নৈতিকতা এবং বেসামরিক জনগণের উপর এর প্রভাব সম্পর্কে নতুন করে ভাবতে শেখায়।
তথ্য সূত্র: সিএনএন।