মধ্য এশিয়ার সবচেয়ে দীর্ঘ হাইকিং ট্রেইল: প্রস্তুত থাকুন!

কিরগিজস্তান: মধ্য এশিয়ার অনাবিষ্কৃত সৌন্দর্যের পথে, পদব্রজে অভিযান!

পর্যটকদের কাছে এখনো খুব একটা পরিচিত নয় কিরগিজস্তান। কিন্তু প্রকৃতির অপার সৌন্দর্য আর ট্রেকিং-এর সুযোগের কারণে দেশটি খুব দ্রুতই ভ্রমণ প্রেমীদের পছন্দের তালিকায় জায়গা করে নিচ্ছে।

সম্প্রতি চালু হওয়া ‘কিরগিজ নম্যাড ট্রেইল’ (Kyrgyz Nomad Trail) তেমনই একটি আকর্ষণ। মধ্য এশিয়ার বৃহত্তম এই হাইকিং ট্রেইলের অভিজ্ঞতা নিতে পারেন বাংলাদেশের দুঃসাহসী অভিযাত্রীরাও।

এই ট্রেইলটি প্রায় ২,০০০ কিলোমিটার দীর্ঘ, যা উত্তর ও পূর্ব কিরগিজস্তানের বিভিন্ন অঞ্চল দিয়ে গেছে। এটি তৈরি হয়েছে ১৮টি ভিন্ন অংশে, যা পশ্চিম থেকে পূর্বে বিস্তৃত।

জালালাবাদ, নারীনের মতো অঞ্চলের মধ্য দিয়ে যাওয়া এই পথে ট্রেকাররা আলা-কোল লেকের মতো প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের সাক্ষী হতে পারবেন। এছাড়াও, বিশ্বের ষষ্ঠ বৃহত্তম অমেরুদেশীয় হিমবাহ, এংগিলচেক গ্লেসিয়ারের মনোমুগ্ধকর দৃশ্যও উপভোগ করা যাবে।

শুধু প্রাকৃতিক সৌন্দর্যই নয়, এই ট্রেইলে হেঁটে আপনি সেখানকার স্থানীয় সংস্কৃতি এবং জীবনযাত্রার সাথেও পরিচিত হতে পারবেন।

সিল্ক রোড-এর পুরোনো একটি বিশ্রামাগার, তাশ রাবাতে যাওয়া ভ্রমণকারীদের জন্য একটি বিশেষ আকর্ষণ হতে পারে। এখানে আসা পর্যটকদের জন্য স্থানীয় গাইড ও পোর্টার-এর কাজের সুযোগ তৈরি হবে, যা স্থানীয় অর্থনীতিতে ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে।

কিরগিজ নম্যাড ট্রেইলের নির্মাতা ইউভাল ইয়েলিন মনে করেন, এই ট্রেইল পর্যটকদের পরিচিত কিছু পথের বাইরে, কম পরিচিত স্থানগুলোতে ভ্রমণের সুযোগ করে দেবে।

এটি স্থানীয় সম্প্রদায়ের জীবনযাত্রার মান উন্নয়নেও সহায়তা করবে।

ভবিষ্যতে এই ট্রেইলের আরও ১,০০০ কিলোমিটার সম্প্রসারণের পরিকল্পনা রয়েছে। নতুন অংশগুলো চীন সীমান্তের কাছাকাছি নারিন অঞ্চলের দুর্গম এলাকা আরপা ভ্যালি দিয়ে যাবে।

এই অংশে বাতেন এবং ওশ-এর মতো অঞ্চলও যুক্ত হবে, যা তিয়েন শান ও পামির পর্বতমালা হয়ে বিস্তৃত।

তবে, ট্রেকিং-এর আগে নিরাপত্তা সম্পর্কে সচেতন থাকা জরুরি। সীমান্ত সংঘাতের কারণে কিছু ক্ষেত্রে ভ্রমণ ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে।

কিরগিজ কর্তৃপক্ষ ট্রেইলের রুটগুলো এমনভাবে তৈরি করেছে, যাতে ভ্রমণকারীরা নিরাপদ থাকতে পারে। সম্প্রতি কিরগিজস্তান ও তাজিকিস্তানের মধ্যে সীমান্ত চুক্তির ফলে, বাতেন-এর মতো কিছু অঞ্চলে পর্যটকদের ভ্রমণ সহজ হবে।

কিরগিজ নম্যাড ট্রেইলে ভ্রমণের সেরা সময় হলো জুন থেকে সেপ্টেম্বর মাস পর্যন্ত। এই সময়ে আবহাওয়া ট্রেকিং-এর জন্য বেশ উপযুক্ত থাকে।

ভিসা এবং পারমিট সংক্রান্ত কিছু নিয়মাবলীও রয়েছে। ইউরোপীয় ইউনিয়ন, যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র এবং কানাডার নাগরিকরা ভিসা ছাড়াই ৬০ দিন পর্যন্ত এখানে থাকতে পারেন।

অন্যান্য দেশের নাগরিকদের জন্য কিরগিজস্তানের ই-ভিসা ওয়েবসাইটে বিস্তারিত তথ্য পাওয়া যাবে। সীমান্ত এলাকায় ভ্রমণের জন্য অনুমতিপত্র (border permit) প্রয়োজন হতে পারে।

বাংলাদেশের ভ্রমণকারীরা যারা নতুন কিছু অভিজ্ঞতা খুঁজছেন, তাদের জন্য কিরগিজ নম্যাড ট্রেইল একটি অসাধারণ গন্তব্য হতে পারে।

এই ট্রেইলের মাধ্যমে আপনারা কিরগিজস্তানের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করতে পারবেন, স্থানীয় সংস্কৃতি সম্পর্কে জানতে পারবেন এবং একইসাথে একটি দারুণ ট্রেকিং-এর অভিজ্ঞতাও অর্জন করতে পারবেন।

তথ্য সূত্র: ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *