লস অ্যাঞ্জেলেসের নির্যাতনের শিকার শিশুদের কান্না: ৪ বিলিয়ন ডলারেও কি শান্তি?

লস অ্যাঞ্জেলেসে শিশুদের উপর যৌন নির্যাতনের শিকার হওয়াদের জন্য ক্ষতিপূরণ হিসেবে ৪ বিলিয়ন ডলারের (প্রায় ৪৩ হাজার কোটি টাকার বেশি) বিশাল ক্ষতিপূরণ দিতে রাজি হয়েছে কর্তৃপক্ষ। এই ক্ষতিপূরণের ঘোষণা এসেছে এমন এক সময়ে, যখন ভুক্তভোগীরা বলছেন, দশকের পর দশক ধরে চলা এই নির্যাতনের ক্ষত কোনো অর্থ দিয়ে পূরণ করা সম্ভব নয়।

লস অ্যাঞ্জেলেস কাউন্টিতে শিশুদের আশ্রয়কেন্দ্র এবং অন্যান্য তত্ত্বাবধান কেন্দ্রে হওয়া যৌন নির্যাতনের শিকার হওয়া প্রায় ৭ হাজার মানুষের অভিযোগের ভিত্তিতে এই ক্ষতিপূরণের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। জানা গেছে, এই নির্যাতনের কিছু ঘটনা ১৯৫০ এর দশক থেকে শুরু করে ২০০০ সাল পর্যন্ত বিভিন্ন সময়ে ঘটেছে। যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে এ ধরনের ক্ষতিপূরণ এই প্রথম।

ক্ষতিপূরণের এই বিশাল অঙ্ক মূলত লস অ্যাঞ্জেলেসের ‘ম্যাকলারেন চিলড্রেনস সেন্টার’-এর ঘটনাগুলোর সঙ্গে সম্পর্কিত। এক সময়ের এই আশ্রয়কেন্দ্রে শিশুদের দীর্ঘ সময় ধরে রাখা হতো, যেখানে তাদের উপর শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের অভিযোগ ওঠে। ভুক্তভোগীরা জানিয়েছেন, তাদের মাদকদ্রব্য দেওয়া হতো এবং কর্মীদের দ্বারা তারা নিগৃহীত হতেন। এমনকি ঘটনার কথা জানালে তাদের হুমকি দেওয়া হতো।

এই বিষয়ে কথা বলতে গিয়ে, নির্যাতনের শিকার হওয়া ৪৭ বছর বয়সী জিমি ভিজিল বলেন, “এই ক্ষতিপূরণ আমাকে কোনো স্বস্তি দেয় না। আমার মনে হয় না, এতে কোনো কিছুর পরিবর্তন হবে। কিশোর বয়সে আমি যে নির্যাতনের শিকার হয়েছিলাম, তার থেকে মুক্তি পেতে বছরের পর বছর ধরে থেরাপি নিতে হয়েছে।”

লস অ্যাঞ্জেলেস কাউন্টির সুপারভাইজার ক্যাথরিন বার্গার বলেছেন, এই ক্ষতিপূরণ একটি ‘কালো অধ্যায়’। তিনি আরও বলেন, “যারা শিশুদের দেখাশোনার দায়িত্বে ছিলেন, তারাই যদি তাদের সঙ্গে এমন বিশ্বাসঘাতকতা করেন, তবে তা অত্যন্ত দুঃখজনক।” বার্গার আরও যোগ করেন, শিশুদের রক্ষা করার ক্ষেত্রে সরকারি কর্মকর্তাদের ব্যর্থতা এবং দুর্বল নজরদারির বিষয়টি এখানে পরিষ্কার।

ক্ষতিপূরণের পাশাপাশি, কর্তৃপক্ষ শিশুদের সুরক্ষায় কিছু সংস্কারের প্রস্তাব করেছে। এর মধ্যে রয়েছে, শিশুদের উপর যৌন নির্যাতনের অভিযোগ জানানোর জন্য একটি হটলাইন চালু করা এবং দ্রুত তদন্তের ব্যবস্থা করা। এছাড়াও, অভিযুক্ত কর্মীদের তাৎক্ষণিকভাবে বরখাস্ত করারও সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

তবে, ক্ষতিপূরণের এই অর্থ প্রদানের পরেও, ভুক্তভোগীরা তাদের দুঃখ প্রকাশ করেছেন। তারা বলছেন, আসল বিচার তখনই হবে, যখন এই ঘটনার সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের আইনের আওতায় আনা হবে।

এই ক্ষতিপূরণের সিদ্ধান্তের পেছনে রয়েছে ক্যালিফোর্নিয়ার একটি গুরুত্বপূর্ণ আইন পরিবর্তন। ২০২০ সালে, শিশুদের উপর যৌন নির্যাতনের অভিযোগ জানানোর সময়সীমা বাড়ানো হয়। এর ফলে ভুক্তভোগীরা পুরনো ঘটনার জন্য ক্ষতিপূরণের আবেদন করতে পারছেন।

লস অ্যাঞ্জেলেস কাউন্টির কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, এই ক্ষতিপূরণ তাদের বাজেটকে উল্লেখযোগ্যভাবে প্রভাবিত করবে। এই অর্থ পরিশোধ করা হবে রিজার্ভ ফান্ড, বন্ড ইস্যু এবং বিভিন্ন বিভাগের বাজেট কমানোর মাধ্যমে। ২০৩০ সাল পর্যন্ত প্রতি বছর এই ক্ষতিপূরণের জন্য কয়েকশ মিলিয়ন ডলার খরচ হবে। এমনকি ২০৫০ সাল পর্যন্ত এই ক্ষতিপূরণ চালিয়ে যেতে হবে।

তথ্য সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *