জীবন তৈরির স্বপ্ন! বিজ্ঞানীরা কি পারবেন?

নতুন জীবন সৃষ্টির চেষ্টা: বিজ্ঞানীদের এক অবিরাম অনুসন্ধান।

বিজ্ঞানীরা দীর্ঘদিন ধরেই ল্যাবরেটরিতে নতুন জীবন তৈরি করার স্বপ্ন দেখছেন। মানুষের তৈরি জীবন, যা প্রাকৃতিক নিয়মের বাইরে গিয়ে তৈরি হবে, এমন এক ধারণা নিয়ে অনেক দিন ধরেই গবেষণা চলছে।

জার্মানির-আমেরিকার জীববিজ্ঞানী জ্যাকুইস লোয়েব ১৮৯৯ সালে সমুদ্রের কিছু জীবের ডিম্বাণু নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেছিলেন। যদিও তিনি সরাসরি জীবন তৈরি করতে পারেননি, তবে তাঁর কাজ এই ধারণার প্রাথমিক ভিত্তি স্থাপন করে।

বর্তমানে সিনথেটিক বায়োলজি বা কৃত্রিম জীববিদ্যা নামক বিজ্ঞান শাখার মাধ্যমে এই চেষ্টা চলছে। বিজ্ঞানীরা ডিএনএ (DNA) তৈরি করে, প্রোটিন এবং অন্যান্য উপাদান ব্যবহার করে পরীক্ষাগারে নতুন জীবন তৈরির চেষ্টা করছেন।

তবে, এখনো পর্যন্ত বিজ্ঞানীরা জীবিত কোষ তৈরি করতে পারেননি, যা জীবনের মৌলিক একক।

২০১০ সালে, ক্যালিফোর্নিয়ার জে. ক্রেইগ ভেন্টার ইনস্টিটিউটের বিজ্ঞানীরা একটি বিশেষ ব্যাকটেরিয়া তৈরি করেছিলেন, যার ডিএনএ ছিল তাদের তৈরি করা। এটি ছিল জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের একটি চমৎকার উদাহরণ, যেখানে বিদ্যমান একটি জীবের ডিএনএ পরিবর্তন করা হয়েছিল।

তবে, এটিকে সম্পূর্ণরূপে নতুন জীবন সৃষ্টি বলা যায় না। আসল চ্যালেঞ্জ হলো, একেবারে শুরু থেকে, অর্থাৎ, নির্জীব উপাদান থেকে একটি জীবন্ত কোষ তৈরি করা।

এই কাজটি অত্যন্ত কঠিন। বিজ্ঞানীরা এখনো জানেন না, কীভাবে জীবনের শুরু হয়েছিল। প্রাণের উৎপত্তির বিষয়ে বিভিন্ন তত্ত্ব প্রচলিত আছে, যেমন – আদিম সমুদ্রের রাসায়নিক উপাদান থেকে জীবনের উদ্ভব।

১৯৫৩ সালে, শিকাগো বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞানীরা একটি পরীক্ষা করেছিলেন, যেখানে পানির সঙ্গে হাইড্রোজেন, মিথেন ও অ্যামোনিয়ার মিশ্রণ থেকে অ্যামিনো অ্যাসিড তৈরি করা হয়েছিল।

কোষগুলি জটিল উপাদানে গঠিত, যা সহজে তৈরি করা যায় না। প্রতিটি কোষ পূর্ববর্তী কোষ থেকে আসে।

জার্মানির বিজ্ঞানী রুডলফ ভিরচোর এই বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ ধারণা দিয়েছেন। বিজ্ঞানীরা যদি রাসায়নিক উপাদানের মাধ্যমে কোষের বিভিন্ন অংশ তৈরি করতেও পারেন, তবে তাদের একত্রিত করে জীবন তৈরি করা সম্ভব কিনা, তা এখনো একটি বড় প্রশ্ন।

কোষের কিছু অংশ, যেমন – কোষের ঝিল্লির লিপিড অণুগুলি, নিজেরাই একত্রিত হতে পারে। তবে ডিএনএ, প্রোটিন এবং অন্যান্য উপাদানকে সঠিকভাবে সাজিয়ে জীবনের রূপ দেওয়া অত্যন্ত কঠিন।

জীবন কী, সেই বিষয়ে বিজ্ঞানীদের মধ্যে এখনো পর্যন্ত সম্পূর্ণ ঐকমত্য নেই। তাই, যদি সত্যিই ল্যাবরেটরিতে জীবন তৈরি করা যায়, তবে সেটি কেমন হবে, তা নিয়েও বিতর্ক রয়েছে।

কিছু বিজ্ঞানী মনে করেন, কম্পিউটার প্রোগ্রামগুলি, যা নিজেদের প্রতিলিপি তৈরি করতে পারে, তাদেরও জীবনের পর্যায়ে ফেলা যেতে পারে।

গুগলের বিজ্ঞানীরা দেখিয়েছেন, কীভাবে স্ব-প্রতিলিপিকারী কম্পিউটার প্রোগ্রাম তৈরি করা যায়।

তবে, “জীবন” শব্দটির সংজ্ঞা এখনো পরিষ্কার নয়। বিজ্ঞানীরা এখনো জানেন না, তাঁরা যদি সত্যিই নতুন জীবন তৈরি করতে পারেন, তবে সেটি কেমন হবে।

আপাতত, পরীক্ষাগারে জীবন তৈরির স্বপ্ন এখনো অনেক দূরের পথ।

তথ্য সূত্র: The Guardian

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *