স্বপ্নের নায়ক লামিন: রোকাফোন্ডার রাস্তায় ফুটবলের আলো!

বার্সেলোনার তরুণ ফুটবলার লামিনে ইয়ামাল, যিনি একাধারে স্প্যানিশ ক্লাব এবং জাতীয় দলের হয়ে খেলেন, বর্তমানে ফুটবল বিশ্বে এক উজ্জ্বল নক্ষত্র। তাঁর জন্মস্থান স্পেনের একটি দরিদ্র এলাকা, রোকাফন্দা।

এই এলাকার তরুণ প্রজন্মের কাছে ইয়ামাল শুধু একজন খেলোয়াড় নন, বরং এক অনুপ্রেরণার নাম। তাঁর উত্থান যেন এক রূপকথা, যা প্রমাণ করে— ইচ্ছা থাকলে দারিদ্র্যও সাফল্যের পথে বাধা হতে পারে না।

বার্সেলোনার হয়ে খেলার সুবাদে ইয়ামাল এখন বিশ্বজুড়ে পরিচিত। শোনা যাচ্ছে, খুব শীঘ্রই তিনি বার্সেলোনার সঙ্গে নতুন চুক্তি স্বাক্ষর করতে চলেছেন, যা তাঁর উজ্জ্বল ভবিষ্যতের ইঙ্গিত দেয়।

খবর অনুযায়ী, এই চুক্তির মাধ্যমে তাঁর বেতন কয়েকগুণ বাড়তে পারে, যা ১৫ মিলিয়ন ইউরোর বেশি (প্রায় ১৭৫ কোটি টাকার বেশি)।

ইয়ামালের বেড়ে ওঠা কঠিন পরিস্থিতির মধ্যে। বার্সেলোনার কেন্দ্র থেকে প্রায় ৩২ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত মাতেরো শহরের রোকাফন্দা এলাকায় তাঁর শৈশব কাটে।

এই এলাকার প্রায় অর্ধেক মানুষ দারিদ্র্যসীমার নিচে বাস করে। এখানকার বাড়িগুলো পুরনো, আধুনিক সুযোগ-সুবিধা তেমন নেই। ইয়ামালের বেড়ে ওঠার পথটা সহজ ছিল না।

কিন্তু ফুটবল বদলে দিয়েছে অনেক কিছুই। রোকাফন্দার স্থানীয় ফুটবল মাঠের দেওয়ালে লেখা— ‘রোকাফন্দায়, আরও লামিনে ইয়ামাল, এবং উচ্ছেদ কম হোক’।

এলাকার শিশুরা ইয়ামালের মতো ফুটবলার হওয়ার স্বপ্ন দেখে। তাদের চোখেমুখে ইয়ামালের সাফল্যের প্রতিচ্ছবি।

ইয়ামালের বন্ধু, প্রতিবেশী, এবং এলাকার মানুষেরা তাঁর সাফল্যে গর্বিত। তাঁরা বলেন, ইয়ামাল কখনোই তাঁর শিকড় ভোলেননি।

খ্যাতি পাওয়ার পরও তিনি আগের মতোই সাধারণ রয়ে গেছেন। যখনই সুযোগ পান, ফিরে যান নিজের এলাকায়, বন্ধুদের সঙ্গে সময় কাটান।

ছোটবেলায় ইয়ামাল কঠিন পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে গিয়েছেন। তাঁর মা মরক্কো থেকে আসা অভিবাসী পরিবার থেকে এসেছেন, এবং বাবা ইকুয়েডরীয়।

তাঁদের দুজনের জীবন ইয়ামালের সাফল্যের পর অনেক বদলে গেছে। মা এখন সোশ্যাল মিডিয়ায় পরিচিত মুখ, এবং বাবাও কাতালান রাজধানীতে বসবাস করেন।

ইয়ামালের ফুটবল জীবনের শুরুটা হয় স্থানীয় একটি ক্লাবে, সিএফ লা তোর্রেতাতে। সেখানে মাত্র দুই বছর খেলার পরেই তিনি বার্সেলোনার দৃষ্টি আকর্ষণ করেন।

এরপর আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি।

রোকাফন্দা এলাকার মানুষের কাছে ইয়ামাল এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। সেখানকার স্থানীয় বাসিন্দা রসিও এসকানডেল বলেন, “লামিনে রোকাফন্দাকে বিশ্বের দরবারে পরিচিত করেছে।

এখানে আসা অভিবাসীদের মধ্যে, ইয়ামাল যেন নতুন করে স্বপ্ন দেখতে শিখিয়েছে। শুধু ফুটবলার নয়, যে কেউ, যে কোনো কিছুই হতে পারে, যদি সে চেষ্টা করে।”

ইয়ামালের গল্প, দরিদ্রতা থেকে সাফল্যের শিখরে আরোহণের এক দারুণ উদাহরণ। তাঁর উত্থান, এলাকার তরুণ প্রজন্মের জন্য এক নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছে।

ইয়ামাল প্রমাণ করেছেন, কঠোর পরিশ্রম এবং আত্মবিশ্বাসের মাধ্যমে যেকোনো বাধা জয় করা সম্ভব।

তথ্য সূত্র: আল জাজিরা

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *