বিশ্বের বৃহত্তম ক্যামেরা ব্যবহার করে তোলা প্রথম ছবিতে কয়েক মিলিয়ন গ্যালাক্সি এবং কয়েক হাজার গ্রহাণুর সন্ধান পাওয়া গেছে। চিলির আন্দিজ পর্বতমালার উপরে অবস্থিত ভেরা সি. রুবিন মানমন্দির থেকে সম্প্রতি এই ছবিগুলো প্রকাশ করা হয়েছে। এই মানমন্দিরটি মহাবিশ্বের সৃষ্টিরহস্য উন্মোচনে এক নতুন দিগন্তের সূচনা করতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে।
যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল সায়েন্স ফাউন্ডেশন (এনএসএফ) এবং এনার্জি বিভাগের যৌথ অর্থায়নে নির্মিত এই মানমন্দিরটির প্রধান উদ্দেশ্য হলো ‘লেগাসি সার্ভে অফ স্পেস অ্যান্ড টাইম’ পরিচালনা করা। এই প্রকল্পের অধীনে, আগামী ১০ বছর ধরে রাতের আকাশের একটি অতি-উচ্চ রেজোলিউশনের চলচ্চিত্র তৈরি করা হবে। প্রতি কয়েক রাতে পুরো আকাশ পর্যবেক্ষণ করে সংগৃহীত তথ্যের ভিত্তিতে এই চলচ্চিত্র তৈরি করা হবে, যেখানে গ্রহাণু ও ধূমকেতুর গতিবিধি, নক্ষত্রের বিস্ফোরণ এবং দূরের গ্যালাক্সির পরিবর্তনগুলোও স্পষ্টভাবে দেখা যাবে।
মানমন্দিরের ক্যামেরায় ধারণ করা প্রথম ছবিগুলোতে ২,১০০টিরও বেশি গ্রহাণু শনাক্ত করা হয়েছে, যার মধ্যে ৭টি পৃথিবীর কাছাকাছি কক্ষপথে বিদ্যমান। বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, নতুন আবিষ্কৃত কোনো গ্রহাণুই পৃথিবীর জন্য সরাসরি ক্ষতির কারণ হবে না। তবে, এই মানমন্দিরটির সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো এটি প্রতি রাতে হাজার হাজার ছবি তুলবে এবং সেই ছবিগুলোর মাধ্যমে রাতের আকাশে পরিবর্তনগুলো চিহ্নিত করতে পারবে, যা আগে সম্ভব ছিল না। এর ফলে, পৃথিবীর দিকে ধেয়ে আসা কোনো গ্রহাণুকে শনাক্ত করা সহজ হবে, যা ভবিষ্যতে আমাদের গ্রহের জন্য হুমকি হতে পারে।
প্রকাশিত ছবিগুলোর মধ্যে একটি ভিডিওতে দুটি গ্যালাক্সির বিস্তারিত চিত্র দেখা যায়। এছাড়াও, প্রায় এক কোটি গ্যালাক্সির একটি বৃহত্তর দৃশ্যও ক্যামেরাবন্দী করা হয়েছে। বিজ্ঞানীরা মনে করছেন, এই মানমন্দির মহাবিশ্বের গভীরে লুকিয়ে থাকা অনেক অজানা তথ্য যেমন, ডার্ক ম্যাটার (কৃষ্ণ বস্তু) এবং ডার্ক এনার্জি (অদৃশ্য শক্তি) সম্পর্কে ধারণা দিতে সক্ষম হবে।
মানমন্দিরের নামকরণ করা হয়েছে প্রখ্যাত জ্যোতির্বিজ্ঞানী ভেরা সি. রুবিনের নামে। তিনি ডার্ক ম্যাটারের অস্তিত্বের প্রাথমিক প্রমাণ দিয়েছিলেন। এই মানমন্দিরটি মহাকাশ গবেষণায় এক নতুন মাইলফলক স্থাপন করবে এবং এর মাধ্যমে বিজ্ঞানীরা মহাবিশ্বের সৃষ্টিরহস্য সম্পর্কে আরও গভীর জ্ঞান অর্জন করতে পারবেন বলে আশা করা হচ্ছে।
তথ্য সূত্র: সিএনএন