আগ্নেয়গিরি থেকে উৎসারিত লাভা ব্যবহার করে শহর গড়ার এক অভিনব প্রকল্পের কথা ভাবছেন আইসল্যান্ডের স্থপতিরা। তাঁদের লক্ষ্য হলো, কংক্রিটের বিকল্প হিসেবে লাভা ব্যবহার করে পরিবেশ-বান্ধব বাড়ি তৈরি করা।
“লাভাফর্মিং” নামের এই প্রকল্পে ভবিষ্যতে লাভা শীতল করে দেয়ালের কাঠামো তৈরি করা হবে।
সাপ আর্কিটেকটার নামের একটি আইসল্যান্ডীয় স্থাপত্য সংস্থা এই উচ্চাকাঙ্ক্ষী প্রকল্পের পরিকল্পনা করেছে। তারা ভেনিস আর্কিটেকচার biennale-এ (Venice Architecture Biennale) প্রকল্পটি উপস্থাপন করে।
তাঁদের মতে, লাভা থেকে ভবন তৈরি করা গেলে তা কংক্রিটের উপর নির্ভরতা কমাবে এবং কার্বন নিঃসরণও হ্রাস করা যাবে।
সাধারণত, লাভা ঠান্ডা হয়ে ব্যাসল্ট (basalt) নামক কঠিন পাথরে পরিণত হয়। “লাভাফর্মিং”-এর ধারণা হলো, লাভা শীতল করার কৌশল ব্যবহার করে দেয়াল, স্তম্ভ এবং অন্যান্য স্থাপত্য উপাদান তৈরি করা।
এর মাধ্যমে নতুন বসতি স্থাপন করা সম্ভব হবে। সংস্থাটি ২০৫০ সালের একটি ভবিষ্যৎ চিত্র তৈরি করেছে, যেখানে এই ধরনের নির্মাণ প্রযুক্তি বাস্তবে রূপ নেবে এবং বিশ্বকে নতুনভাবে সাজানো হবে।
আর্কিটেক্ট আর্নহিলদুর পামাদোত্তির (Arnhildur Pálmadóttir) মতে, লাভা একটি “পুনর্নবীকরণযোগ্য সম্পদ”, যা টেকসই ভবন তৈরিতে ব্যবহার করা যেতে পারে।
তাঁর মতে, লাভা দ্রুত ঠান্ডা হলে কঠিন, কাঁচের মতো পদার্থে পরিণত হয়, যাকে “অবসিডিয়ান” (obsidian) বলা হয়। ধীরে ধীরে ঠান্ডা হলে এটি স্ফটিক আকার ধারণ করে, যা স্তম্ভ এবং কাঠামোগত উপাদান তৈরিতে সহায়ক হতে পারে।
এছাড়াও, লাভা দ্রুত ঠান্ডা হওয়ার সময় বাতাস প্রবেশ করলে হালকা ও ইনসুলেশন (insulation) সমৃদ্ধ উপাদান তৈরি হয়।
সাপ আর্কিটেকটার লাভা ব্যবহারের তিনটি সম্ভাব্য পদ্ধতির প্রস্তাব করেছে।
- প্রথম পদ্ধতিতে, সক্রিয় আগ্নেয়গিরির কাছে বিশেষভাবে ডিজাইন করা পরিখা তৈরি করা হবে, যেখানে লাভা প্রবাহিত হয়ে শীতল হবে এবং দেয়াল বা শহরের ভিত্তি তৈরি করবে।
- এই পরিখাগুলো লাভাকে এমন একটি কারখানায় পাঠাতে পারে, যেখানে এটি ইট তৈরি করতে ব্যবহার করা হবে।
- দ্বিতীয় পদ্ধতি হলো, থ্রিডি প্রিন্টিং প্রযুক্তির ব্যবহার। এই পদ্ধতিতে, ভবিষ্যতে থ্রিডি প্রিন্টিং রোবট লাভা ক্ষেত্রের উপর দিয়ে চলাচল করে ভবনের উপাদান তৈরি করতে পারবে।
- তৃতীয় পদ্ধতিতে, ভূগর্ভস্থ ম্যাগমা (magma) থেকে লাভা সংগ্রহ করে বিশেষ চেম্বারে শীতল করা হবে, যা নির্মাণ উপাদান তৈরি করতে কাজে লাগবে।
স্থাপত্য সংস্থাটি মনে করে, কংক্রিট তৈরির কারণে নির্গত কার্বন নিঃসরণ কমাতে এই পদ্ধতি সাহায্য করতে পারে।
কারণ কংক্রিট তৈরির সময় সিমেন্ট উৎপাদনের জন্য চুন ও কাদা উচ্চ তাপমাত্রায় উত্তপ্ত করতে হয়, যা পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর।
হিসাব অনুযায়ী, সিমেন্ট তৈরির ফলে বিশ্বে কার্বন ডাই অক্সাইড নির্গমনের প্রায় ৮ শতাংশ হয়, যা বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধি করে।
যদিও “লাভাফর্মিং”-এর ধারণাটি এখনও পরীক্ষামূলক পর্যায়ে রয়েছে এবং প্রযুক্তিগত উন্নয়নের উপর নির্ভরশীল, তবে এটি একটি আকর্ষণীয় প্রস্তাবনা।
এই প্রকল্পের মাধ্যমে স্থপতিরা ভবন নির্মাণে আরও টেকসই পদ্ধতির অনুসন্ধানে উৎসাহিত করছেন।
তথ্য সূত্র: CNN