যুক্তরাষ্ট্রের ১৫টি জনমানবহীন জাতীয় উদ্যান, যা আজও মানুষের কাছে অজানা!

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় উদ্যানগুলোতে পর্যটকদের উপচে পড়া ভিড় লেগেই থাকে। প্রতি বছরই এই সংখ্যা বাড়ছে। ২০২৪ সালে, দেশটির ৪শটির বেশি জাতীয় উদ্যানে প্রায় ৩৩ কোটি ১৯ লক্ষ মানুষ ভ্রমণ করেছেন। এর মধ্যে ৬৩টি প্রধান উদ্যানেই দর্শনার্থীদের আনাগোনা সবচেয়ে বেশি দেখা যায়।

তবে, কিছু কিছু উদ্যান আছে যেখানে পর্যটকদের আনাগোনা তুলনামূলকভাবে অনেক কম থাকে। আজ আমরা এমনই ১৫টি কম জনপ্রিয় জাতীয় উদ্যানের কথা জানবো, যেখানে কোলাহলমুক্ত পরিবেশে প্রকৃতির স্বাদ উপভোগ করা সম্ভব।

এর মধ্যে ৫টি উদ্যান আলাস্কায় অবস্থিত। এই স্থানগুলো হয়তো অনেক দূরের পথ অথবা এখানে আধুনিক সুযোগ-সুবিধা কম, কিন্তু এদের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্যে কোনো কমতি নেই।

১. গেটস অফ দ্য আর্কটিক ন্যাশনাল পার্ক ও রিজার্ভ (আর্কটিক জাতীয় উদ্যান এবং সংরক্ষণ কেন্দ্রের গেটস): আলাস্কা রাজ্যে অবস্থিত এই উদ্যানে বছরে মাত্র ১১,৯0৭ জন পর্যটক ভ্রমণ করেন। এখানে কোনো রাস্তা নেই, নেই কোনো হাঁটার পথ বা সেলুলার নেটওয়ার্কের সুবিধা।

প্রকৃতির মাঝে একান্তে সময় কাটানোর জন্য এটি আদর্শ স্থান। এখানে ৬টি বন্য নদীও রয়েছে। পার্কের ওয়েবসাইটে বলা হয়েছে, “দর্শনার্থীরা ৮.৪ মিলিয়ন একরের বিশাল প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের মাঝে অবাধে ঘুরে বেড়াতে পারেন।” এখানে ভ্রমণের জন্য নিজেকেই সব ব্যবস্থা করতে হয়।

২. নর্থ ক্যাসকেডস ন্যাশনাল পার্ক (নর্থ ক্যাসকেডস জাতীয় উদ্যান): ওয়াশিংটন রাজ্যে অবস্থিত এই উদ্যানে বছরে ১৬,৪85 জন পর্যটকের আগমন ঘটে। এখানকার পর্বতশৃঙ্গগুলোতে ৩০০টির বেশি হিমবাহ দেখা যায়।

এই পার্কটি ওয়াশিংটনের অন্যান্য জাতীয় উদ্যান – মাউন্ট রেইনিয়ার এবং অলিম্পিকের তুলনায় অনেক কম জনবহুল। তবে এর কাছাকাছি অবস্থিত দুটি জাতীয় বিনোদন এলাকা – রস লেক এবং লেক চেলান-এ অনেক বেশি পর্যটকদের আনাগোনা দেখা যায়।

এখানে ১,৬০০টির বেশি প্রজাতির উদ্ভিদ রয়েছে, যা অন্য যেকোনো মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় উদ্যানের চেয়ে বেশি। এখানকার ৪00 মাইলের বেশি পথ ধরে হেঁটে প্রকৃতির সৌন্দর্য উপভোগ করা যায়।

৩. কোবাক ভ্যালি ন্যাশনাল পার্ক (কোবাক উপত্যকা জাতীয় উদ্যান): আলাস্কার এই বিশাল উদ্যানে বছরে ১৭,২৩৩ জন পর্যটকদের দেখা মেলে। এখানে কোনো রাস্তা, ক্যাম্পিং গ্রাউন্ড বা প্রবেশদ্বার নেই।

প্রায় ১৮ লক্ষ একরের এই বিশাল স্থানে প্রতি বছর প্রায় ৫ লক্ষ ক্যারিবু হরিণ কোবাক নদী ও অনিয়ন পোর্টেজ দিয়ে migration করে। এখানে আজও ৮,০০০ বছরের পুরনো ক্যারিবু শিকারের ঐতিহ্য বজায় আছে।

৪. লেক ক্লার্ক ন্যাশনাল পার্ক ও রিজার্ভ (লেক ক্লার্ক জাতীয় উদ্যান ও সংরক্ষণ কেন্দ্র): আলাস্কার এই উদ্যানে বছরে ১৮,৫০৫ জন পর্যটকদের আনাগোনা দেখা যায়। এখানকার ৪০ লক্ষ একরের বেশি জায়গা জুড়ে ৩টি বন্য নদী এবং দুটি ন্যাশনাল ন্যাচারাল ল্যান্ডমার্ক আগ্নেয়গিরি রয়েছে।

এখানে ১০,০০০ বছরের পুরনো মানব ইতিহাসের সাক্ষীস্বরূপ দেনাইনা আদিবাসীদের আবাসস্থলও বিদ্যমান।

৫. ন্যাশনাল পার্ক অফ আমেরিকান সামোয়া (আমেরিকান সামোয়ার জাতীয় উদ্যান): দক্ষিণ প্রশান্ত মহাসাগরের একটিremote অংশে অবস্থিত এই উদ্যানে যেতে হলে পর্যটকদের পাসপোর্ট প্রয়োজন হয়। হাওয়াইয়ান এয়ারলাইন্স সরাসরি হনolulu থেকে এখানে ফ্লাইট পরিচালনা করে।

এই উদ্যানে ১৩,৫০০ একরের বেশি জায়গা জুড়ে তিনটি দ্বীপ রয়েছে, যার মধ্যে প্রায় ৪,০০০ একর সমুদ্র এলাকা, যেখানে প্রচুর প্রবাল প্রাচীর বিদ্যমান। এখানে বছরে ২২,৫৬৭ জন পর্যটক ভ্রমণ করেন।

৬. আইল রয়্যাল ন্যাশনাল পার্ক (আইল রয়্যাল জাতীয় উদ্যান): লেক সুপিরিয়রের একটি বিচ্ছিন্ন দ্বীপপুঞ্জ হলো আইল রয়্যাল। এখানে ১৬৫ মাইল হাঁটার পথ এবং ৩০টির বেশি ক্যাম্পগ্রাউন্ড রয়েছে।

এটি সাধারণত এপ্রিলের মাঝামাঝি থেকে অক্টোবরের শেষ পর্যন্ত খোলা থাকে। এখানে বছরে ২৮,৮০৬ জন পর্যটক ভ্রমণ করেন। লেকের কারণে এখানকার প্রাণীদের মূল ভূখণ্ড থেকে আসতে অন্তত ১৪ মাইল পাড়ি দিতে হয়, তাই এখানে স্তন্যপায়ী প্রাণীর সংখ্যা তুলনামূলকভাবে কম – মাত্র ১৮টি।

এখানে নেকড়ে এবং মুজ হরিণের দেখা মেলে।

৭. কাটমাই ন্যাশনাল পার্ক ও রিজার্ভ (কাটমাই জাতীয় উদ্যান ও সংরক্ষণ কেন্দ্র): আলাস্কার এই পার্কে বাদামী ভালুকের আবাসস্থল রয়েছে। পার্ক কর্তৃপক্ষের মতে, এটি বিশ্বের অন্যতম প্রধান ভালুক-দর্শন কেন্দ্র, যেখানে প্রায় ২,২০০ বাদামী ভালুক বাস করে।

এখানে বছরে ৩৬,২৩০ জন পর্যটক ভ্রমণ করেন। ব্রুকস ক্যাম্প এখানকার অন্যতম জনপ্রিয় স্থান, যেখানে ভালুকেরা স্যামন মাছ শিকার করে।

৮. র‍্যাঙ্গেল-সেন্ট ইলিয়াস ন্যাশনাল পার্ক ও রিজার্ভ (র‍্যাঙ্গেল-সেন্ট ইলিয়াস জাতীয় উদ্যান ও সংরক্ষণ কেন্দ্র): আমেরিকার বৃহত্তম এই জাতীয় উদ্যানটি ১৩.২ মিলিয়ন একর জায়গা জুড়ে বিস্তৃত। ইয়োলোস্টোন ন্যাশনাল পার্ক, ইয়োসেমাইট ন্যাশনাল পার্ক এবং সুইজারল্যান্ড-এর মিলিত আয়তনের সমান এই উদ্যানে বছরে ৮১,৬৭০ জন পর্যটক আসে।

এখানকার বেশিরভাগ স্থান দুর্গম এবং সীমিত সুযোগ-সুবিধা রয়েছে।

৯. ড্রাই টরটুগাস ন্যাশনাল পার্ক (শুকনো কচ্ছপ দ্বীপপুঞ্জ জাতীয় উদ্যান): ফ্লোরিডার Key West থেকে প্রায় ৭০ মাইল পশ্চিমে অবস্থিত এই পার্কে ৭টি ছোট দ্বীপ রয়েছে। এখানে বছরে ৮৪,৮৭৩ জন পর্যটক ভ্রমণ করেন।

গার্ডেন কীতে উনিশ শতকের বৃহত্তম দুর্গ – ফোর্ট জেফারসন অবস্থিত। এখানে নৌকায় বা বিমানে করে যাওয়া যায়। প্রায় ৩০০ প্রজাতির পাখির আবাসস্থল এটি।

১০. গ্রেট বেসিন ন্যাশনাল পার্ক (বৃহৎ বেসিন জাতীয় উদ্যান): নেভাদার এই পার্কে পাহাড় চূড়ার সঙ্গে উষ্ণ মরু উপত্যকার মিলন ঘটেছে। এখানে ১৩,০৬৩ ফুট উঁচু হুইলার পিক, প্রাচীন ব্রিস্টলকোন পাইন গাছ, প্রায় ৪০টি গুহা এবং বিভিন্ন ধরণের উদ্ভিদ ও প্রাণী দেখা যায়।

এখানে বিভিন্ন উচ্চতার হাইকিং ট্রেইল বিদ্যমান। এখানে বছরে ১,৫২,০৬৮ জন পর্যটক আসে।

১১. ভয়েজার্স ন্যাশনাল পার্ক (ভয়েজার্স জাতীয় উদ্যান): “জল, দ্বীপ এবং দিগন্তের” পার্ক হিসেবে পরিচিত ভয়েজার্স প্রায় ২,১৮,০৫৫ একর জায়গা জুড়ে বিস্তৃত, যার মধ্যে ৮৪,০০০ একর জলভাগ। এখানে ৫০০টির বেশি দ্বীপ এবং চারটি বড় হ্রদ রয়েছে, যা নৌকায় ঘুরে উপভোগ করা যায়।

এই উদ্যানটি কানাডার সঙ্গে সীমান্ত ভাগ করে নিয়েছে এবং ভাগ্যবান পর্যটকেরা উত্তর মেরুপ্রভা বা অরোরা বোরিয়ালিস দেখার সুযোগ পান। এখানে বছরে ১,৯৯,০৩০ জন পর্যটকদের আগমন ঘটে।

১২. গুয়াদালুপ পর্বতমালা জাতীয় উদ্যান (গুয়াদালুপ পর্বতমালা জাতীয় উদ্যান): টেক্সাসের চারটি সর্বোচ্চ পর্বতশৃঙ্গ এবং বিশ্বের বৃহত্তম পার্মিয়ান ফসিল রিফ এই পার্কে অবস্থিত। এখানে বছরে ২,২৬,১৩৪ জন পর্যটক ভ্রমণ করেন।

গুয়াদালুপ মাউন্টেনস ওয়াইল্ডারনেসে ৮০ মাইলের বেশি ট্রেইল রয়েছে, যার মধ্যে একটি হলো মরুভূমির মাঝে ১০০ ফুট উঁচু সল্ট বেসিন ডুনসের হাইকিং পথ।

১৩. কংগারী ন্যাশনাল পার্ক (কংগারী জাতীয় উদ্যান): সাউথ ক্যারোলাইনার এই উদ্যানের প্রাকৃতিক দৃশ্য বন্যা এবং অগ্নিকাণ্ডের দ্বারা গঠিত। কংগারী এবং ওয়াটারি নদীগুলোর জল নিয়মিতভাবে পার্কের পুরনো বনভূমিকে প্লাবিত করে।

এখানে ক্যানোইং এবং কায়াকিং-এর মতো জনপ্রিয় কার্যকলাপ উপভোগ করা যায়। এখানে বছরে ২,৪২,০৪৯ জন পর্যটক আসে।

১৪. চ্যানেল আইল্যান্ডস ন্যাশনাল পার্ক (চ্যানেল দ্বীপপুঞ্জ জাতীয় উদ্যান): ক্যালিফোর্নিয়ার পাঁচটি দ্বীপ এবং তার চারপাশের সমুদ্র নিয়ে গঠিত এই পার্কে হাইকিং, স্নরকেলিং, কায়াকিং, পাখি দেখা এবং আরও অনেক কিছু করার সুযোগ রয়েছে।

এখানে বছরে ২,৬২,৫৮১ জন পর্যটক আসে।

১৫. ব্ল্যাক ক্যানিয়ন অফ দ্য গানিসন ন্যাশনাল পার্ক (গানিসন নদীর ব্ল্যাক ক্যানিয়ন জাতীয় উদ্যান): কলোরাডোর এই গিরিখাতটি গানিসন নদী এবং অন্যান্য প্রাকৃতিক শক্তির দ্বারা গঠিত, যা ২ মিলিয়ন বছর ধরে গড়ে উঠেছে।

এর গভীরতা ২,৭২২ ফুট। এখানে প্রায় ৬০ প্রজাতির স্তন্যপায়ী প্রাণী এবং ১৭৪ প্রজাতির পাখি বাস করে। এখানে বছরে ৩,৩৫,৮৬২ জন পর্যটক ভ্রমণ করেন।

সুতরাং, যারা প্রকৃতির মাঝে নিরিবিলি ও শান্ত পরিবেশে সময় কাটাতে চান, তাদের জন্য এই উদ্যানগুলো এক অসাধারণ গন্তব্য হতে পারে। এখানে প্রকৃতির মনোমুগ্ধকর দৃশ্য ও বৈচিত্র্যপূর্ণ অভিজ্ঞতা ভ্রমণকারীদের জন্য অপেক্ষা করে।

তথ্য সূত্র: CNN

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *