লেবাননের ভয়ংকর যুদ্ধ: ৫০ বছর আগের সেই দিনের স্মৃতি!

লেবাননের রক্তাক্ত গৃহযুদ্ধ: একজন আলোকচিত্রীর চোখে দেখা।

আজ থেকে পঞ্চাশ বছর আগে, ১৩ই এপ্রিল, ১৯৭৫। এই দিনে লেবাননে এক ভয়ংকর গৃহযুদ্ধের সূচনা হয়েছিল, যা ১৫ বছর ধরে চলেছিল। সেই যুদ্ধের বিভীষিকাময় দিনগুলোর সাক্ষী ছিলেন ক্লদ সালহানি নামের এক তরুণ ফরাসি-লেবানিজ আলোকচিত্রী।

তিনি যুদ্ধের ভয়াবহতা ক্যামেরাবন্দী করেছিলেন, যা বিশ্বজুড়ে আলোড়ন সৃষ্টি করেছিল।

সালহানির বয়স তখন মাত্র ২৩ বছর। তিনি বৈরুতের ‘আন্নাহার’ পত্রিকার জন্য কাজ করতেন। ভিয়েতনাম যুদ্ধের ছবি তোলার স্বপ্ন দেখতেন তিনি।

কিন্তু যুদ্ধ দেখার জন্য তাকে দেশ ছাড়তে হয়নি। সেদিন, ফালাঞ্জিস্ট মিলিশিয়ারা বৈরুতের আইন আল-রিম্মানেহ্ এলাকায় একটি বাসের ওপর হামলা চালায়।

বাসটিতে ফিলিস্তিনি এবং লেবাননের নাগরিকরা ছিলেন, যারা প্যালেস্টাইন মুক্তি ফ্রন্ট-জেনারেল কমান্ড (পিএফএলপি-জিসি)-এর একটি রাজনৈতিক সমাবেশ থেকে ফিরছিলেন। ফালাঞ্জিস্টরা তাদের নেতা পিয়েরে গেমায়েলের ওপর হওয়া একটি হামলার প্রতিক্রিয়ায় এই কাজটি করে।

গেমায়েল যদিও অল্পের জন্য রক্ষা পান, কিন্তু তার দেহরক্ষীসহ আরও অনেকে নিহত হন। এই ঘটনার পরেই যেন লেবাননের আকাশে যুদ্ধের ঘনঘটা স্পষ্ট হয়ে ওঠে।

পরবর্তী নয় বছরে সালহানি যুদ্ধের বীভৎসতা ক্যামেরাবন্দী করেন। খ্রিস্টান ও ফিলিস্তিনি মিলিশিয়াদের মাঝে চলা ধ্বংসযজ্ঞ, তাদের পেছনে থাকা প্রভাবশালী নেতাদের কার্যকলাপ, এবং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ – এই যুদ্ধের শিকার হওয়া সাধারণ মানুষের ছবি তোলেন তিনি।

ডানপন্থী খ্রিস্টান মিলিশিয়ারা তাকে হুমকি দিয়েছিল, ফিলিস্তিনের একটি দল তাকে অপহরণও করে। ইসরায়েলি গোলার আঘাতে তার গোড়ালি ভেঙে যায়, এমনকি একটি গাড়ি দুর্ঘটনায় তার সামনের দুটি দাঁত পর্যন্ত পড়ে যায়।

সালহানির তোলা ছবিগুলো ‘আন্নাহার’, ফরাসি বার্তা সংস্থা সিগমা, ইউনাইটেড প্রেস ইন্টারন্যাশনাল (ইউপিআই) এবং রয়টার্সের মতো আন্তর্জাতিক সংবাদ সংস্থাগুলোতে প্রকাশিত হয়েছিল।

তার ছবিগুলো টাইম ও নিউজউইকের মতো প্রভাবশালী ম্যাগাজিনের প্রচ্ছদেও স্থান পেয়েছিল। ১৯৮৩ সালে, বৈরুত সেনা ব্যারাকে আত্মঘাতী বোমা হামলায় নিহত হওয়া দুই শতাধিক মার্কিন সেনার ছবি তুলে তিনি পুলিৎজার পুরস্কারের জন্য মনোনীত হয়েছিলেন।

যুদ্ধ সালহানিকে গভীরভাবে আহত করেছিল। ১৯৮৪ সালে তিনি লেবানন ত্যাগ করেন এবং ফিরে আসার কথা ভাবেননি।

কিন্তু ২০০০ সালে তিনি দেশে ফিরে আসেন এবং মৃত্যুর আগ পর্যন্ত মাঝে মাঝে সেখানে যেতেন। প্যারিসে ২০২০ সালে ৭০ বছর বয়সে তার মৃত্যু হয়। জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত তিনি লেবাননে ফিরে যাওয়ার কথা বলতেন।

লেবাননের গৃহযুদ্ধ মধ্যপ্রাচ্যের ইতিহাসে একটি কালো অধ্যায়। এই যুদ্ধ শুধু লেবাননের নাগরিকদের জীবনকেই ধ্বংস করেনি, বরং পুরো অঞ্চলের রাজনৈতিক পরিস্থিতিকেও প্রভাবিত করেছে।

ক্লদ সালহানির মতো সাহসী আলোকচিত্রীরা তাঁদের ক্যামেরার মাধ্যমে যুদ্ধের ভয়াবহ চিত্র বিশ্ববাসীর সামনে তুলে ধরেছিলেন। তাদের কাজের কারণেই যুদ্ধ এবং এর ফলস্বরূপ মানুষের দুর্ভোগ সম্পর্কে আমরা জানতে পারি।

তথ্য সূত্র: আল জাজিরা

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *