লেবাননের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নতুন প্রধান, সন্দেহের ছায়া!

লেবাননের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নতুন গভর্নর হিসেবে করিম সুয়াইদের নিয়োগ ঘিরে বিতর্ক

বৈরুত, লেবানন – লেবাননের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নতুন গভর্নর হিসেবে করিম সুয়াইদকে নির্বাচিত করা হয়েছে। দেশটির মন্ত্রীপরিষদ এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

তবে এই নিয়োগকে কেন্দ্র করে শুরু হয়েছে তীব্র বিতর্ক। একদিকে যেমন ব্যাংকগুলোর সমর্থন রয়েছে সুয়াইদের প্রতি, তেমনই অনেকে মনে করছেন, তিনি লেবাননের বর্তমান অর্থনৈতিক দুর্দশার প্রতীক।

লেবানন বর্তমানে ভয়াবহ এক অর্থনৈতিক সংকটের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। দেশটির অবকাঠামো পুনর্গঠন ও পুনরুদ্ধারের জন্য জরুরি ভিত্তিতে অর্থের প্রয়োজন।

বিশ্বব্যাংকের হিসাব অনুযায়ী, এই মুহূর্তে প্রায় ১১ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের প্রয়োজন। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) থেকে ঋণ পাওয়ার ক্ষেত্রেও নতুন গভর্নরের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

কারণ, আইএমএফের শর্ত পূরণ হলে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছ থেকে আরও বেশি সহায়তা পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

সুয়াইদ একজন বিনিয়োগকারী এবং বাহরাইন-ভিত্তিক একটি প্রাইভেট ইনভেস্টমেন্ট ফার্ম ‘গ্রোথগেট পার্টনার্স’-এর প্রতিষ্ঠাতা। খবর অনুযায়ী, আইএমএফ সরাসরি কোনো প্রার্থীর বিষয়ে মন্তব্য না করলেও, সুয়াইদের প্রস্তাবিত নীতি সংস্কারের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ নয়।

সুয়াইদের মনোনয়নকে কেন্দ্র করে লেবাননে দুটি প্রধান পক্ষ তৈরি হয়েছে। একদিকে রয়েছে ব্যাংক, প্রভাবশালী রাজনৈতিক দল, এবং প্রেসিডেন্ট মিশেল আউনের সমর্থক গোষ্ঠী।

অন্যদিকে রয়েছেন সংস্কারপন্থী মন্ত্রী, স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য এবং সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা। প্রধানমন্ত্রী নাজিব মিকাতির ছেলে মাহেরও সুয়াইদের বিনিয়োগ সংস্থার পরিচালনা পর্ষদের সদস্য।

নিয়োগের পর প্রধানমন্ত্রী নাওয়াফ সালাম এক বিবৃতিতে জানান, তিনি এবং অন্য মন্ত্রীদের এই নিয়োগ নিয়ে কিছু বিষয়ে আপত্তি রয়েছে। তিনি বলেন, নতুন গভর্নরকে অবশ্যই সংস্কারপন্থী সরকারের আর্থিক নীতি মেনে চলতে হবে।

এর মধ্যে আইএমএফের সঙ্গে নতুন কর্মসূচি গ্রহণ, ব্যাংকগুলোর পুনর্গঠন এবং আমানতকারীদের অধিকার রক্ষার জন্য আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুযায়ী একটি পরিকল্পনা তৈরি করা অন্যতম।

সুয়াইদ এখনো তার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা সম্পর্কে কোনো মন্তব্য করেননি। তবে তার বিরোধীরা বলছেন, তিনি ক্ষমতাধরদের খুব কাছাকাছি এবং তার নীতিগুলো মূলত ব্যাংকগুলোর স্বার্থ রক্ষা করে।

লেবাননের অর্থনীতিবিদ এবং বিশ্লেষকরা বলছেন, সুয়াইদের এই নিয়োগ দেশটির জন্য একটি খারাপ দৃষ্টান্ত। কারণ এর মাধ্যমে মূলত ব্যাংকের প্রভাবশালী ব্যক্তি এবং তাদের সঙ্গে জড়িত রাজনীতিবিদরাই লাভবান হবেন।

প্রসঙ্গত, লেবানন বর্তমানে ভয়াবহ অর্থনৈতিক সংকটের ষষ্ঠ বছরে প্রবেশ করেছে। দেশটির অর্থনীতিকে টিকিয়ে রাখতে আইএমএফের কাছ থেকে জরুরি ভিত্তিতে ত্রাণ প্রয়োজন।

আইএমএফ এরই মধ্যে ঋণ পাওয়ার জন্য কিছু সংস্কারের শর্ত দিয়েছে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, লেবাননের এই সংকটকালে যারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন, তাদের মধ্যে আমানতকারীরাও রয়েছেন। অনেকে তাদের সঞ্চয় হারিয়েছেন, আবার অনেকে তাদের অর্থ তোলার জন্য চরম দুর্ভোগ পোহাতে বাধ্য হয়েছেন।

আর্থিক সংকটের কারণে দেশটির মুদ্রা লিরা’র ব্যাপক অবমূল্যায়ন হয়েছে। একসময় যেখানে ১ মার্কিন ডলারের বিনিময় মূল্য ছিল ১,৫০০ লিরা, সেখানে বর্তমানে তা দাঁড়িয়েছে প্রায় ৮৯,০০০ লিরায়।

লেবাননের বর্তমান পরিস্থিতি বিবেচনা করে বিশ্লেষকরা মনে করছেন, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নতুন গভর্নর নির্বাচনের ক্ষেত্রে স্বচ্ছতা এবং জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা জরুরি।

তথ্য সূত্র: আল জাজিরা

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *