ছবি: ক্রুশবিদ্ধ যীশুর বেদনা, লেবাননের গ্রামে ইস্টার উদযাপন!

লেবাননের একটি গ্রামে গুড ফ্রাইডের ঐতিহ্য: যিশুর ক্রুশবিদ্ধ হওয়ার দৃশ্য।

মধ্যপ্রাচ্যের দেশ লেবাননের একটি ছোট্ট গ্রাম কুরেয়েতে (Quraye) প্রতি বছর গুড ফ্রাইডেতে (Good Friday) এক বিশেষ দৃশ্যের অবতারণা হয়। এখানকার খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের মানুষজন এই দিনে যিশু খ্রিস্টের ক্রুশবিদ্ধ হওয়ার ঘটনাটি পুনরায় মঞ্চস্থ করেন।

এটি শুধু একটি ধর্মীয় অনুষ্ঠান নয়, বরং স্থানীয় সংস্কৃতি এবং ঐতিহ্যের অবিচ্ছেদ্য অংশ।

এবছর, এপ্রিল মাসের ১৮ তারিখে, এই দৃশ্যটি পুনরায় অভিনীত হয়। যিশুর ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছিলেন ৩৭ বছর বয়সী চারবেল জোসেফ আন্তন।

কাঁটামুকুট পরিহিত অবস্থায়, তিনি কাঠের ক্রুশ কাঁধে নিয়ে গ্রামের পথে হেঁটে যান। রোমান সৈন্যদের দ্বারা প্রহারিত হওয়ার দৃশ্যও ফুটিয়ে তোলা হয়, যা দর্শকদের মনে গভীর রেখাপাত করে।

অনেকে চোখের জলে সেই শোকের দৃশ্যের সাক্ষী হন।

এই ঘটনার প্রেক্ষাপট তৈরি হয়েছে এমন এক সময়ে, যখন লেবানন দীর্ঘদিন ধরে নানা ধরনের সংকটের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে।

অর্থনৈতিক দুরবস্থা, রাজনৈতিক অস্থিরতা এবং প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে চলমান সংঘাত দেশটির মানুষের জীবনকে কঠিন করে তুলেছে।

ইসরায়েল ও হিজবুল্লাহর মধ্যে মাঝে মাঝে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে, যা এখানকার মানুষের মধ্যে সব সময় একটা ভয়ের আবহ তৈরি করে রাখে। এমন পরিস্থিতিতে, এই ধরনের ধর্মীয় অনুষ্ঠানগুলো যেন এক টুকরো শান্তির বার্তা নিয়ে আসে।

কুরেয়ের মারোনাইট চার্চের ফাদার টনি চালহুব মনে করেন, এই ধরনের আয়োজন মানুষের মধ্যে আশা জাগায়।

তিনি বলেন, “এই উৎসবগুলোতে মানুষ তাদের দুঃখ-কষ্ট প্রকাশ করে। তারা চেষ্টা করে তাদের জীবনটাকে উপভোগ করতে।”

এই অনুষ্ঠানে শুধু যে শোক প্রকাশ করা হয়, তা নয়, বরং যিশুর ত্যাগের মাধ্যমে তারা জীবনের নতুন অর্থ খুঁজে পায়।

ফাদার চালহুব আরও যোগ করেন, “কষ্টকে ঈশ্বরের শক্তিতে জয় করে আনন্দের দিকে যাওয়া উচিত।”

ঐতিহ্যবাহী এই অনুষ্ঠানে অংশ নিতে আসা মিশেল বাদ্র বলেন, “এই ধরনের অনুষ্ঠান মানুষকে যিশুর দুঃখ-কষ্ট সম্পর্কে জানতে সাহায্য করে। এর মাধ্যমে তারা বুঝতে পারে, কীভাবে যিশু আমাদের নতুন জীবন দিয়েছেন।”

গুড ফ্রাইডের এই দৃশ্য শুধু একটি ঘটনার পুনরাবৃত্তি নয়, বরং এটি ত্যাগ, ক্ষমা এবং ভালোবাসার এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত।

লেবাননের এই গ্রামে, কঠিন পরিস্থিতির মধ্যেও, এই ধরনের আয়োজন সেখানকার মানুষের মধ্যে গভীর একতা ও ভালোবাসার জন্ম দেয়।

তথ্য সূত্র: অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *