লেবাননে ভোটের লড়াই: হিজবুল্লাহর সমর্থনে জনগণের রায়?

লেবাননের দক্ষিণাঞ্চলে সম্প্রতি অনুষ্ঠিত হওয়া স্থানীয় সরকার নির্বাচনে শিয়া মুসলিম অধ্যুষিত এলাকার ভোটারদের ব্যাপক অংশগ্রহণে হিজবুল্লাহর প্রতি সমর্থন পরীক্ষার বিষয়টি সামনে এসেছে। এই নির্বাচনকে কেন্দ্র করে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, ইসরায়েলের সঙ্গে যুদ্ধবিরতির পরেও হিজবুল্লাহ তাদের রাজনৈতিক প্রভাব ধরে রাখতে চাইছে।

খবর অনুযায়ী, নির্বাচনে হিজবুল্লাহ এবং তাদের মিত্র দল আমাল-এর জয়লাভের সম্ভাবনা সবচেয়ে বেশি।

স্থানীয় সরকার নির্বাচন লেবাননের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে বেশ গুরুত্বপূর্ণ। এই নির্বাচনগুলো মূলত শিয়া অধ্যুষিত এলাকাগুলোতে অনুষ্ঠিত হয়েছে, যেখানে হিজবুল্লাহ এবং পার্লামেন্ট স্পিকার নাবিহ বেরির নেতৃত্বে থাকা আমাল দলের প্রভাব রয়েছে।

গত নভেম্বরে ইসরায়েলের সঙ্গে যুদ্ধবিরতি ঘোষণার পর এই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলো। যদিও যুদ্ধবিরতি কার্যকর রয়েছে, কিন্তু মাঝে মাঝে ইসরায়েল বিমান হামলা চালিয়েছে, যা সেখানকার পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলেছে।

নির্বাচনে ভোটারদের উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মতো। বিশেষ করে সীমান্ত এলাকার গ্রামগুলোতে, যেখানে গত বছরের সংঘাতে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে, সেখানকার বাসিন্দারা ভোট দিতে আসেন।

ইসরায়েলি হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত কাফার কিলা গ্রামের মানুষজন নিকটবর্তী নাবাতিয়া শহরে ভোট দিয়েছেন। লেবাননের প্রেসিডেন্ট মিশেল আউনও সম্প্রতি এলাকাটি পরিদর্শন করেন এবং তাঁর নিজের শহর আয়েচিতে ৪০ বছর পর প্রথম ভোট দেন।

হিজবুল্লাহর সংসদ সদস্য আলি ফায়াদ নাবাতিয়াতে বলেন, “স্থানীয়রা আবারও প্রমাণ করেছে যে তারা প্রতিরোধের পক্ষে।” নির্বাচনের ফলাফলের মাধ্যমে হিজবুল্লাহ এই অঞ্চলে তাদের রাজনৈতিক ক্ষমতা প্রদর্শনের সুযোগ খুঁজছে।

বিশ্লেষকদের মতে, সামরিক দিক থেকে দুর্বল হয়ে পড়লেও, রাজনৈতিক প্রভাব ধরে রাখতে এই নির্বাচন হিজবুল্লাহর জন্য গুরুত্বপূর্ণ।

তবে, যুদ্ধের কারণে অনেক মানুষ হিজবুল্লাহর উপর আস্থা হারিয়েছেন। তাঁদের মধ্যে এক ধরনের ভীতি কাজ করছে, যা ইসরায়েলের আক্রমণের পাশাপাশি দেশের রাজনৈতিক বিভাজন থেকেও সৃষ্ট হয়েছে।

একইসাথে, লেবাননের নতুন সরকার অস্ত্র ব্যবসার উপর একচেটিয়া নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করতে চাইছে, যা হিজবুল্লাহর নিরস্ত্রীকরণে চাপ সৃষ্টি করতে পারে।

যুদ্ধবিধ্বস্ত লেবাননের পুনর্গঠন একটি বিশাল চ্যালেঞ্জ। বিশ্ব ব্যাংকের হিসাব অনুযায়ী, দেশটির পুনর্গঠনের জন্য ১১ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের বেশি প্রয়োজন।

বাংলাদেশি মুদ্রায় যা প্রায় ১ লাখ ২০ হাজার কোটি টাকার সমান। উল্লেখ্য, ২০২৩ সালের অক্টোবরে গাজায় ফিলিস্তিনিদের সমর্থনে হিজবুল্লাহ ইসরায়েলের উপর রকেট হামলা চালায়, যার ফলশ্রুতিতে ইসরায়েলও লেবাননে বোমা বর্ষণ শুরু করে এবং পরবর্তীতে যুদ্ধ শুরু হয়।

তথ্য সূত্র: আল জাজিরা

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *