আলোচনা: ‘লেট দেম’ তত্ত্ব কী? যা জীবন বদলে দিচ্ছে!

জীবনকে সহজ করার এক নতুন কৌশল: ‘লেট দেম’ তত্ত্ব!

আজকাল সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একটি নতুন শব্দবন্ধ প্রায়ই শোনা যাচ্ছে— ‘লেট দেম’ তত্ত্ব। আত্ম-উন্নয়ন বিষয়ক পরামর্শদাতা মেল রবিন্স-এর এই ধারণাটি এখন ইন্টারনেট দুনিয়ায় বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে।

তাহলে, এই ‘লেট দেম’ তত্ত্ব আসলে কী? কিভাবেই বা এটি আমাদের জীবনে পরিবর্তন আনতে পারে?

আসলে, ‘লেট দেম’ তত্ত্ব হলো আমাদের জীবনের কিছু বিষয়, যা আমরা সবসময় নিজেদের নিয়ন্ত্রণে রাখতে চাই, সেগুলোর নিয়ন্ত্রণ ছেড়ে দেওয়ার একটি উপায়। মেল রবিন্স-এর মতে, এই তত্ত্বের মূল কথা হলো, অন্যদের যা করতে ইচ্ছে করে, তাদের তা করতে দেওয়া।

এর মাধ্যমে আমরা নিজেদের মানসিক শান্তি বজায় রাখতে পারি এবং অন্যদের সঙ্গে আমাদের সম্পর্কও উন্নত হয়। রবিন্স-এর মতে, এই তত্ত্বের দ্বিতীয় অংশটি— ‘লেট মি’—আরো গুরুত্বপূর্ণ।

এর মাধ্যমে আমরা নিজেদেরকে স্মরণ করিয়ে দিই যে, আমাদের চিন্তা ও কর্মের ওপর ক্ষমতা আমাদেরই।

এই তত্ত্বের ধারণা কিভাবে এলো? জানা যায়, একবার ছেলের স্কুলের প্রি-প্রম পার্টিতে গিয়ে মেল রবিন্স বেশ উদ্বিগ্ন হয়ে পরেছিলেন। ছেলে-মেয়েদের পোশাক থেকে শুরু করে রাতের খাবারের মেন্যু—সবকিছু নিয়েই তিনি চিন্তা করছিলেন।

তখনই তার মেয়ে তাকে বলেছিলেন, “মা, তুমি বিরক্ত করছো। তারা যদি ট্যাকো খেতে চায়, তাদের খেতে দাও। বৃষ্টিতে ভিজতে চাইলে, ভিজুক… এটা তাদের প্রম, তোমার নয়, তাদের করতে দাও।”

মেয়ের এই কথাগুলো যেন রবিন্সের কানে নতুন দিগন্ত উন্মোচন করে দেয়। এরপর থেকে তিনি এই ‘লেট দেম’ তত্ত্বটি তার দৈনন্দিন জীবনে প্রয়োগ করতে শুরু করেন।

এক সপ্তাহ পরেই তিনি অনুভব করেন, আগে তিনি যা অনুভব করেননি, তেমন এক গভীর শান্তি এখন তার মধ্যে বিরাজ করছে।

কিন্তু কিভাবে এই তত্ত্বটি কাজে লাগাতে হয়? প্রথমত, আমাদের বিমুক্ত হতে হবে। অন্যেরা কী করছে, বা সবকিছু কেমন হওয়া উচিত—এসব চিন্তা থেকে নিজেকে দূরে রাখতে হবে।

যেমন, যদি কোনো বিমান সংস্থা বিমানের পেছনের দিক থেকে যাত্রী তোলার সিদ্ধান্ত নেয়, তবে তাতে মন খারাপ করার কিছু নেই।

দ্বিতীয়ত, অন্যদের ব্যর্থ হওয়ার সুযোগ দিতে হবে। তাদের বেড়ে ওঠার, শেখার এবং নিজেদের দায়িত্ব নেওয়ার সুযোগ দেওয়া উচিত।

যেমন, কোনো শিক্ষার্থীর সময় মতো পরীক্ষার ফরম পূরণ করতে ভুলে গেলে, তাকে তার ভুলের ফল ভোগ করতে দিতে হবে।

তৃতীয়ত, অন্যদেরকে তাদের মতো করে বাঁচতে দিতে হবে। তাদের ভালো লাগা বা অপছন্দকে সম্মান করতে হবে।

তবে, সব পরিস্থিতিতে এই তত্ত্ব প্রযোজ্য নয়। রবিন্স কিছু বিশেষ ক্ষেত্রে এই তত্ত্ব ব্যবহার করতে নিষেধ করেছেন।

যেমন, কেউ যদি কোনো বিপজ্জনক কাজ করতে চায়, বা আপনার প্রতি বৈষম্যমূলক আচরণ করে, তবে তাকে বাধা দিতে হবে।

এছাড়াও, নিজের অধিকার আদায়ের ক্ষেত্রে বা কোনো দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে এই তত্ত্ব অনুসরণ করা উচিত নয়।

সোশ্যাল মিডিয়াতে এই তত্ত্ব নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা যায়। অনেকেই এই তত্ত্বের মাধ্যমে তাদের জীবনে ইতিবাচক পরিবর্তন এনেছেন বলে জানিয়েছেন।

আবার কেউ কেউ একে যোগাযোগের অভাব এবং এক ধরনের বিষাক্ততা হিসেবেও চিহ্নিত করেছেন। তাদের মতে, সবসময় সবকিছু ছেড়ে দেওয়া সম্ভব নয়, বরং সমস্যা সমাধানে অন্যদের সঙ্গে আলোচনা করা প্রয়োজন।

‘লেট দেম’ তত্ত্ব নিঃসন্দেহে জীবনকে সহজ করার একটি উপায় হতে পারে।

তবে, এর প্রয়োগের ক্ষেত্রে আমাদের সচেতন থাকতে হবে। জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে এই তত্ত্ব অনুসরণ না করে, পরিস্থিতি অনুযায়ী সিদ্ধান্ত নিতে হবে।

তথ্য সূত্র: পিপল

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *