চিঠি লেখার উন্মাদনা: ১৫,০০০ মানুষের গোপন ভালোবাসার গল্প!

বর্তমান ডিজিটাল যুগে, যখন মুহূর্তের মধ্যে বার্তা আদান-প্রদান সম্ভব, তখনও হাতে লেখা চিঠির আবেদন যেন একটুও কমেনি। বরং, ব্যস্ত এই জীবনে মানুষ খুঁজে ফিরছে সম্পর্কের গভীরতা, যা হয়তো কাগজের পাতায় কলমের আঁচড়ের মাধ্যমেই পাওয়া সম্ভব।

সম্প্রতি, সারা বিশ্বে হাতে চিঠি লেখার প্রবণতা বাড়ছে, যেখানে পুরনো দিনের মানুষের মতো, অনেকে আবার ফিরে যাচ্ছেন চিঠির সংস্কৃতিতে।

এই পরিবর্তনের পেছনে অন্যতম কারণ হলেন লেখক র‍্যাচেল সাইম। তাঁর ‘পেনপালোজা’ (Penpalooza) নামক একটি উদ্যোগের মাধ্যমে, হাজার হাজার মানুষ চিঠির মাধ্যমে নতুন বন্ধু খুঁজে পেয়েছেন। শুধু তাই নয়, সাইমের লেখা ‘সাইম’স লেটার রাইটার: এ গাইড টু মডার্ন করেসপন্ডেন্স’ (Syme’s Letter Writer: A Guide to Modern Correspondence) বইটি এই বিষয়ে আগ্রহীদের জন্য এক দারুণ দিশা দেখাচ্ছে।

বইটিতে চিঠি লেখার নানান কৌশল এবং প্রয়োজনীয় টিপস দেওয়া হয়েছে।

কোভিড-১৯ অতিমারীর সময় যখন মানুষ ঘরবন্দী ছিল, তখন র‍্যাচেল সাইম তাঁর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে চিঠি লেখার জন্য বন্ধু চেয়ে একটি পোস্ট করেন। কয়েক দিনের মধ্যেই কয়েকশ’ মানুষের সাড়া পাওয়া যায়।

এরপর তিনি এলফস্টার (Elfster) নামক একটি ওয়েবসাইটের মাধ্যমে এই আগ্রহীদের মধ্যে পারস্পরিক যোগাযোগের ব্যবস্থা করেন। এইভাবেই জন্ম হয় ‘পেনপালোজা’-র।

এই প্রকল্পে ১৫,০০০ এর বেশি মানুষ অংশ নিয়েছিলেন। সাইম জানিয়েছেন, সেই সময় তিনি প্রতিদিন ১০ থেকে ১৫টি চিঠি পেতেন, যা তাঁকে রীতিমতো উৎসাহিত করত।

চিঠি লেখার মাধ্যমে মানুষ শুধু যে মনের ভাব প্রকাশ করে, তা নয়, বরং এর মাধ্যমে একটি গভীর সম্পর্ক তৈরি হয়। চিঠিতে নিজের চিন্তা, অনুভূতিগুলো লিখে জানানোর এক অবারিত সুযোগ থাকে।

ডিজিটাল মাধ্যমের দ্রুততার যুগে, চিঠিপত্র লেখার এই ধীর প্রক্রিয়া সম্পর্কের গভীরতা বাড়ায়।

বিখ্যাত লেখক যেমন—জুলিয়া চাইল্ড, জেমস জয়েস এবং জেন অস্টেন—তাঁদের চিঠির মাধ্যমে ভালোবাসার গভীরতা প্রকাশ করেছেন। জুলিয়া চাইল্ড তাঁর বন্ধু অ্যাভিস ডিভোতোকে লেখা চিঠিতে জীবনের নানা দিক নিয়ে আলোচনা করতেন।

জেমস জয়েস তাঁর স্ত্রী নোরা বার্নাকলকে ভালোবাসাপূর্ণ চিঠি লিখতেন, যেখানে তাঁর গভীর অনুভূতির প্রকাশ ঘটত।

জেন অস্টেন তাঁর বোনকে লেখা চিঠিতে সাহিত্য এবং ব্যক্তিগত জীবনের কথা লিখতেন।

চিঠি লেখার এই সংস্কৃতি বর্তমানে বিভিন্ন দেশে জনপ্রিয় হচ্ছে।

অনেক সংগঠন এখন পেন-পাল খুঁজে পেতে সহায়তা করে, যেখানে মানুষজন নিজেদের মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নতির জন্য চিঠি লিখতে পারে। ‘লেট্টার্স টু স্ট্রেঞ্জার্স’ (Letters to Strangers) এবং ‘দ্য ওয়ার্ল্ড নিডস মোর লাভ লেটার্স’ (The World Needs More Love Letters) এর মতো সংস্থাগুলি এই ধরনের কার্যক্রম পরিচালনা করে।

এছাড়া, বন্দীদের সঙ্গে সংযোগ স্থাপনের জন্য কিছু বিশেষ প্রকল্পও রয়েছে।

চিঠি লেখার শুরুটা কঠিন হতে পারে, কিন্তু সাইমের মতে, প্রতিটি চিঠিই এক ধরণের সারপ্রাইজ, যা প্রাপকের মনকে আনন্দ দেয়।

তাই, যারা এই বিষয়ে আগ্রহী, তাঁরা বন্ধু ও পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে চিঠি লেখা শুরু করতে পারেন। ধীরে ধীরে, এটি একটি সুন্দর অভ্যাসে পরিণত হতে পারে, যা সম্পর্কের গভীরতা বাড়াতে সাহায্য করবে।

তথ্য সূত্র: The Guardian

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *