ঐতিহাসিক মুহূর্ত: এলজিবিটি সম্প্রদায়ের প্রতি উৎসর্গীকৃত যুক্তরাষ্ট্রের পার্ক ও স্মৃতিস্তম্ভ

যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় উদ্যানগুলি (National Park) কেবল প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের স্থান নয়, বরং এগুলো আমেরিকার ইতিহাসের গুরুত্বপূর্ণ অংশ। এই উদ্যানগুলিতে এলজিবিটিকিউ+ (LGBTQ+) সম্প্রদায়ের মানুষজনদের অবদান ও ঐতিহ্যের প্রতি সম্মান জানানো হয়।

২০১৬ সাল থেকে ন্যাশনাল পার্ক সার্ভিস (NPS) এই স্বীকৃতি দেওয়া শুরু করে। এই উদ্যোগের মাধ্যমে, এলজিবিটিকিউ+ সম্প্রদায়ের মানুষের সাহস, আত্মত্যাগ এবং সংগ্রামের গল্পগুলি জনসাধারণের কাছে তুলে ধরা হয়।

আসুন, তেমনই কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ স্থান সম্পর্কে জানা যাক।

প্রথমেই আসে নিউইয়র্ক সিটির ‘স্টোনওয়াল ন্যাশনাল মনুমেন্ট’-এর কথা। ১৯৬৯ সালের গ্রীষ্মকালে, গ্রিনউইচ ভিলেজের স্টোনওয়াল ইন-এ পুলিশের অভিযানের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাতে একত্রিত হয়েছিলেন এলজিবিটিকিউ+ সম্প্রদায়ের মানুষজন।

এই বিদ্রোহ আধুনিক কুইয়ার আন্দোলনের জন্ম দেয় এবং মারশা পি. জনসন ও সিলভিয়া রিভারার মতো ব্যক্তিত্বদের জন্ম দেয়। ২০১৬ সালে, স্টোনওয়াল ন্যাশনাল মনুমেন্ট এই আন্দোলনের স্মৃতিস্বরূপ প্রতিষ্ঠিত হয়।

এখানে স্টোনওয়াল ইন ছাড়াও ক্রিস্টোফার পার্ক এবং আশেপাশের রাস্তাগুলিও অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। এই মনুমেন্ট এলজিবিটিকিউ+ অধিকার এবং ইতিহাসের প্রতি উৎসর্গীকৃত।

মিসিসিপির ‘ভিকসবার্গ ন্যাশনাল মিলিটারি পার্ক’ -এ ১৮৬৩ সালের ভিকসবার্গের অবরোধের স্মৃতিচিহ্ন রয়েছে। এই স্থানে আমেরিকার গৃহযুদ্ধে অংশ নেওয়া সৈনিকদের স্মরণ করা হয়।

এই যুদ্ধের একজন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি ছিলেন আলবার্ট ক্যাশিয়ার। তিনি ছিলেন একজন রূপান্তরকামী সৈনিক, যিনি যুদ্ধের সময় পুরুষ হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। যুদ্ধের পর তিনি ইলিনয়ে ফিরে আসেন এবং সেখানেই বসবাস করতে থাকেন।

তাঁর এই ঐতিহাসিক অবদানকে সম্মান জানাতে এই পার্কে একটি স্মৃতিস্তম্ভ স্থাপন করা হয়েছে।

ওয়াশিংটন ডিসির ‘প্রেসিডেন্টস পার্ক’ -এ হোয়াইট হাউসের অবস্থান, যা আমেরিকার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ স্থান। তবে এই পার্কটি এলজিবিটিকিউ+ সম্প্রদায়ের ইতিহাসের সঙ্গেও জড়িত।

উনিশ শতকের শেষ দিকে, এখানকার ‘লাফায়েত স্কয়ার’-এ গোপন জীবনযাপন করা সমকামীদের একটি মিলনস্থল ছিল। পরবর্তীতে, এটি গে অধিকার আদায়ের প্রথম সারির প্রতিবাদস্থল হিসেবেও পরিচিতি লাভ করে।

ক্যালিফোর্নিয়ার ‘রসি দ্য রিভেটার ওয়ার্ল্ড ওয়ার ২ হোম ফ্রন্ট ন্যাশনাল হিস্টোরিক্যাল পার্ক’ -এ দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়কার শ্রমিক নারীদের কথা স্মরণ করা হয়। যুদ্ধের সময়, নারীরা কারখানায় কাজ করে দেশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিলেন।

এই পার্কটিতে এলজিবিটিকিউ+ ব্যক্তিদের যুদ্ধের সময়কার অভিজ্ঞতা নিয়ে একটি প্রদর্শনীও রয়েছে।

নিউইয়র্কের ‘ফায়ার আইল্যান্ড ন্যাশনাল সিশোর’ -এ দীর্ঘদিন ধরে এলজিবিটিকিউ+ সম্প্রদায়ের মানুষেরা গ্রীষ্মের ছুটি কাটানোর জন্য আসেন। ১৯৩০-এর দশক থেকে এটি কুইয়ার সম্প্রদায়ের কাছে একটি পছন্দের জায়গা।

এখানকার ‘চেরি গ্রোভ’ এবং ‘ফায়ার আইল্যান্ড পাইনস’ -এর মতো স্থানগুলি শিল্পী, লেখক এবং মুক্তচিন্তকদের আশ্রয়স্থল হিসেবে পরিচিত।

সবশেষে, মেইনের ‘ফ্রান্সেস পারকিন্স ন্যাশনাল মনুমেন্ট’-এর কথা বলতে হয়। ফ্রান্সেস পারকিন্স ছিলেন ফ্রাঙ্কলিন রুজভেল্টের মন্ত্রিসভার প্রথম নারী সদস্য এবং শ্রমমন্ত্রী।

তিনি সামাজিক নিরাপত্তা এবং শ্রমিক ইউনিয়নের উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। তাঁর ব্যক্তিগত জীবনে নারী ও পুরুষের সঙ্গে সম্পর্কের বিষয়টিও উল্লেখযোগ্য।

এই জাতীয় উদ্যান ও স্মৃতিস্তম্ভগুলি এলজিবিটিকিউ+ সম্প্রদায়ের মানুষের প্রতি সম্মান জানায় এবং তাদের সংগ্রামের ইতিহাসকে স্মরণ করে। এই স্থানগুলি আমাদের সমাজের বৈচিত্র্য ও অন্তর্ভুক্তির গুরুত্ব সম্পর্কে শিক্ষা দেয়।

তথ্য সূত্র: ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *