গর্বের মাস: হতাশ ও উদ্বেগের মধ্যে এলজিবিটিকিউ সম্প্রদায়ের

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে, এলজিবিটিকিউ+ (LGBTQ+) সম্প্রদায়ের অধিকার এবং তাদের প্রতি সমর্থন প্রদর্শনের মাস হিসেবে পরিচিত জুন মাস। প্রতি বছর এই সময়ে নানা ধরনের আনন্দ-উৎসবের আয়োজন করা হয়। কিন্তু এবার এই উদযাপনের মধ্যে হতাশা এবং উদ্বেগের ছায়া দেখা যাচ্ছে।

এর কারণ, মার্কিন সরকারের কিছু সিদ্ধান্ত, যা অনেকের মতে, এলজিবিটিকিউ+ সম্প্রদায়ের অধিকারের পথে বাধা সৃষ্টি করছে।

সম্প্রতি, দেশটির সুপ্রিম কোর্ট (Supreme Court) রূপান্তরকামীদের (transgender) স্বাস্থ্যসেবা সংক্রান্ত একটি গুরুত্বপূর্ণ রায় দিয়েছে। এই রায়ের ফলে, টেনেসির (Tennessee) মতো আরও অনেক রাজ্যে রূপান্তরকামী তরুণদের জন্য স্বাস্থ্য পরিষেবা দেওয়া কঠিন হয়ে যেতে পারে। এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে এলজিবিটিকিউ+ অধিকারকর্মীরা তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন।

তাঁদের মতে, এমন একটি সময়ে এই রায় এল, যখন আনন্দ ও উৎসবের মাধ্যমে নিজেদের অধিকারের কথা বলার কথা।

শুধু তাই নয়, এলজিবিটিকিউ+ সম্প্রদায়ের অধিকারের প্রশ্নে আরও কিছু পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে, যা উদ্বেগের কারণ হয়েছে।

প্রাক্তন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প (Donald Trump) রূপান্তরকামী মহিলাদের খেলাধুলায় অংশগ্রহণের বিরোধিতা করছেন। এমনকি, তিনি ক্যালিফোর্নিয়া রাজ্যের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ারও হুঁশিয়ারি দিয়েছেন।

ক্যালিফোর্নিয়ার একটি আইনে রূপান্তরকামী খেলোয়াড়দের তাঁদের লিঙ্গপরিচয় অনুযায়ী খেলার সুযোগ দেওয়া হয়।

এছাড়াও, সরকারি কিছু নীতির পরিবর্তনও দেখা যাচ্ছে। সরকারি অর্থায়নে পরিচালিত ৯৮৮ সুইসাইড অ্যান্ড ক্রাইসিস লাইফলাইন (988 Suicide & Crisis Lifeline)-এ এলজিবিটিকিউ+ তরুণদের জন্য বিশেষ সহায়তা বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

আগে এই লাইনের মাধ্যমে বিশেষভাবে প্রশিক্ষিত কাউন্সেলরদের সঙ্গে কথা বলার সুযোগ ছিল, যা এখন আর থাকছে না। যদিও সরকার বলছে, এই লাইনে ফোন করলে সবাই সহানুভূতি ও সাহায্য পাবেন, কিন্তু বিশেষ সহায়তা বন্ধের ফলে অনেকেই হতাশ।

যুক্তরাষ্ট্রের প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসন এই সময়ে ‘প্রাইড’ উদযাপনের প্রতি আগের মতো সমর্থন দেখাচ্ছে না। এমনকি, হোয়াইট হাউস (White House)-এর পক্ষ থেকে জুন মাসকে আনুষ্ঠানিকভাবে ‘প্রাইড মাস’ হিসেবে ঘোষণা করা হয়নি।

এর পরিবর্তে, শিক্ষা দপ্তর (Department of Education) জুন মাসকে ‘টাইটেল নাইন মাস’ হিসেবে ঘোষণা করেছে, যা শিক্ষা ক্ষেত্রে নারী ও বালিকাদের প্রতি বৈষম্য রোধের সঙ্গে সম্পর্কিত।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, এসব পদক্ষেপ এলজিবিটিকিউ+ সম্প্রদায়ের অধিকারের প্রতি এক ধরনের অনীহা প্রকাশ করে। এই পরিস্থিতিতে, এলজিবিটিকিউ+ অধিকার রক্ষা এবং তাঁদের প্রতি সমর্থন জানানো নিয়ে নতুন করে বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছে।

যদিও কিছু রক্ষণশীল গোষ্ঠী মনে করে, এই পদক্ষেপগুলো আসলে প্রগতিশীল রাজনীতির বিরুদ্ধে, কিন্তু এর ফলে অনেক রিপাবলিকানের মধ্যে সমকামিতা নিয়ে ধারণার পরিবর্তন হয়েছে বলে বিভিন্ন জরিপে দেখা গেছে।

অন্যদিকে, এলজিবিটিকিউ+ অধিকার বিষয়ক সংগঠনগুলো তাঁদের কার্যক্রম চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছে। ল্যাম্বডা লিগ্যাল (Lambda Legal) নামক একটি সংস্থা তাদের আইনি লড়াই চালিয়ে যাওয়ার জন্য অর্থ সংগ্রহ শুরু করেছে এবং তারা ইতিমধ্যেই তাদের লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি অর্থ সংগ্রহ করেছে।

এসব ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে, এলজিবিটিকিউ+ সম্প্রদায়ের অধিকারকর্মীরা তাঁদের সংগ্রাম চালিয়ে যাওয়ার অঙ্গীকার করেছেন। তাঁদের মতে, অধিকার আদায়ের এই লড়াইয়ে তাঁরা পিছপা হবেন না।

তথ্য সূত্র: সিএনএন (CNN)

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *