মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ‘বামপন্থী মিডিয়া’র ধারণা কি তবে অতীত?
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে মিডিয়া জগতে এক গভীর পরিবর্তনের ঢেউ লেগেছে। দেশটির প্রভাবশালী সংবাদমাধ্যম সিএনএন-এ প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে এই পরিবর্তনের চিত্র তুলে ধরা হয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, একসময়কার ‘বামপন্থী মিডিয়া’র ধারণাটি এখন প্রায় বিলুপ্তির পথে। রক্ষণশীল রাজনৈতিক শক্তি এবং অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জের কারণে এই পরিবর্তন এসেছে।
প্রতিবেদনে বিশেষভাবে উল্লেখ করা হয়েছে, সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এবং তাঁর মিত্ররা কীভাবে সংবাদমাধ্যমকে নিজেদের নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করছেন। তাঁরা বিভিন্ন আইনি এবং অর্থনৈতিক কৌশল ব্যবহার করে সমালোচনামূলক মিডিয়া সংস্থাগুলোর কণ্ঠরোধ করতে চাইছেন।
এই প্রসঙ্গে, মিডিয়া সমালোচক জেফ জার্ভিসের একটি সাক্ষাৎকারের কথা তুলে ধরা হয়েছে। জার্ভিস মনে করেন, মিডিয়া এখন রাজনৈতিকভাবে একত্রিত হচ্ছে এবং ভিন্নমতের কণ্ঠস্বরগুলো ক্রমশ দুর্বল হয়ে পড়ছে।
তিনি আরও উল্লেখ করেন, ঐতিহ্যবাহী মিডিয়া ব্যবসার মডেলটি ভেঙে পড়ছে এবং ইন্টারনেটের বিস্তারও এখন কর্পোরেট ও রাজনৈতিক নিয়ন্ত্রণের ঝুঁকিতে।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, মিডিয়া সংস্থাগুলো ট্রাম্পের সমালোচনার জবাব দেওয়ার জন্য যে নমনীয় নীতি গ্রহণ করেছিল, তা কার্যত কোনো ফল দেয়নি।
উদাহরণস্বরূপ, এবিসি এবং সিবিএস-এর মতো ‘বামপন্থী’ হিসেবে পরিচিত মিডিয়াগুলো ট্রাম্পের সঙ্গে আইনি লড়াই এড়াতে বিপুল পরিমাণ অর্থ খরচ করেছে। কিন্তু এর পরেও ট্রাম্প তাঁদের ওপর বিভিন্ন দাবি জানিয়ে গেছেন।
জার্ভিসের মতে, সংবাদমাধ্যম এখন দুটি প্রধান চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন: এক দিকে অর্থনৈতিক চাপ, অন্য দিকে রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ।
তাঁর মতে, সংবাদমাধ্যমের প্রভাবশালী ব্যবসায়িক মডেলটি ছিল সীমিত সংখ্যক পাঠকের কাছে বিজ্ঞাপন পৌঁছে দেওয়া এবং তাঁদের মনোযোগ আকর্ষণ করা। কিন্তু ইন্টারনেটের কারণে সেই মডেলটি দুর্বল হয়ে পড়েছে।
বর্তমানে অনেক মিডিয়া তাদের বিষয়বস্তু подписন বা সাবস্ক্রিপশনের মাধ্যমে সরবরাহ করছে, যা সীমিত সংখ্যক পাঠকের মধ্যে সীমাবদ্ধ।
এই পরিস্থিতিতে, অনেক বিশ্লেষক মনে করেন, সংবাদমাধ্যমকে টিকে থাকতে হলে ভিন্ন পথে হাঁটতে হবে। তাঁদের মতে, পডকাস্ট, ব্লগ এবং সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভিন্নমতের কণ্ঠস্বরগুলো আরও বেশি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠছে।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে মিডিয়ার এই পরিবর্তন বাংলাদেশের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ দৃষ্টান্ত হতে পারে।
কারণ, বাংলাদেশের মিডিয়া জগতেও রাজনৈতিক প্রভাব, মালিকানা এবং সেন্সরশিপ নিয়ে বিভিন্ন ধরনের আলোচনা সবসময়ই বিদ্যমান। এই পরিবর্তনের ফলে, বাংলাদেশের মিডিয়াকেও নতুন চ্যালেঞ্জ এবং সুযোগগুলোর সম্মুখীন হতে হবে।
তথ্য সূত্র: সিএনএন