শিরোনাম: মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে গ্রন্থাগারিকদের সংগ্রাম: বই নিষিদ্ধকরণ ও সরকারি অর্থ হ্রাস।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের গ্রন্থাগারিকরা বর্তমানে এক কঠিন পরিস্থিতির সম্মুখীন হচ্ছেন। একদিকে যেমন রক্ষণশীল গোষ্ঠীগুলোর প্ররোচনায় বই নিষিদ্ধ করার প্রবণতা বাড়ছে, তেমনি সরকারি অনুদান হ্রাসের কারণে তাদের প্রয়োজনীয় সুযোগ-সুবিধাগুলোও সীমিত হয়ে আসছে। এমন পরিস্থিতিতে তথ্য অধিকার এবং গণতন্ত্রের গুরুত্বপূর্ণ স্তম্ভ হিসেবে বিবেচিত গ্রন্থাগারগুলোর টিকে থাকা কঠিন হয়ে পড়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন রাজ্যে, বিশেষ করে মেরিল্যান্ড, টেক্সাস এবং ভারমন্টের মতো স্থানে, গ্রন্থাগারগুলোতে কর্মীদের উপর চাপ বাড়ছে। রক্ষণশীল গোষ্ঠীগুলো গ্রন্থাগারগুলোতে “আপত্তিকর” বই তালিকাভুক্ত করতে বাধা দিচ্ছে, যা কর্মীদের জন্য উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। অনেক গ্রন্থাগারিক নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানিয়েছেন, তাদের কর্তৃপক্ষের মধ্যে এই বিষয়ে উত্তেজনা বাড়ছে। তারা এমন সব পদক্ষেপ নিচ্ছেন, যাতে বিতর্কিত বইগুলো সহজে খুঁজে পাওয়া না যায়।
অন্যদিকে, গ্রন্থাগারগুলোর জন্য সরকারি অর্থ হ্রাস একটি গুরুতর সমস্যা হয়ে দেখা দিয়েছে। লাইব্রেরি ও জাদুঘর বিষয়ক ইনস্টিটিউট (আইএমএলএস)-এর মতো সংস্থা, যা গ্রন্থাগারগুলোকে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পরিষেবা প্রদানের জন্য অনুদান দিয়ে থাকে, তাদের বাজেট কমানোর ফলে এই পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়েছে। এর ফলে ইন্টারনেট পরিষেবা, গ্রীষ্মকালীন পাঠ কার্যক্রম, এবং প্রবীণ নাগরিকদের স্বাস্থ্যসেবা বিষয়ক সহায়তা প্রদানের মতো প্রয়োজনীয় পরিষেবাগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে, বিশেষ করে গ্রামীণ এলাকাগুলোতে এর প্রভাব বেশি।
এই পরিস্থিতিতে, গ্রন্থাগারিকদের কাজ করা আরও কঠিন হয়ে পড়েছে। তাদের সীমিত সম্পদের মধ্যে বেশি চাহিদা পূরণ করতে হচ্ছে। কর্মীদের উপর একদিকে যেমন কাজের চাপ বাড়ছে, তেমনি তাদের স্বাধীনতাও হুমকির সম্মুখীন হচ্ছে। অনেক গ্রন্থাগারিক মনে করেন, তাদের মৌলিক চাহিদা মেটানোর মতো বেতনও তারা পান না।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই পরিস্থিতি শুধু গ্রন্থাগারিকদের একার নয়, বরং এটি একটি বৃহত্তর সমস্যার অংশ। তথ্য এবং শিক্ষার অধিকার থেকে বঞ্চিত হওয়া একটি গণতান্ত্রিক সমাজে উদ্বেগের বিষয়। এটি শ্রমিক শ্রেণির অধিকার এবং সমাজে পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর জন্য আরও বেশি উদ্বেগের কারণ।
যুক্তরাষ্ট্রে গ্রন্থাগারগুলোতে বর্তমানে যে সংকট চলছে, তা সেখানকার গণতন্ত্র এবং সমাজের জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ। এই সংকট মোকাবিলায় তথ্যের অবাধ প্রবাহ নিশ্চিত করতে এবং গ্রন্থাগারগুলোকে শক্তিশালী করতে জরুরি পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন।
তথ্য সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান