লিসবনে একটি ট্রাম দুর্ঘটনায় বহু মানুষের মৃত্যু, চলছে তদন্ত।
পর্তুগালের রাজধানী লিসবনে একটি জনপ্রিয় পর্যটন আকর্ষণ, গ্লোরিয়া এলিভেটর-এ বুধবার রাতে একটি ট্রাম লাইনচ্যুত হয়ে ভয়াবহ দুর্ঘটনায় ১৬ জন নিহত এবং ২১ জন আহত হয়েছেন। পর্তুগালের প্রধানমন্ত্রী লুইস মন্টেনিগ্রো এই ঘটনাকে সাম্প্রতিক সময়ের সবচেয়ে বড় ট্রাজেডিগুলোর একটি হিসেবে বর্ণনা করেছেন।
দুর্ঘটনার কারণ অনুসন্ধানে তদন্ত শুরু হয়েছে এবং খুব শীঘ্রই প্রাথমিক প্রতিবেদন আসার কথা রয়েছে। শুক্রবারের মধ্যে সরকার এই বিষয়ে একটি প্রাথমিক তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশ করবে বলে জানা গেছে। পুলিশের প্রধান তদন্তকারী কর্মকর্তা নেলসন অলিভেইরা জানিয়েছেন, ৪৫ দিনের মধ্যে পুলিশের পক্ষ থেকেও একটি প্রাথমিক প্রতিবেদন পেশ করা হবে।
নিহতদের মধ্যে পর্তুগিজ নাগরিক ছাড়াও বিভিন্ন দেশের পর্যটকদের শনাক্ত করা হয়েছে। নিহতদের মধ্যে পাঁচজন পর্তুগালের, দুইজন দক্ষিণ কোরিয়ার এবং একজন সুইজারল্যান্ডের নাগরিক। এছাড়াও কানাডা, যুক্তরাষ্ট্র, জার্মানি ও ইউক্রেনের নাগরিক নিহত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। নিহতদের মধ্যে আরও তিনজনের পরিচয় এখনো নিশ্চিত করা যায়নি।
দুর্ঘটনায় আহতদের মধ্যে স্পেন, ইসরায়েল, পর্তুগাল, ব্রাজিল, ইতালি ও ফ্রান্সের নাগরিক রয়েছেন। আহতদের মধ্যে পাঁচজনের অবস্থা গুরুতর। পর্তুগালের জাতীয় স্বাস্থ্য সেবার নির্বাহী পরিচালক আলভারো সান্তোস আলমেদা এ তথ্য জানিয়েছেন।
পর্তুগালের প্রধানমন্ত্রী মন্টেনিগ্রো এক টেলিভিশন ভাষণে বলেছেন, “এই ট্রাজেডি আমাদের সীমানা ছাড়িয়ে গেছে।” লিসবন শহরে প্রতি বছর প্রায় ৮৫ লক্ষ পর্যটকের আগমন ঘটে এবং গ্লোরিয়া এলিভেটরের সংক্ষিপ্ত ও মনোরম ভ্রমণের জন্য প্রায়ই দীর্ঘ লাইন দেখা যায়। ঘটনার পর পর্তুগালে জাতীয় শোক ঘোষণা করা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় লিসবনের সেন্ট ডমিনিক চার্চে শোক পালন করা হয়, যেখানে নিহতদের আত্মার শান্তি কামনায় প্রার্থনা করা হয়। শোকসভায় প্রধানমন্ত্রী, পর্তুগালের প্রেসিডেন্ট মার্সেলো রেবেলো ডি সোসা এবং লিসবনের মেয়র কার্লোস মোয়েদাস সহ অনেকে উপস্থিত ছিলেন।
এদিকে, ট্রাম পরিচালনাকারী সংস্থা কাররিস (Carris) জানিয়েছে, এই ট্রামটির দৈনিক পরিদর্শন করা হতো। তারা দুর্ঘটনার কারণ অনুসন্ধানে নিজস্ব তদন্ত শুরু করেছে। কাররিসের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা পেড্রো ডি ব্রিটোর মতে, ১৯১৪ সাল থেকে চালু হওয়া এই ট্রামটি গত বছর একটি নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণ প্রোগ্রামের অধীনে ছিল। দুর্ঘটনার ৯ ঘণ্টা আগেও এর ভিজ্যুয়াল ইন্সপেকশন করা হয়েছিল।
অন্যদিকে, লিসবন সিটি কাউন্সিল দুর্ঘটনার পর শহরের আরও তিনটি ফিউনিকুলার ট্রামের চলাচল স্থগিত করেছে এবং জরুরি ভিত্তিতে সেগুলোরও পরিদর্শন করা হচ্ছে।
দুর্ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী ৭০ বছর বয়সী ব্রিটিশ পর্যটক ফেলিসিটি ফ্যারিটার জানিয়েছেন, তিনি কাছেই একটি হোটেলে তার জিনিসপত্র গোছানোর সময় বিকট শব্দ শুনতে পান। তিনি এবং তার সঙ্গীর পরদিন এই ট্রামে চড়ার পরিকল্পনা ছিল। আরেকজন ইতালীয় পর্যটক ফ্রান্সেসকা ডি বেলো জানিয়েছেন, দুর্ঘটনার কয়েক ঘণ্টা আগেও তিনি গ্লোরিয়া এলিভেটরে ছিলেন। তিনি বলেছেন, এই ঘটনার পর তিনি আর কোনো ফিউনিকুলার ট্রামে ভ্রমণ করবেন না।
তথ্য সূত্র: অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস