লিভারপুল-এর ঐতিহাসিক জয়ে কেঁপে উঠল মাঠ, ভূমিকম্পের মতো কম্পন!
ফুটবল বিশ্বে উন্মাদনা নতুন কিছু নয়, বিশেষ করে যখন প্রিয় দল জেতে। কিন্তু সম্প্রতি লিভারপুল-এর খেলা শেষে যা ঘটল, তা হয়তো অনেকেই শোনেননি!
টটেনহ্যাম হটস্পার-এর বিরুদ্ধে ৫-১ গোলে জয়লাভ করার পর, লিভারপুল-এর সমর্থকরা তাদের প্রিয় দলের এই অভাবনীয় জয় উদযাপন করতে এতটাই মেতে উঠেছিল যে, তাদের উল্লাসে কেঁপে উঠেছিল মাঠ! বিজ্ঞানীরা বলছেন, এই কম্পন ছিল অনেকটা ভূমিকম্পের মতো।
বিষয়টি আরও পরিষ্কার করে বলা যাক। খেলাটি অনুষ্ঠিত হয়েছিল লিভারপুলের বিখ্যাত স্টেডিয়াম, অ্যানফিল্ডে।
মাঠের ভেতরের দর্শকদের আনন্দ-চিৎকার, জয়োল্লাস রেকর্ড করতে বিশেষ ব্যবস্থা নিয়েছিলেন লিভারপুল বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূ-বিজ্ঞান বিভাগের বিজ্ঞানীরা। তারা আধুনিক সরঞ্জাম ব্যবহার করে মাঠের কম্পন পরিমাপ করেন। এই যন্ত্রগুলো সাধারণত ভূমিকম্প-প্রবণ এলাকা, যেমন: চিলি ও ইতালিতে ব্যবহার করা হয়।
গবেষকরা জানিয়েছেন, খেলার সময় হওয়া প্রতিটি গোলের পরেই কম্পন অনুভূত হয়েছে।
এমনকি, গোল হওয়ার পরে দর্শকদের চিৎকারেও কম্পন দেখা গেছে। সবচেয়ে বেশি কম্পন হয় যখন অ্যালেক্সিস ম্যাক অ্যালিস্টারের করা গোলে লিভারপুল ২-১ গোলে এগিয়ে যায়।
এই কম্পনের মাত্রা ছিল রিখটার স্কেলে ১.৭৪। এছাড়াও, মোহামেদ সালাহ-এর করা গোলের পর কম্পনের মাত্রা ছিল ১.৬০।
কোডি গ্যাকপোর গোলের সময় এর মাত্রা ছিল ১.০৩, ডেস্টিনি উডোগির আত্মঘাতী গোলের সময় ১.৩৫ এবং লুইস ডিয়াজের গোল বাতিল হওয়ার পরে কম্পনের মাত্রা ছিল ০.৬৪।
গবেষণা দলের প্রধান ছিলেন ড. আন্তোইন সেপ্টিয়ার, ড. ফারনাজ কামরানজাদ এবং অধ্যাপক বেন এডওয়ার্ডস।
ড. কামরানজাদ এই বিষয়ে বলেন, “ফুটবল ভক্তরা যে এমন ভূ-কম্পন সৃষ্টি করতে পারে, তা আগে জানা ছিল না! এই পরীক্ষা প্রমাণ করে বিজ্ঞান সবসময় আমাদের চারপাশে, এমনকি খেলার মাঠের গোল-চিৎকারের মধ্যেও লুকিয়ে থাকে।”
তিনি আরও জানান, এই কম্পনগুলো এতটাই সামান্য ছিল যে, তা হয়তো গ্যালারিতে বসা কেউই অনুভব করেননি, তবে এর স্পষ্ট ছাপ ছিল মাঠজুড়ে।
ড. সেপ্টিয়ার মনে করেন, এই গবেষণা বিজ্ঞানকে আরও আকর্ষণীয় করে তোলে এবং বিজ্ঞানীদের নতুন প্রজন্মের কাছে পৌঁছে দেয়।
তিনি আরও বলেন, এই ডেটা ভবিষ্যতে স্টেডিয়ামের অভিজ্ঞতা আরও উন্নত করতে সাহায্য করতে পারে।
খেলাধুলার এমন উন্মাদনা এবং বিজ্ঞান একসাথে মিশে তৈরি করেছে এক দারুণ দৃষ্টান্ত। ফুটবলপ্রেমীদের আনন্দ আর বিজ্ঞানচর্চার এই মেলবন্ধন সত্যিই অসাধারণ!
তথ্য সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান