প্রতি বছর ‘আগুন’, ভয়ঙ্কর ধোঁয়ায় ঢাকছে লন্ডনের জনপদ!

**লন্ডনের ‘আগুন পাহাড়’: প্রতি বছর গ্রীষ্মে বিষাক্ত ধোঁয়ায় নাজেহাল স্থানীয়রা**

প্রতি বছর গ্রীষ্মকালে লন্ডনের রেইনহ্যাম এলাকার বাসিন্দাদের জীবনে এক বিভীষিকা নেমে আসে। বিশাল এক আবর্জনার স্তূপ, যা স্থানীয়দের কাছে ‘আগুন পাহাড়’ নামে পরিচিত, তা থেকে নির্গত হওয়া বিষাক্ত ধোঁয়ায় তাদের জীবন অতিষ্ঠ হয়ে ওঠে। দীর্ঘদিন ধরে চলতে থাকা এই ঘটনার সমাধানে কর্তৃপক্ষের উদাসীনতা নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন ভুক্তভোগীরা।

লন্ডনের পূর্বে অবস্থিত রেইনহ্যাম এলাকার আর্নল্ডস ফিল্ড নামের এই বিশাল আবর্জনার স্তূপটি মূলত একটি পুরনো গর্ত ছিল, যা ১৯৬০-এর দশকে নির্মাণ সামগ্রীর জন্য ব্যবহৃত হতো। পরবর্তীতে ১৯৬৭ সাল থেকে এটি বৈধভাবে বর্জ্য ফেলার স্থানে পরিণত হয়।

১৯৯৮ সালে একটি কোম্পানির কাছে এই জায়গাটি বিক্রি করা হলেও, ২০০০ সালে এখানে কমিউনিটি বনভূমি তৈরির পরিকল্পনা করা হয়। কিন্তু বাস্তবে, এখানে অবৈধভাবে আবর্জনা ফেলা হতে থাকে। এমনকি, কর্তৃপক্ষের নিষেধাজ্ঞার পরেও এই কাজ অব্যাহত ছিল।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, ২০১৬ সাল পর্যন্ত এখানে নিয়মিতভাবে বর্জ্য ফেলা হয়েছে। এর ফলে, স্তূপের ভেতরের বর্জ্যগুলো পচে গিয়ে আগুন ধরে যায় এবং তা থেকে নির্গত হওয়া ধোঁয়ায় এলাকার পরিবেশ দূষিত হয়। বাসিন্দারা জানান, এই ধোঁয়ার কারণে তাদের শ্বাসকষ্ট, মাথাব্যথা ও অন্যান্য স্বাস্থ্য সমস্যা হচ্ছে।

আর্ন্তজাতিক সংবাদ মাধ্যমের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০২০ সাল থেকে এখন পর্যন্ত প্রায় ১৬০ বার এই ‘আগুন পাহাড়’-এ আগুন লেগেছে। এছাড়া, ২০১১ সালে এখানে অভিযান চালিয়ে পুলিশ বিপুল পরিমাণ মাদক ও অস্ত্র উদ্ধার করে।

স্থানীয় বাসিন্দা এবং পরিবেশ বিষয়ক কর্মী, পাওলাইন ক্লারিдж জানান, তিনি শ্বাসকষ্টের রোগী এবং এই আগুনের ধোঁয়ার কারণে তার শারীরিক অবস্থা আরও খারাপ হয়ে যায়। এছাড়া, এলাকার ১৭ বছর বয়সী কিশোরী ফিবি-জো হোয়াইট-এর মতে, এই ধোঁয়া তাদের ভবিষ্যতের জন্য এক বিরাট উদ্বেগের কারণ।

আর্ন্তজাতিক সংবাদমাধ্যম সূত্রে জানা যায়, এই এলাকার কাউন্সিল কর্তৃপক্ষ প্রথমে বিষয়টিকে গুরুত্ব দিতে চায়নি। তাদের দাবি ছিল, এই ধোঁয়ার কারণে মানুষের তেমন কোনো ক্ষতি হচ্ছে না। তবে, স্থানীয় একটি সংগঠনের আন্দোলনের ফলস্বরূপ, আদালত কাউন্সিলের এই সিদ্ধান্তের সমালোচনা করে।

বর্তমানে, কাউন্সিল বিষয়টি পুনর্বিবেচনা করতে রাজি হয়েছে।

আর্ন্তজাতিক সংবাদমাধ্যমগুলোতে প্রকাশিত খবর অনুযায়ী, এই ঘটনার সাথে জড়িত কর্তৃপক্ষের মধ্যে সমন্বয়হীনতা রয়েছে। একদিকে যেমন স্থানীয় কাউন্সিল কর্তৃপক্ষের উদাসীনতা, অন্যদিকে ভূমি মালিকের অসহযোগিতা—সব মিলিয়ে এই সমস্যার সমাধানে দীর্ঘসূত্রতা দেখা যাচ্ছে।

আর্ন্তজাতিক সংবাদ মাধ্যম আরও জানায়, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে এবং দূষণ কমাতে কর্তৃপক্ষের দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া উচিত। একইসঙ্গে, স্থানীয় বাসিন্দাদের স্বাস্থ্য সুরক্ষার বিষয়টিও নিশ্চিত করতে হবে।

তথ্য সূত্র: সিএনএন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *