ট্রাম্পের প্রত্যাবর্তনে ব্রিটেনে আমেরিকাবাসীর নাগরিকত্বের আবেদন!

যুক্তরাষ্ট্রের আসন্ন নির্বাচন এবং ডোনাল্ড ট্রাম্পের ক্ষমতা প্রত্যাবর্তনের সম্ভাবনাকে কেন্দ্র করে যুক্তরাজ্যে মার্কিন নাগরিকদের নাগরিকত্বের জন্য আবেদন করার সংখ্যা বাড়ছে, এমনটাই মনে করেন লন্ডনের মেয়র সাদিক খান। সম্প্রতি এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, নভেম্বরের মার্কিন নির্বাচনের ফলাফলের সঙ্গে এর ‘স্পষ্ট যোগসূত্র’ রয়েছে।

ব্রিটিশ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, গত বছর রেকর্ড সংখ্যক মার্কিন নাগরিক যুক্তরাজ্যের নাগরিকত্বের জন্য আবেদন করেছেন। বিশেষ করে, ট্রাম্পের সম্ভাব্য পুনর্নির্বাচনের সময়ে, বছরের শেষ প্রান্তিকে এই আবেদন জমা পড়ার সংখ্যা উল্লেখযোগ্য হারে বৃদ্ধি পেয়েছে।

ফ্রান্সের কান শহরে অনুষ্ঠিত ‘এমআইপিআইএম’ রিয়েল এস্টেট সম্মেলনে বক্তৃতাকালে সাদিক খান ট্রাম্পের আগের মেয়াদের কথা উল্লেখ করে কানাডার প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডোর সঙ্গে তার কথোপকথনের স্মৃতিচারণ করেন। তিনি বলেন, ট্রাম্পের শাসনামলে তিনি চেয়েছিলেন, যেসব আমেরিকান দেশ ছাড়তে চাইছে, তারা যেন সবাই যুক্তরাজ্যে আসে।

অন্যদিকে, ট্রুডো চেয়েছিলেন তারা যেন কানাডায় যায়। বর্তমানে কানাডার সঙ্গে ট্রাম্পের সম্পর্ক ভালো নয়। ট্রাম্প এরই মধ্যে বলেছেন, কানাডার উচিত আমেরিকার ৫১তম রাজ্যে পরিণত হওয়া।

এমন পরিস্থিতিতে খান মনে করেন, লন্ডনের অবস্থান বেশ সুবিধাজনক। তার মতে, সম্ভবত এখন আর ওই আমেরিকানরা কানাডার বদলে লন্ডনকেই বেছে নিচ্ছেন।

পরিসংখ্যান বলছে, ২০২৪ সালে ৬,০০০ এর বেশি মার্কিন নাগরিক ব্রিটিশ নাগরিকত্বের জন্য আবেদন করেছেন। গত দুই দশকে, যখন থেকে ব্রিটিশ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এই সংক্রান্ত তথ্য সংগ্রহ শুরু করেছে, এটি সেই সময়ের মধ্যে সর্বোচ্চ সংখ্যা।

এর মধ্যে, বছরের শেষ তিন মাসে আবেদন করেছেন প্রায় ১,৭০০ জন, যা ২০২৩ সালের একই সময়ের চেয়ে প্রায় ৪০ শতাংশ বেশি।

ডোনাল্ড ট্রাম্প এবং সাদিক খানের মধ্যে সম্পর্ক সব সময়ই বেশ তিক্ত ছিল। ২০১৯ সালে ট্রাম্প যখন যুক্তরাজ্যে রাষ্ট্রীয় সফরে আসার সিদ্ধান্ত নেন, তখন খান এর সমালোচনা করে বলেছিলেন, ট্রাম্পকে স্বাগত জানানো ‘ব্রিটিশ সংস্কৃতির পরিপন্থী’।

এর আগে, ট্রাম্পের প্রথম যুক্তরাজ্য সফরের সময় বিক্ষোভকারীরা ট্রাম্পকে ব্যঙ্গ করে তৈরি করা একটি বিশাল বেলুন উড়িয়েছিল, যা ব্যাপক আলোচনার জন্ম দেয়।

যুক্তরাজ্যে কোনো রাষ্ট্রপ্রধান সফরে এলে, তাকে রাজকীয় সংবর্ধনা জানানো হয়। রাজা বা রানীর সঙ্গে সাক্ষাৎ থেকে শুরু করে বাকিংহাম প্যালেসে সংবর্ধনা এবং ভোজসভার আয়োজন করা হয়।

সম্প্রতি, ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী কেইর স্টারমার (যিনিও লেবার পার্টির সদস্য) রাজা তৃতীয় চার্লসের পক্ষ থেকে ট্রাম্পকে দ্বিতীয় মেয়াদে যুক্তরাজ্য সফরের আমন্ত্রণ জানিয়েছেন।

সাদিক খান সাক্ষাৎকারে স্বীকার করেছেন, ট্রাম্পের আগের মেয়াদের আচরণ নিয়ে তার ‘দৃঢ় মতামত’ ছিল। তবে তিনি আশা করেন, দ্বিতীয় মেয়াদে ট্রাম্প হয়তো ভিন্ন ধরনের হবেন।

তিনি আরও বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র একটি পরাশক্তি। আমেরিকার আশা ও উদ্দীপনার ঢেউ যেমন আমরা অনুভব করি, তেমনি ঘৃণা ও নেতিবাচকতার ঢেউও মাঝে মাঝে আমাদের স্পর্শ করে।’

তবে, ট্রাম্পের প্রতি এবার খান কিছুটা নরম সুর দেখিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘আমি প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সর্বাঙ্গীণ সাফল্য কামনা করি। আমি যুক্তরাষ্ট্রকে ভালোবাসি, ভালোবাসি তাদের সংস্কৃতি, মানুষ, রাজনীতি এবং ব্যবসা-বাণিজ্যকে।

তাই, অবশ্যই আমি তার ভালো চাই।’ তবে, ট্রাম্পের পরবর্তী যুক্তরাজ্য সফরে বিক্ষোভকারীরা যদি আবারও ‘ট্রাম্প বেবি’ বেলুন ওড়ানোর অনুমতি চায়, তাহলে তিনি এর ‘যুক্তিযুক্ততা’ বিবেচনা করে সিদ্ধান্ত নেবেন।

খান মনে করেন, বিদ্রূপ, হাস্যরস এবং প্রতিবাদ—এইগুলো ব্রিটিশ এবং আমেরিকান সংস্কৃতির অবিচ্ছেদ্য অংশ।

যুক্তরাষ্ট্রে নিযুক্ত ব্রিটিশ দূতাবাস এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হয়নি।

তথ্য সূত্র: সিএনএন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *