গোয়েন্দা সিনেমা ভালোবাসেন? জেমস বন্ড থেকে শুরু করে মিশন ইম্পসিবল— সিনেমার পর্দায় গোয়েন্দাদের নানান কীর্তি সবসময়ই দর্শকদের মনে দাগ কাটে। আর এই সিনেমাগুলোর শুটিং লোকেশন হিসেবে লন্ডন যেন এক দারুণ পছন্দ। ব্রিটেনের এই রাজধানী শহর সিনেমার জন্য যেন বিশেষভাবে তৈরি।
এখানকার অলিগলিগুলো যেমন গোপন অভিযানের জন্য উপযুক্ত, তেমনই এখানকার আবহাওয়াও রহস্য তৈরি করতে সহায়ক।
বহু বছর ধরেই রুপালি পর্দায় স্পাই থ্রিলার বা গুপ্তচর-ভিত্তিক সিনেমা নির্মাণের জন্য লন্ডন একটি নির্ভরযোগ্য স্থান। আলফ্রেড হিচককের ‘দ্য থার্টি নাইন স্টেপস’ (The 39 Steps) (১৯৩৫) সিনেমাটির হাত ধরেই আধুনিক স্পাই থ্রিলারের যাত্রা শুরু হয়, যেখানে কিং ক্রস স্টেশন-এর দৃশ্য ব্যবহার করা হয়েছিল।
সম্প্রতি মুক্তিপ্রাপ্ত ‘মিশন: ইম্পসিবল – ডেড রেকনিং পার্ট ওয়ান’ (Mission: Impossible – Dead Reckoning Part One) ছবিতেও লন্ডনের বিভিন্ন স্থানে অভিনেতা টম ক্রুজকে অ্যাকশন দৃশ্যে দেখা গেছে।
লন্ডনের ঐতিহাসিক স্থাপত্য, আকর্ষণীয় স্থান, এবং এখানকার আবহাওয়া—সবকিছুই সিনেমার গল্প বলার জন্য উপযুক্ত। সিনেমার শুটিং লোকেশন হিসেবে লন্ডনের জনপ্রিয়তা এতটাই বেশি যে, অনেক সিনেমাপ্রেমী এই শহরটিকে গুপ্তচর সিনেমার স্বর্গ হিসেবেও বিবেচনা করেন।
আসুন, লন্ডনের কিছু উল্লেখযোগ্য স্থান সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক, যেখানে বিভিন্ন বিখ্যাত স্পাই সিনেমার শুটিং হয়েছে:
- ট্রাফালগার স্কয়ার: জন ন্যাশের নকশা করা এই স্থানটি (১৮৪৪) লন্ডনের অন্যতম পরিচিত একটি ল্যান্ডমার্ক। এখানে নেপোলিয়নের বিরুদ্ধে ব্রিটিশ নৌবাহিনীর বিজয়ের স্মৃতিস্বরূপ নেলসনের স্তম্ভ রয়েছে। ‘মিশন: ইম্পসিবল – ডেড রেকনিং’ সিনেমার শুটিং-এর জন্য এই স্থানটি ব্যবহৃত হয়েছে।
- ফার্মিলো বিল্ডিং: ক্লার্কেনওয়েলের এই ভিক্টোরিয়ান যুগের (১৮৬৮) বিল্ডিংটি ‘মিশন: ইম্পসিবল: রোগ নেশন’ (Mission: Impossible – Rogue Nation) ছবিতে ইথান হান্টের দলের সদর দপ্তর হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছিল।
- সেন্ট পলস ক্যাথিড্রাল: স্যার ক্রিস্টোফার রেনের তৈরি এই বিখ্যাত গির্জাটি (১৭১০) ‘মিশন: ইম্পসিবল – ফলআউট’ (Mission: Impossible – Fallout) ছবিতে দেখা যায়। এখানে টম ক্রুজকে একটি ঝুঁকিপূর্ণ দৃশ্যে অভিনয় করতে দেখা গেছে।
- লেস অ্যাম্বাসেডর ক্লাব: জেমস বন্ড সিরিজের প্রথম ছবি ‘ড. নো’ (Dr. No)-এর একটি দৃশ্যে এই ক্লাবে বন্ডকে দেখা যায়। এটি একটি ক্যাসিনো, যা এখনো সদস্যদের জন্য খোলা।
- হোয়াইটহল: ব্রিটিশ সরকারের কেন্দ্র, হোয়াইটহল-ও বন্ড সিরিজের সিনেমার একটি পরিচিত স্থান। এখানে ওয়েস্টমিনস্টার ব্রিজ, বিগ বেন, এবং চার্চিলের দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের বাঙ্কার-এর মতো স্থানগুলো দেখা যায়।
- ন্যাশনাল গ্যালারি: ‘স্কাইফল’ (Skyfall) ছবিতে বন্ড এবং কিউ-কে এখানে দেখা যায়।
- এমআইসিক্স সদর দপ্তর: ব্রিটিশ বৈদেশিক গোয়েন্দা সংস্থার সদর দপ্তরটি (৮৫ আলবার্ট এমব্যাঙ্কমেন্ট) পাঁচটি বন্ড ছবিতে প্রদর্শিত হয়েছে।
- হ্যামারস্মিথ ব্রিজ: ভিক্টোরিয়ান যুগের এই ব্রিজটি ‘নো টাইম টু ডাই’ (No Time to Die) ছবিতে বন্ডের লন্ডনে ফেরার দৃশ্যে ব্যবহৃত হয়েছে।
এগুলো ছাড়াও, ‘দ্য বর্ন আলটিমেটাম’ (The Bourne Ultimatum) সিনেমার ওয়াটারলু স্টেশন, ‘স্লো হর্সেস’ (Slow Horses) সিরিজের ১২৬ অল্ডার্সগেট স্ট্রিট-এর মতো স্থানগুলোও স্পাই সিনেমার শুটিং লোকেশন হিসেবে জনপ্রিয়তা লাভ করেছে।
লন্ডনের এই স্থানগুলো শুধু সিনেমার শুটিং স্পটই নয়, বরং এগুলো শহরের ইতিহাস ও সংস্কৃতিরও গুরুত্বপূর্ণ অংশ। যারা সিনেমা ভালোবাসেন, তারা অবশ্যই এই স্থানগুলো ঘুরে আসতে পারেন।
তথ্য সূত্র: ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক