দীর্ঘকাল ধরে মৃত্যুদণ্ডের আসামি হিসেবে থাকা এক জাপানি নাগরিককে ক্ষতিপূরণ হিসেবে বিশাল অংকের অর্থ প্রদানের ঘটনা ঘটেছে। প্রায় চল্লিশ বছর ধরে মৃত্যুদণ্ডের আসামি হয়ে কারাভোগের পর অবশেষে নির্দোষ প্রমাণিত হওয়ায়, দেশটির আদালত তাকে ১.৪ মিলিয়ন মার্কিন ডলার ক্ষতিপূরণ দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে।
বাংলাদেশি মুদ্রায় যা প্রায় ১৫ কোটি টাকার সমান।
ইওয়াও হাকামাদা নামের ৮৯ বছর বয়সী এই ব্যক্তি ১৯৬৮ সালে একটি নৃশংস হত্যাকাণ্ডের দায়ে অভিযুক্ত হন। যদিও তিনি বরাবরই তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ অস্বীকার করে আসছিলেন এবং পুলিশের বিরুদ্ধে মিথ্যা সাক্ষ্য দেওয়ার অভিযোগ তুলেছিলেন।
হাকামাদার দাবি ছিল, পুলিশ তাকে দোষী সাব্যস্ত করার জন্য মিথ্যা প্রমাণ তৈরি করেছে এবং স্বীকারোক্তি আদায়ের জন্য শারীরিক নির্যাতন করেছে।
দীর্ঘদিন ধরে বিশ্বের সবচেয়ে বেশি সময় ধরে মৃত্যুদণ্ডের আসামি হিসেবে পরিচিত ছিলেন হাকামাদা। ডিএনএ পরীক্ষার মাধ্যমে তার নির্দোষ প্রমাণ হয় এবং মুক্তি পান তিনি।
জানা যায়, যে রক্তমাখা কাপড়কে প্রমাণ হিসেবে ব্যবহার করে তাকে দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছিল, সেটি আসলে ঘটনার অনেক পরে সেখানে রাখা হয়েছিল।
জাপানের স্থানীয় সংবাদমাধ্যম এনএইচকে-এর তথ্য অনুযায়ী, ক্ষতিপূরণের এই অর্থ হাকামাদার কারাবাসের প্রতিটি দিনের জন্য প্রায় ৮৫ মার্কিন ডলারের সমান।
শুজুওকা জেলা আদালত নিশ্চিত করেছে যে, হাকামাদাকে ২১৭ মিলিয়নেরও বেশি ইয়েন ক্ষতিপূরণ হিসেবে দেওয়া হয়েছে।
তার আইনজীবী হিদেও ওগাওয়া এই ক্ষতিপূরণকে জাপানে একটি মিথ্যা মামলার কারণে দেওয়া সর্বোচ্চ ক্ষতিপূরণ হিসেবে উল্লেখ করেছেন।
তবে তিনি আরও যোগ করেন যে, এই ক্ষতিপূরণ হাকামাদার জীবনের ক্ষতি পূরণ করতে পারবে না। আইনজীবীর মতে, “সরকার এমন একটি ভুল করেছে যা ২০০ মিলিয়ন ইয়েন দিয়েও পূরণ করা সম্ভব নয়।”
হাকামাদা ১৯৬১ সালে পেশাদার বক্সিং থেকে অবসর গ্রহণ করেন এবং পরবর্তীতে শিজুওকাতে একটি সয়াবিন প্রক্রিয়াকরণ কারখানায় কাজ করতেন।
১৯৬৫ সালে তার বস, বসের স্ত্রী এবং তাদের দুই সন্তানকে হত্যার দায়ে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।
শুরুর দিকে হাকামাদা তার দোষ স্বীকার করলেও পরে তিনি তার বক্তব্য পরিবর্তন করেন।
তিনি অভিযোগ করেন, পুলিশ তাকে মারধর ও ভয় দেখিয়ে স্বীকারোক্তি দিতে বাধ্য করেছিল।
হাকামাদার বোন, যিনি দীর্ঘদিন ধরে তার মুক্তির জন্য লড়াই করেছেন, সিএনএন-কে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে জানান, দশকের পর দশক ধরে কারাবাসের কারণে তার ভাইয়ের মানসিক স্বাস্থ্যের অপূরণীয় ক্ষতি হয়েছে।
তিনি বলেন, “ইওয়াও তার নিজস্ব জগতে বাস করেন। মাঝে মাঝে তিনি হাসেন, তবে সেটি তার বিভ্রমের কারণে… আমরা ইওয়াওয়ের সাথে বিচার প্রক্রিয়া নিয়ে আলোচনা করিনি, কারণ বাস্তবতা উপলব্ধি করার মতো অবস্থায় তিনি নেই।”
জাপানের বিচারব্যবস্থা বিশ্বে একটি বিশেষ স্থান রাখে, যেখানে দোষী সাব্যস্তের হার ৯৯ শতাংশ।
এই ঘটনার পরে, জাপানে মৃত্যুদণ্ড বিলোপের দাবি আরও জোরালো হয়েছে।
তথ্য সূত্র: সিএনএন