লস অ্যাঞ্জেলেসের ভয়াবহ দাবানল, সেখানকার অগ্নিনির্বাপক কর্মীদের মধ্যে গভীর উদ্বেগের জন্ম দিয়েছে। কয়েক দিন ধরে চলা এই অগ্নিকাণ্ডে পুড়ে ছাই হয়ে গেছে কয়েক হাজার একর জমি, যার মধ্যে ছিল অসংখ্য বাড়িঘর।
আগুন নেভানোর সময় বিপুল পরিমাণ ধোঁয়া ও বিষাক্ত গ্যাসের মধ্যে কাজ করতে হয়েছে দমকল কর্মীদের। আর এর ফলস্বরূপ তাদের শরীরে বাসা বাঁধতে পারে ক্যান্সার—এমনটাই আশঙ্কা করছেন তারা।
লস অ্যাঞ্জেলেস ফায়ার ডিপার্টমেন্টের ৫০ বছর বয়সী জোসেফ ফিল্ড নামের একজন কর্মী ২৫ বছরের বেশি সময় ধরে দমকল বিভাগে কাজ করছেন। তিনি জানান, জানুয়ারিতে হওয়া এই দাবানলের ভয়াবহতা তিনি আগে কখনো দেখেননি।
বাড়িঘরের আসবাবপত্র, গাড়ির ব্যাটারি—সবকিছু পুড়ে নির্গত হওয়া ধোঁয়ার মধ্যে ছিল ক্ষতিকর রাসায়নিক পদার্থ। ফিল্ডসহ অন্যান্য কর্মীদের ধারণা, এই ধোঁয়া তাদের শরীরে ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়াচ্ছে।
এই উদ্বেগের কারণে, লস অ্যাঞ্জেলেস ফায়ার ডিপার্টমেন্টের প্রায় ৩০০ জন কর্মী বর্তমানে একটি গবেষণায় অংশ নিচ্ছেন। ওয়াইল্ডফায়ার কনজারভেন্সি এবং অ্যারিজোনা বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা তাদের রক্ত ও প্রস্রাবের নমুনা সংগ্রহ করছেন।
এছাড়াও, কর্মীদের শরীরে লেগে থাকা দূষিত পদার্থের পরিমাণ মাপার জন্য তারা কব্জিবন্ধনীও ব্যবহার করছেন। গবেষণায় দেখা গেছে, দাবানলে কাজ করা ৪২ জন দমকল কর্মীর শরীরে PFAS নামক কিছু রাসায়নিকের উপস্থিতি স্বাভাবিকের চেয়ে অনেক বেশি।
যদিও এর স্বাস্থ্যগত প্রভাব এখনো নিশ্চিত নয়, তবে গবেষকরা এই বিষয়ে বিস্তারিত জানতে কাজ করছেন। যুক্তরাষ্ট্রের রোগ নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধ কেন্দ্র (CDC) এর একটি গবেষণায় জানা গেছে, লস অ্যাঞ্জেলেসের দাবানলের সময় বাতাসে সীসার পরিমাণ ১১০ গুণ পর্যন্ত বেড়ে গিয়েছিল।
এছাড়া, পরীক্ষায় ক্রোমিয়াম, আর্সেনিক এবং কোবাল্টের মতো ভারী ধাতুর উচ্চমাত্রাও পাওয়া গেছে। আগুনের ধোঁয়ায় থাকা কার্সিনোজেন বা ক্যান্সার সৃষ্টিকারী উপাদানগুলোর কারণে দমকল কর্মীদের মধ্যে ক্যান্সারের ঝুঁকি অনেক বেশি।
ইন্টারন্যাশনাল অ্যাসোসিয়েশন অফ ফায়ারফাইটার্স-এর তথ্য অনুযায়ী, পেশাগত কারণে দমকল কর্মীদের মধ্যে ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর হার অনেক বেশি। এমনকি, ৯/১১-এর সন্ত্রাসী হামলার পর নিউ ইয়র্ক সিটির দমকল কর্মীদের মধ্যেও ক্যান্সারের ঝুঁকি বেড়ে গিয়েছিল।
লস অ্যাঞ্জেলেসের এই দাবানল শুধু বনাঞ্চলের আগুন ছিল না, বরং এর সঙ্গে যুক্ত ছিল শহরের বিভিন্ন ধরনের আবর্জনা ও কাঠামোর পোড়া উপাদান। ফলে, এখানে নির্গত হওয়া ধোঁয়ার মধ্যে ক্ষতিকর উপাদানের মিশ্রণ ছিল অনেক বেশি জটিল।
এই কারণে, এই ধরনের দাবানলের স্বাস্থ্য ঝুঁকি সম্পর্কে আরও বিস্তারিত গবেষণা প্রয়োজন বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। দমকল কর্মীদের ক্যান্সার ঝুঁকি কমাতে বিভিন্ন পদক্ষেপের ওপরও গবেষণা চলছে।
এর মধ্যে রয়েছে উন্নতমানের শ্বাসযন্ত্র তৈরি করা, যা কর্মীদেরকে ক্ষতিকর ধোঁয়া থেকে রক্ষা করতে পারবে। এছাড়া, পোশাকের মাধ্যমে কিভাবে শরীরের ত্বককে দূষণের হাত থেকে বাঁচানো যায়, সে বিষয়েও কাজ করা হচ্ছে।
লস অ্যাঞ্জেলেসের ভয়াবহ দাবানলের স্মৃতি এখনো তাজা। দমকল কর্মীরা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে আগুন নিভিয়েছিলেন, রক্ষা করেছিলেন বহু মানুষের জীবন। কিন্তু তাদের স্বাস্থ্য নিয়ে উদ্বেগ এখনো কাটেনি।
এখন তারা তাকিয়ে আছেন গবেষণার ফলাফলের দিকে, যা হয়তো তাদের ভবিষ্যৎ জীবনের ঝুঁকি সম্পর্কে কিছুটা ধারণা দিতে পারবে। তথ্য সূত্র: সিএনএন