ভাগ্য পরিবর্তনের এক নতুন গল্প! লটারি জেতার পর জীবন বদলে ফেলা এক তরুণীর কাহিনী।
নিউ ইয়র্ক শহরে, যেখানে জীবনযাত্রার খরচ অনেক বেশি, সেখানে একজন তরুণীর জীবন সম্পূর্ণ পাল্টে গেছে লটারি জেতার মাধ্যমে। এই জয়ের ফলে তিনি শুধু আর্থিক স্বাধীনতা পাননি, বরং নতুন করে খুঁজে পেয়েছেন নিজের স্বপ্নগুলো, ভেঙেছেন পুরোনো সম্পর্কের বাঁধন, এবং শুরু করেছেন আত্ম-অনুসন্ধানের এক নতুন যাত্রা।
আলিসা মোসলে নামের এই তরুণী, যিনি সম্প্রতি লটারি জিতেছেন, জানাচ্ছেন যে, এই জয়ের ফলে তিনি যে নিরাপত্তা ও আত্মবিশ্বাস লাভ করেছেন, তা দামি পোশাক, ব্যাগ বা জুতার চেয়ে অনেক বেশি মূল্যবান। অপ্রত্যাশিত এই জয়ের পর তিনি তার বাগদান ভেঙে দেন এবং এরপর থেকে বন্ধু ও সম্পর্কের ক্ষেত্রে সচেতনভাবে সিদ্ধান্ত নিতে শুরু করেন।
তিনি এখন তার সময় ও অর্থ উভয়ই খুব বিচক্ষণতার সাথে ব্যবহার করছেন।
আলিসা জানান, “টাকা অবশ্যই সমস্যা সমাধানে সাহায্য করে, তবে এটি জীবনকে একশো ভাগ নিখুঁত করে তোলে না।” লটারি জেতার আগে তিনি বিভিন্ন ধরনের কাজ করেছেন এবং কঠোর পরিশ্রমের মূল্য সম্পর্কে অবগত ছিলেন। তিনি মনে করেন, এই অভিজ্ঞতা তাকে আরও বেশি বাস্তববাদী করেছে।
যদিও আলিসা ঠিক কত টাকা জিতেছেন, তা প্রকাশ করেননি, তবে তিনি জানান, লটারির টিকিট কেনার সিদ্ধান্তটি ছিল সম্পূর্ণ অপ্রত্যাশিত। প্রথমে তিনি তার এই বিজয় প্রকাশ্যে আনতে দ্বিধা বোধ করছিলেন, কিন্তু বন্ধুদের পরামর্শে তিনি তার গল্প সবার সাথে ভাগ করে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন।
সোশ্যাল মিডিয়ায় আলিসার অনুসারীর সংখ্যা বর্তমানে ৩১ হাজারের বেশি। তিনি প্রায়ই “দিনের বেলা কেমন কাটে” (Day in My Life) ধরনের ভিডিও পোস্ট করেন, যেখানে লটারি জেতার পর তার জীবনযাত্রার কিছু চিত্র তুলে ধরেন।
তিনি বলেন, “আমি প্রতিদিন ঘুম থেকে উঠে সৃষ্টিকর্তাকে ধন্যবাদ জানাই। আমি যত বেশি কৃতজ্ঞ হই, ততই আমার ‘আরও চাই’ প্রবণতা কমে যায়। তাই, যখন আমি কিছু খরচ করি, তখন শখের পেছনে বা অভিজ্ঞতার জন্য করি, বস্তুগত জিনিসের পিছনে নয়।”
ফ্যাশন ভালোবাসেন আলিসা। এখন তিনি তার পছন্দের কাজগুলো করার স্বাধীনতা পেয়েছেন। আগে, যখন তিনি একটি সাধারণ চাকরি করতেন, তখন তার এত সময় ছিল না।
তিনি জানান, “ছোটবেলায় সেলাই করতাম, আবার সেই কাজটা করতে পারাটা আমার জন্য খুবই আনন্দের। পোশাক তৈরি, হাতের কাজ, জলরঙ—ছোটবেলার এই শখগুলো আমাকে অনেক আনন্দ দিত, কিন্তু সময়ের অভাবে বড় হওয়ার পর সেগুলো করা হয়নি।”
বর্তমানে আলিসা তার শারীরিক স্বাস্থ্যের দিকেও মনোযোগ দিচ্ছেন। আগে তিনি চিয়ারলিডিং করতেন, কিন্তু কাজের চাপে তা চালিয়ে যাওয়া সম্ভব হয়নি। এখন তিনি নিয়মিত দৌড়ান এবং একটি হাফ ম্যারাথন দৌড়ানোর প্রস্তুতি নিচ্ছেন।
শারীরিক স্বাস্থ্যের পাশাপাশি, আলিসা তার মানসিক শান্তির ওপর প্রভাব ফেলে এমন মানুষ ও অভ্যাসের দিকেও মনোযোগ দিচ্ছেন। তিনি বলেন, “আশ্চর্যজনকভাবে, এই ঘটনার আগে, আমি কিছু বন্ধু এবং সম্পর্ক হারিয়েছি।
এখন মনে হয়, তারা আমার জীবন থেকে চলে গিয়েছিল, কারণ আমি এই অপ্রত্যাশিত সম্পদ পাওয়ার যোগ্য ছিলাম।”
যেসব সম্পর্ক আর তার জন্য উপযুক্ত ছিল না, সেই সম্পর্কগুলো থেকে তিনি বেরিয়ে এসেছেন। এমনকি তার বাগদানও ভেঙে দিয়েছেন। যদিও তিনি তার প্রাক্তন বাগদত্তাকে সম্মান করেন, তবে তিনি মনে করেন, এই মুহূর্তে বিবাহ তার জন্য সঠিক পথ নয়।
আলিসা আরও বলেন, “আমি মনে করি, একজন তরুণী হিসেবে যখন আমি আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী, তখন আমার বিবাহ সম্পর্কে ধারণা বদলে গেছে। বিবাহ কখনও কখনও স্থিতিশীলতার জন্য প্রয়োজনীয় হতে পারে, তবে আমি মনে করি, আমি এখনো পরিবার শুরু করার জন্য প্রস্তুত নই।”
আলিসা তার টিকটক ভিডিওতে ব্যাখ্যা করেছেন যে, তিনি তার বিয়ের পরিকল্পনা বাতিল করেন, বিয়ের মাত্র তিন দিন আগে। তিনি মনে করেন, বিবাহ অনেক সময় মানুষকে অসুখী করে তোলে।
তিনি তার স্বাধীনতাকে মূল্য দেন এবং এমন একটি জীবনে আবদ্ধ হতে চান না, যা তার জন্য সঠিক নয়।
আলিসা বর্তমানে একটি বই পড়ছেন, যেখানে বিবাহের ইতিহাস নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। তিনি বলেন, “বিবাহ সাধারণত ভালোবাসার উপর ভিত্তি করে হয় না, এটি সম্ভবত গত একশো বছরের একটি নতুন ধারণা।
আগে এটি সম্পদ এবং সেইগুলি রক্ষার সাথে সম্পর্কিত ছিল।”
নতুন এই আর্থিক স্বাধীনতা পাওয়ার পর আলিসা বিবাহের আইনি এবং আর্থিক দিকগুলো সম্পর্কে সচেতন।
তিনি বলেন, “সম্পর্কে থাকা ভালো, প্রেমে পড়া ভালো, তবে যখন আপনি আইনি ব্যবস্থার সঙ্গে জড়িত হন, তখন আমার মনে হয় না আমার সেই পথে যাওয়ার প্রয়োজন আছে, কারণ আমি বর্তমানে ভালো আছি।”
ভবিষ্যতে আলিসা নিয়মিত ডায়েরি লিখবেন, সঠিক মানুষদের সঙ্গে থাকবেন এবং অতিরিক্ত খরচ করা থেকে নিজেকে বিরত রেখে ভালোভাবে জীবন যাপন করতে চান। তিনি বলেন, “আমার চারপাশে এমন মানুষ আছে, যারা আমার কাছে কিছু চায় না। তারা আমাকে সমর্থন করে এবং আমার সাফল্য দেখে খুশি হয়।”
তথ্য সূত্র: People