প্রয়াত ‘লাইটনিং স্ট্রাইকস’-এর শিল্পী, শোকের ছায়া!

জনপ্রিয় মার্কিন পপ সঙ্গীত শিল্পী, ‘লাইটনিন স্ট্রাইকস’ খ্যাত ল্যু ক্রিস্টির প্রয়াণ।

ষাটের দশকের জনপ্রিয় পপ সঙ্গীত শিল্পী ল্যু ক্রিস্টি, যিনি তাঁর ট্রেডমার্ক ফ্যালসেটো কণ্ঠ এবং ‘লাইটনিন স্ট্রাইকস’ গানের জন্য সুপরিচিত ছিলেন, ৮২ বছর বয়সে মারা গেছেন।

মঙ্গলবার, ১৭ জুন, পেনসিলভানিয়ার পিটসবার্গে নিজের বাড়িতে তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। তাঁর স্ত্রী ফ্রান্সেস্কা এই দুঃখজনক খবরটি নিশ্চিত করেছেন।

ল্যু ক্রিস্টি, যাঁর আসল নাম লুজি আলফ্রেডো জিওভানি সাকো, ১৯৪৩ সালের ১৯শে ফেব্রুয়ারি পেনসিলভানিয়ার গ্লেনউইলার্ডে জন্মগ্রহণ করেন।

১৯৬০-এর দশকের শুরুতে ‘দ্য জিপসি ক্রাইড’ এবং ‘টু ফেইসেস হ্যাভ আই’ এর মতো হিট গান দিয়ে তিনি সঙ্গীত জগতে পরিচিতি লাভ করেন। তাঁর দীর্ঘদিনের সহযোগী, প্রখ্যাত পিয়ানোবাদক ট্যুইলা হারবার্টের সঙ্গে মিলিতভাবে তিনি তাঁর গানের কথা লিখতেন।

ল্যু ক্রিস্টির সবচেয়ে বিখ্যাত গান ছিল ‘লাইটনিন স্ট্রাইকস’। ১৯৬৬ সালে মুক্তি পাওয়া এই গানটি দ্রুত জনপ্রিয়তা লাভ করে এবং বিলবোর্ড হট ১০০ চার্টে এক নম্বর স্থান অধিকার করে।

এই গানটি ক্রিস্টির ২৩তম জন্মদিনে শীর্ষে উঠেছিল। গানের নাটকীয় সুর এবং ক্রিস্টির অনন্য ফ্যালসেটো কণ্ঠের কারণে এটি দ্রুত শ্রোতাদের মন জয় করে। গানটিতে এক তরুণ প্রেম ও বিশ্বাসঘাতকতার মধ্যে দ্বিধাদ্বন্দ্বে পড়া এক যুবকের গল্প ফুটিয়ে তোলা হয়েছিল।

‘লাইটনিন স্ট্রাইকস’ এক মিলিয়নের বেশি কপি বিক্রি হয়েছিল এবং পরবর্তীতে বিভিন্ন চলচ্চিত্র, টেলিভিশন এবং বিজ্ঞাপনে ব্যবহৃত হয়ে এই গানটি সঙ্গীতের ইতিহাসে একটি বিশেষ স্থান করে নেয়।

‘লাইটনিন স্ট্রাইকস’-এর সাফল্যের পর, ক্রিস্টি ‘রাপসোডি ইন দ্য রেইন’ শিরোনামের আরেকটি গান প্রকাশ করেন।

এই গানে কিশোর বয়সে ছেলেমেয়েদের মধ্যে শারীরিক সম্পর্কের ইঙ্গিত ছিল, যার কারণে বেশ কয়েকটি রেডিও স্টেশনে এটি নিষিদ্ধ করা হয়েছিল। পরে এমজিএম রেকর্ডস গানটির একটি পরিবর্তিত সংস্করণ প্রকাশ করে, যা বিলবোর্ড হট ১০০ চার্টে ১৬ নম্বরে জায়গা করে নিতে সক্ষম হয়েছিল।

সংগীত জগৎ থেকে কিছুদিনের বিরতি নিয়ে ক্রিস্টি মার্কিন সেনাবাহিনীতে যোগ দিয়েছিলেন।

১৯৬৯ সালে তিনি ‘আই’ম গনা মেক ইউ মাইন’ গানটি নিয়ে আবার ফিরে আসেন এবং শীর্ষ দশের মধ্যে জায়গা করে নেন।

১৯৭৩ সালে ‘বিয়ন্ড দ্য ব্লু হরাইজন’ গানটি বিলবোর্ডের প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য চার্টে ১২ নম্বরে পৌঁছেছিল এবং ‘রেইন ম্যান’ সিনেমার সাউন্ড track-এও অন্তর্ভুক্ত হয়েছিল।

সত্তরের দশক থেকে নব্বইয়ের দশক পর্যন্ত ক্রিস্টি নিয়মিত গান করেছেন এবং কান্ট্রি থেকে শুরু করে ডিস্কো পর্যন্ত বিভিন্ন ধারায় কাজ করেছেন।

তিনি ‘গোল্ডেন বয়েজ’ ট্যুরের অংশ হিসেবে ষাটের দশকের অন্যান্য কিংবদন্তি শিল্পী ফ্র্যাঙ্কি অ্যাভালন এবং ফ্যাবিয়ানের সঙ্গে নিয়মিতভাবে কনসার্ট করেছেন।

২০১৫ সালে তিনি ‘ড্রাইভ-ইন ড্রিমস’ সহ নতুন কিছু গান প্রকাশ করেন।

ল্যু ক্রিস্টি তাঁর স্বতন্ত্র কণ্ঠের জন্য পরিচিত ছিলেন, যেখানে ডু-ওপ, পপ এবং রক সঙ্গীতের মিশ্রণ ছিল। তাঁর এই কণ্ঠ পরবর্তীকালে ফ্যালসেটো নির্ভর শিল্পীদের জন্য পথ খুলে দিয়েছিল, যেমন জাস্টিন টিম্বারলেক ও বেনসন বুন।

২০২০ সালে এক সাক্ষাৎকারে ক্রিস্টি তাঁর ফ্যালসেটো কণ্ঠ সম্পর্কে বলেছিলেন, “আমার মনে হয়, ছোটবেলায় আমার গলার স্বর এমনিতেই উঁচু ছিল। বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে আমার কণ্ঠের পরিবর্তন হলেও আমি উঁচু স্বরটা হারাইনি।”

ল্যু ক্রিস্টির পরিবারে স্ত্রী ফ্রান্সেস্কা ছাড়াও এক কন্যা রয়েছেন। তাঁর পুত্র ক্রিস্টোফার ২০১৪ সালে মারা যান।

তথ্য সূত্র: পিপল

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *