লুইজিয়ানার কংগ্রেস আসন: রায় দেবে সুপ্রিম কোর্ট, কী হতে চলেছে?

যুক্তরাষ্ট্রের সুপ্রিম কোর্ট লুইজিয়ানার নির্বাচনী মানচিত্র পর্যালোচনা করতে যাচ্ছে, যা জাতিগত বিভাজন সম্পর্কিত উদ্বেগের সৃষ্টি করেছে। রাজ্যটিতে কংগ্রেসের আসনগুলোর সীমানা নির্ধারণ নিয়ে চলমান আইনি জটিলতা এই পর্যালোচনার মূল কারণ। বিষয়টি ২০২৬ সালের নির্বাচনের ফলাফলের ওপরও প্রভাব ফেলতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

মূলত, ফেডারেল আদালত লুইজিয়ানাকে নির্দেশ দেয়, রাজ্যের মোট ছয়টি জেলার মধ্যে দ্বিতীয় একটি জেলায় কৃষ্ণাঙ্গ জনগোষ্ঠীর সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিশ্চিত করতে হবে। এর পরই বিতর্কের সূত্রপাত হয়। শ্বেতাঙ্গ ভোটারদের একটি দল আদালতের এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে মামলা করে।

তাদের দাবি, নতুন করে জেলার সীমানা নির্ধারণের ক্ষেত্রে জাতিগত পরিচয়কে অতিরিক্ত গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে, যা সংবিধানের পরিপন্থী।

লুইজিয়ানার কর্মকর্তাদের মধ্যে এই বিষয় নিয়ে গভীর হতাশা দেখা যাচ্ছে। তাদের বক্তব্য অনুযায়ী, রাজ্যের মানুষ জানে না, তারা কোন কংগ্রেসনাল ম্যাপের অধীনে বসবাস করবে।

এই মামলার শুনানিতে বর্ণ ও নির্বাচনী এলাকার সীমানা নির্ধারণ সংক্রান্ত গুরুত্বপূর্ণ কিছু প্রশ্ন উঠে আসবে। ১৯৬৫ সালের ঐতিহাসিক ভোটাধিকার আইন (Voting Rights Act) অনুযায়ী, রাজ্যগুলোকে সংখ্যালঘুদের ভোটাধিকার রক্ষার বিষয়টি নিশ্চিত করতে হয়।

তবে একইসঙ্গে, সংবিধানের ‘সমান অধিকারের ধারা’ (equal protection clause) অনুযায়ী, কোনো রাজ্য কেবল একটি নির্দিষ্ট জাতিগোষ্ঠীর ভিত্তিতে নির্বাচনী এলাকার সীমানা তৈরি করতে পারে না। এই দুইয়ের মধ্যেকার দ্বন্দ্বই মামলার মূল বিষয়।

যুক্তরাষ্ট্রের সুপ্রিম কোর্ট সম্ভবত এই মামলার মাধ্যমে ফেডারেল আদালতগুলোকে রাজনৈতিক বিভাজন সংক্রান্ত বিষয়গুলো থেকে দূরে রাখতে চাইছে। যেমনটা তারা ২০১৯ সালের একটি রায়ে করেছিল। তবে, কৃষ্ণাঙ্গ জনগোষ্ঠীর অধিকার রক্ষা বিষয়ক সংগঠনগুলো এই ধরনের সিদ্ধান্তের বিরোধীতা করছে।

তাদের মতে, এর ফলে ভবিষ্যতে বৈষম্যমূলক নির্বাচনী এলাকার বিরুদ্ধে মামলা করা কঠিন হয়ে পড়বে।

আদালতের এই সিদ্ধান্তের কারণে লুইজিয়ানার বর্তমান কংগ্রেস সদস্য ক্লিও ফিল্ডসের রাজনৈতিক ভবিষ্যৎও অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। কারণ, আদালতের রায়ের পর যদি মানচিত্র পরিবর্তন করার প্রয়োজন হয়, তবে ২০২৬ সালের নির্বাচনের আগে তা করা হতে পারে।

বর্তমানে, লুইজিয়ানার জনসংখ্যার প্রায় এক-তৃতীয়াংশ কৃষ্ণাঙ্গ হওয়া সত্ত্বেও, রাজ্যের প্রতিনিধি পরিষদে তাদের প্রতিনিধিত্ব ছিল খুবই কম। নতুন করে জেলার সীমানা নির্ধারণের ফলে যদি কৃষ্ণাঙ্গ ভোটারদের সংখ্যাগরিষ্ঠতা বাড়ে, সেক্ষেত্রে তাদের রাজনৈতিক ক্ষমতা বৃদ্ধি পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

এই মামলার রায় শুধু লুইজিয়ানার জন্যই নয়, বরং যুক্তরাষ্ট্রের অন্যান্য রাজ্যের জন্যও গুরুত্বপূর্ণ হতে পারে। কারণ, এর মাধ্যমে ভবিষ্যতে নির্বাচনী এলাকার সীমানা নির্ধারণের ক্ষেত্রে জাতিগত পরিচয়কে কীভাবে বিবেচনা করা হবে, সেই বিষয়ে একটি দিকনির্দেশনা পাওয়া যাবে।

তথ্য সূত্র: সিএনএন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *