লুভরে বিপর্যয়! কর্মীদের বিদ্রোহে বন্ধ বিশ্বখ্যাত জাদুঘর

বিশ্বের অন্যতম জনপ্রিয় জাদুঘর, ফ্রান্সের ল্যুভর, কর্মীদের প্রতিবাদের জেরে সোমবার বন্ধ করে দেওয়া হয়। সাধারণত যুদ্ধ অথবা বড় ধরনের দুর্যোগের সময় এই জাদুঘর বন্ধ থাকে, কিন্তু এবার কর্মীদের কর্মপরিবেশ এবং অতিরিক্ত দর্শনার্থীর চাপ সামলাতে না পারার কারণে এমনটা ঘটেছে।

লিওনার্দো দ্য ভিঞ্চির মোনালিসা সহ হাজারো মূল্যবান শিল্পকর্মের এই সংগ্রহশালা, পর্যটকদের কাছে এক আকর্ষণীয় গন্তব্য। কিন্তু অতিরিক্ত পর্যটকের চাপে এখানকার কর্মীরা অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছেন।

কর্মীরা জানান, জাদুঘরের কর্মী সংকট, দর্শনার্থীদের উপচে পড়া ভিড় এবং কাজের খারাপ পরিবেশের কারণে তারা অতিষ্ঠ। পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে, কাজ করা তাদের জন্য দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে।

প্রতিদিন প্রায় ২০ হাজার মানুষ মোনালিসা’র ছবি দেখার জন্য ভিড় করেন। এই কারণে অনেক সময় অন্যান্য মাস্টারপিসগুলো দেখার সুযোগ থেকে বঞ্চিত হন দর্শনার্থীরা।

একজন দর্শক ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, “এখানে ছবি দেখার চেয়ে সেলফি তোলার হিড়িক বেশি। ধাক্কাধাক্কি আর গরমের মধ্যে ছবি দেখতে ইচ্ছে করে না।”

ল্যুভর কর্তৃপক্ষের মতে, গত বছর জাদুঘরে ৮৭ লক্ষ দর্শক এসেছিলেন, যা তাদের ধারণক্ষমতার দ্বিগুণেরও বেশি। প্রতিদিন ৩০ হাজার দর্শক প্রবেশের অনুমতি দেওয়া হলেও, কর্মীদের জন্য পরিস্থিতি সামলানো কঠিন হয়ে পড়েছে।

বাথরুম এবং বিশ্রাম নেওয়ার জায়গার অভাব, সেই সঙ্গে গরমের কারণে অনেক সময় দর্শনার্থীদের ভোগান্তি পোহাতে হয়। কর্মীদের অভিযোগ, কর্তৃপক্ষের কাছে সমস্যার সমাধানে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়ার দাবি জানালেও, তারা কোনো সাড়া পাননি।

জাদুঘরের সংস্কারের জন্য ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল ম্যাক্রোঁ একটি দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা ঘোষণা করেছেন, যার নাম দেওয়া হয়েছে ‘ল্যুভর নিউ রেনেসাঁ’। এই প্রকল্পের অধীনে মোনালিসার জন্য আলাদা একটি কক্ষ তৈরি করা হবে এবং দর্শনার্থীদের জন্য সময়-নির্ধারিত টিকিট ব্যবস্থা চালু করা হবে।

এছাড়াও, ২০৩১ সালের মধ্যে সেইন নদীর কাছে নতুন একটি প্রবেশপথ তৈরির পরিকল্পনাও রয়েছে। এই সংস্কারের জন্য ৭০০ থেকে ৮০০ মিলিয়ন ইউরো (বর্তমান বিনিময় হার অনুযায়ী প্রায় ৮ হাজার থেকে ৯ হাজার কোটি টাকার কাছাকাছি) খরচ হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

তবে কর্মীদের মতে, দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনার চেয়ে তাদের এখনই কিছু সুযোগ-সুবিধা প্রয়োজন। তারা চান, দ্রুত কর্মী নিয়োগ করা হোক এবং কাজের পরিবেশ উন্নত করা হোক।

কর্তৃপক্ষের উদাসীনতার কারণে কর্মীদের মধ্যে অসন্তোষ বাড়ছে। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে যদি আমরা দেখি, তাহলে অনেক ঐতিহাসিক স্থানেও একই ধরনের সমস্যা দেখা যায়।

জনবল সংকট, পর্যটকদের চাপ এবং রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে অনেক ঐতিহ্যবাহী স্থান তাদের আকর্ষণ হারাচ্ছে। ল্যুভরের এই ঘটনা বিশ্বজুড়ে পর্যটন কেন্দ্রগুলোতে দর্শক ব্যবস্থাপনা এবং কর্মী সুরক্ষার বিষয়টি নতুন করে ভাবতে বাধ্য করবে।

তথ্য সূত্র: এসোসিয়েটেড প্রেস

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *