লুভরে দুঃসাহসিক চুরি: হারানো রত্ন কি ফিরবে না?

প্যারিসের বিশ্ববিখ্যাত লুভর জাদুঘরে দুঃসাহসিক এক চুরির ঘটনা ঘটেছে। রবিবার রাতের আঁধারে দুর্বৃত্তরা জাদুঘরের অত্যন্ত মূল্যবান কিছু ঐতিহাসিক অলঙ্কার লুঠ করে নিয়ে গেছে, যা নেপোলিয়নের সময়কালের ফরাসি রাজপরিবারের ব্যবহৃত সামগ্রীর অংশ ছিল।

ঘটনার পর জাদুঘরটি সোমবার বন্ধ করে দেওয়া হয় এবং তদন্ত এখনো চলছে। তবে বিশেষজ্ঞরা আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন যে, চুরি যাওয়া জিনিসগুলো সম্ভবত আর উদ্ধার করা সম্ভব হবে না।

জানা গেছে, চোরেরা একটি ট্রাকে করে আনা মই ব্যবহার করে লুভরের ‘অ্যাপোলো গ্যালারি’র জানালা দিয়ে ভেতরে প্রবেশ করে। এই গ্যালারিটি তার অসাধারণ কারুকার্যের জন্য সুপরিচিত।

তারা বিশেষ সরঞ্জাম, যেমন – অ্যাঙ্গেল গ্রাইন্ডার ও ব্লো টর্চ ব্যবহার করে অত্যন্ত সুরক্ষিত দুটি শোকেস ভেঙে মূল্যবান অলঙ্কারগুলো চুরি করে। পুরো অপারেশনটি মাত্র সাত মিনিটের মধ্যে সম্পন্ন হয়।

চুরি হওয়া নয়টি মূল্যবান জিনিসের মধ্যে আটটিরই কোনো হদিশ পাওয়া যায়নি। এর মধ্যে রয়েছে কুইন মারি-অ্যামেলি ও কুইন হর্টেনসের পরিধান করা একটি বিশেষ মুকুট ও নেকলেস।

ফরাসি বিচারমন্ত্রী জেরাল্ড ডারমানিন এই ঘটনার পর জাদুঘরের নিরাপত্তা ব্যবস্থার দুর্বলতা স্বীকার করেছেন। তিনি বলেন, “উইন্ডোগুলো সুরক্ষিত ছিল না, এমনকি একটি বাস্কেট লিফটও রাস্তায় ছিল।

এটা নিশ্চিত যে আমরা ব্যর্থ হয়েছি।” তিনি আরও যোগ করেন, “পুরো ফরাসি জাতি যেন আজ লুণ্ঠিত হয়েছে এমন অনুভব করছে।”

ফরাসি সিনেটের সদস্য নাতালি গুলেট বিবিসি রেডিওকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে জানান, চুরি যাওয়া অলঙ্কারগুলো উদ্ধারের সম্ভাবনা খুবই কম। তার মতে, “এই মূল্যবান অলঙ্কারগুলো ভেঙে ফেলা হবে এবং সম্ভবত তা কালোবাজারে বিক্রি করে দেওয়া হবে, যা অবৈধ অর্থ পাচারের একটি সহজ উপায়।”

তিনি মনে করেন, এই ঘটনার সঙ্গে সুসংগঠিত কোনো অপরাধ চক্র জড়িত থাকতে পারে।

লুভর জাদুঘরে এমন একটি ঘটনাকে ফ্রান্সের জন্য একটি ‘জাতীয় বিপর্যয়’ হিসেবেও উল্লেখ করেছেন অনেকে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই ধরনের চুরির ঘটনা ফ্রান্সের ইতিহাস ও সংস্কৃতির উপর একটি গভীর আঘাত।

আর্ট রিকভারি ইন্টারন্যাশনালের প্রধান ক্রিস মারিনেলো মনে করেন, ফরাসি পুলিশের হাতে খুব সীমিত সময় আছে চুরি যাওয়া জিনিসগুলো উদ্ধারের জন্য। তিনি বিবিসি ওয়ার্ল্ড সার্ভিসকে জানান, “যদি চোরদের আগামী ২৪ থেকে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে ধরা না যায়, তাহলে সম্ভবত মূল্যবান জিনিসগুলো অনেক আগেই গন্তব্যে পৌঁছে যাবে।”

তিনি আরও যোগ করেন, “চোরেরা এগুলো অক্ষত রাখবে না, বরং ভেঙে মূল্যবান ধাতু গলিয়ে ফেলবে এবং পাথরগুলো পুনরায় কেটে তাদের অপরাধের প্রমাণ লোপাটের চেষ্টা করবে। সেক্ষেত্রে, এইসব অলঙ্কার খুঁজে বের করার আর কোনো উপায় থাকবে না।”

তথ্য সূত্র: সিএনএন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *