ভালোবাসা ও বাস্কেটবল: ভালোবাসার গল্প নাকি বিষাক্ত সম্পর্কের প্রতিচ্ছবি?
নব্বই দশকের শেষের দিকে মুক্তি পাওয়া সিনেমা ‘লাভ অ্যান্ড বাস্কেটবল’ (Love & Basketball) আজও অনেকের মনে গেঁথে আছে। সিনেমায় কুইন্সি ও মনিকার প্রেম, বাস্কেটবল খেলার প্রতি তাদের ভালোবাসা, সম্পর্কের টানাপোড়েন—এসব কিছুই দর্শককে আলোড়িত করেছিল।
কিন্তু সময়ের সাথে সাথে এই সিনেমাটির সম্পর্কের ধরন নিয়ে নতুন করে আলোচনা শুরু হয়েছে। অনেকে মনে করেন, কুইন্সি ও মনিকার সম্পর্ক আদতে ছিল বিষাক্ত।
কথাটি উড়িয়ে দেওয়া যায় না। তাদের ভালোবাসার গল্পে কিছু ত্রুটি ছিল, যা সুস্থ সম্পর্কের সংজ্ঞা থেকে দূরে। কিন্তু তাই বলে কি ভালোবাসার অস্তিত্ব ছিল না? অবশ্যই ছিল, হয়তো তা আদর্শ ছিল না, কিন্তু সেখানে ভালোবাসার গভীরতা ছিল।
আসলে, কুইন্সি বা মনিকা—কাউকেই হয়তো সুস্থ সম্পর্কের ধারণা দেওয়ার মতো পারিবারিক পরিবেশ ছিল না। মনিকার কথাই ধরুন। সে ছিল স্বাধীনচেতা, দৃঢ়চেতা এবং উচ্চাকাঙ্ক্ষী।
কিন্তু আমরা দেখি, তার মা সংসারের চাপে নিজের স্বপ্ন বিসর্জন দিয়ে স্বামীর অনুগত হয়ে থাকছেন। মনিকার চরিত্রে এই দ্বিধা ছিল স্পষ্ট। একদিকে, নিজের ক্যারিয়ারের স্বপ্নপূরণ করতে চাওয়া, অন্যদিকে, কুইন্সির সঙ্গে সম্পর্কের কিছু অস্বাস্থ্যকর দিকগুলো হয়তো সে বুঝতেই পারেনি।
আর বুঝলেও সে বিষয়ে পরামর্শ দেওয়ার মতো কাউকে কাছে পায়নি।
অন্যদিকে, কুইন্সির বাবা ছিলেন বাস্কেটবলের নামকরা খেলোয়াড়। বাবার স্বপ্ন ছিল, ছেলে তার পথ অনুসরণ করুক। যদিও তিনি ছেলেকে পড়াশোনা শেষ করার জন্য চাপ দিতেন, কিন্তু একজন স্বামী হিসেবে তিনি ছিলেন চরম ব্যর্থ।
পরিবারের প্রতি তার কোনো দায়বদ্ধতা ছিল না, বরং একাধিক নারীর সঙ্গে তার সম্পর্ক ছিল।
এমন পরিস্থিতিতে কুইন্সি ও মনিকার সম্পর্ক ভালো থাকার কথা নয়। কুইন্সির মধ্যে আবেগগত বুদ্ধিমত্তার অভাব ছিল। ভালোবাসার প্রকাশ করতে গিয়ে সে বলত, ‘এসব মেয়ের মধ্যে তুই-ই আসল’। বিষয়টি খুবই দুঃখজনক।
এখানে আরেকটি বিষয় মনে রাখতে হবে। কুইন্সি ও মনিকা একে অপরের প্রথম প্রেম ছিল। তাদের প্রথম দেখা হওয়ার দৃশ্যটি এখনো অনেকের মনে গেঁথে আছে।
১১ বছর বয়সে কুইন্সি যখন মনিকাকে প্রেম প্রস্তাব দেয়, তখন তারা সম্পর্কের শর্ত নিয়ে আলোচনা করে, যেন কোনো ব্যবসায়িক চুক্তি হচ্ছে। সেই দৃশ্য থেকেই তাদের সম্পর্কের ভবিষ্যৎ ইঙ্গিত পাওয়া যায়।
তবে এতকিছুর পরেও তাদের মধ্যে একটা গভীর রোমান্টিকতা ছিল, যা অস্বীকার করা যায় না। আমার প্রিয় দৃশ্যগুলোর একটি হলো, যখন কুইন্সির বাবা-মায়ের ঝগড়া চরম আকার নেয়, তখন মনিকা কুইন্সির আশ্রয়স্থল হয়।
গভীর রাতে কুইন্সি এসে মনিকার ঘরের জানালায় ধাক্কা দেয়। কোনো কথা না বলেই মনিকা তাকে ঘরে জায়গা দেয়, কম্বল দেয়, বালিশ দেয়, এমনকি মেঝেতে ঘুমানোরও ব্যবস্থা করে।
আমার মনে হয়, এমন আরও অনেক দৃশ্য থাকলে ভালো হতো। কিন্তু এই একটি দৃশ্য তাদের গভীর বোঝাপড়ার প্রমাণ দেয়। তারা একে অপরের ভালো-মন্দ বুঝত, যা অন্যদের পক্ষে বোঝা সম্ভব ছিল না।
অনেকের কাছে সিনেমাটির সবচেয়ে বিতর্কিত দৃশ্য ছিল, যখন কুইন্সির বিয়ের মাত্র দুই সপ্তাহ আগে মনিকা তাকে ভালোবাসার কথা জানায় এবং তার মন পেতে চায়। কিন্তু এখনকার দিনে দাঁড়িয়ে এই দৃশ্যটিকে হয়তো দৃষ্টিকটু মনে হতে পারে।
২০০০ সালে যখন সিনেমাটি মুক্তি পেয়েছিল, তখন ভালোবাসার সংজ্ঞা, সম্পর্ক এবং মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে মানুষের ধারণা আজকের মতো ছিল না। ‘বিষাক্ত সম্পর্ক’, ‘পুরুষতান্ত্রিকতা’, ‘মানসিক নির্যাতন’-এর মতো শব্দগুলো তখনো এতটা পরিচিত ছিল না।
মনোবিজ্ঞানীদের কাছে যাওয়াটাও সমাজের চোখে ভালো চোখে দেখা হতো না। তাই সেই সময়ের দর্শক সিনেমাটিকে ভিন্নভাবে গ্রহণ করেছে।
আমি কখনোই বলব না ‘লাভ অ্যান্ড বাস্কেটবল’ সম্পর্কের আদর্শ উদাহরণ। তবে সিনেমাটি দর্শকদের হৃদয়ে বিশেষ স্থান করে নিয়েছে, কারণ এটি ভালোবাসার গভীরতা, আকাঙ্ক্ষা এবং সম্পর্কের জটিলতাগুলো তুলে ধরেছিল।
হয়তো এখানে আদর্শ প্রেম ছিল না, কিন্তু প্রতিটি ভালোবাসার গল্পই তো আলাদা।
তথ্য সূত্র: পিপল