পাকায়েতার ক্যারিয়ারে শঙ্কা: জীবন-মরণ লড়াই?

শিরোনাম: স্পট-ফিক্সিং মামলায় ওয়েস্ট হ্যামের তারকা লুকাস পাকেতার ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত

ফুটবল বিশ্বে আবারও ফিক্সিংয়ের অভিযোগ। এবার সন্দেহের তালিকায় ওয়েস্ট হ্যাম ইউনাইটেডের ব্রাজিলিয়ান মিডফিল্ডার লুকাস পাকেতা। তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ, তিনি ইচ্ছাকৃতভাবে হলুদ কার্ড দেখার চেষ্টা করেছেন এবং এর মাধ্যমে বাজি বাজারের কারসাজি করেছেন। এই অভিযোগ প্রমাণ হলে ফুটবল থেকে আজীবন নির্বাসিত হওয়ার সম্ভবনা রয়েছে তাঁর।

ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগে (Premier League) খেলোয়াড়দের বিরুদ্ধে ওঠা নানা অভিযোগের মধ্যে এই মামলাটি অন্যতম। ফুটবল অ্যাসোসিয়েশন (FA) জানিয়েছে, গত বছর ২৩শে মে পাকেতার বিরুদ্ধে চারটি স্পট-ফিক্সিং এবং দুটি তদন্তে অসহযোগিতার অভিযোগ আনা হয়েছে। অভিযোগ প্রমাণিত হলে তাঁর উপর আজীবনের জন্য ফুটবল খেলার উপর নিষেধাজ্ঞা আসতে পারে।

অভিযোগপত্রে বলা হয়েছে, পাকেতা ‘ইচ্ছাকৃতভাবে রেফারির সিদ্ধান্ত প্রভাবিত করার চেষ্টা করেছেন’। এর মাধ্যমে বাজি বাজারে কিছু ব্যক্তি বা গোষ্ঠীকে লাভবান করতে চেয়েছেন তিনি। এই অভিযোগের কারণে আসন্ন বিশ্বকাপ বাছাইপর্বের জন্য ব্রাজিল দল থেকে নিজেকে সরিয়ে নিয়েছেন পাকেতা। তিনি বর্তমানে তাঁর নির্দোষ প্রমাণ করার জন্য মুখিয়ে আছেন।

ওয়েস্ট হ্যামের এক সূত্র জানিয়েছে, “লুকাস ভালোভাবেই পরিস্থিতি সামাল দিচ্ছেন। তিনি নির্দোষ এবং বিশ্বাস করেন যে তিনি মুক্তি পাবেন। তবে এই মামলাটি তাঁর জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। তিনি ফুটবল খেলতে এবং পরিবারের সঙ্গে সময় কাটাতে চান।”

অনুসন্ধানে জানা গেছে, ২০২২ ও ২০২৩ সালে চারটি প্রিমিয়ার লিগ ম্যাচে পাকেতাকে হলুদ কার্ড দেখানোর জন্য প্রায় ৬০টি বাজি ধরা হয়েছিল। এফএ’র ধারণা, পাকেতা তাঁর বন্ধু ও পরিবারের সদস্যদের অর্থ উপার্জনের জন্য ইচ্ছাকৃতভাবে হলুদ কার্ড দেখিয়েছেন।

তবে বাজিগুলোর অঙ্ক খুব বড় ছিল না। এফএ’র তদন্তের সঙ্গে যুক্ত একটি সূত্র জানিয়েছে, একটি বাজি ছিল ৭ পাউন্ডের (বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ১০০০ টাকা), যেখানে সর্বোচ্চ বাজি ছিল ৪০০ পাউন্ডের (বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ৫৬ হাজার টাকা)।

এই ঘটনার কারণে ওয়েস্ট হ্যাম বড় ধরনের আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে। ম্যানচেস্টার সিটির সঙ্গে পাকেতার প্রায় ৮০ মিলিয়ন পাউন্ডের (বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ১১ হাজার কোটি টাকা) চুক্তি হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু এফএ’র তদন্ত শুরুর পর সিটি সেই চুক্তি বাতিল করে দেয়।

ঘটনার সূত্রপাত হয় ২০২২ সালের ১২ই আগস্ট বোর্নমাউথের বিপক্ষে ম্যাচের একটি ঘটনাকে কেন্দ্র করে। ম্যাচের ৯৩তম মিনিটে হ্যান্ডবলের কারণে পাকেতাকে হলুদ কার্ড দেখান রেফারি। এছাড়া, এর আগে ফাউল করার কারণেও তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল।

এফএ ১৪ই আগস্ট তদন্ত শুরু করে। পাকেতা সঙ্গে সঙ্গেই তাঁর বিরুদ্ধে ওঠা সকল অভিযোগ অস্বীকার করেন এবং বাজির সঙ্গে তাঁর কোনো সম্পর্ক নেই বলে জানান।

পাকেতার আইনজীবীরা তাঁর পক্ষে যুক্তি তুলে ধরেছেন। তাঁরা বলছেন, বোর্নমাউথের বিপক্ষে খেলার আগে তিনি তৎকালীন ওয়েস্ট হ্যামের ম্যানেজার ডেভিড ময়েসের কাছে খেলতে না চাওয়ার কথা বলেছিলেন, কারণ ম্যানচেস্টার সিটিতে যাওয়ার বিষয়টি ঝুলে ছিল।

তদন্তে জানা গেছে, পাকেতার জন্মস্থান ব্রাজিলের পাকেতা দ্বীপ থেকে বেশিরভাগ বাজি ধরা হয়েছিল। বাজি ধরার জন্য ব্যবহৃত অ্যাকাউন্টগুলোর অধিকাংশই ছিল নতুন খোলা। বাজির বিষয়টি নজরে আসার পর ওয়েস্ট হ্যামের কিট স্পন্সর ‘Betway’ বিষয়টি ইন্টারন্যাশনাল বেটিং ইন্টিগ্রিটি অ্যাসোসিয়েশনকে (IBIA) জানায়।

আইবিআইএ-র অনুসন্ধানে আরও জানা যায়, ২০২২ সালের নভেম্বরে লেস্টার সিটির বিপক্ষে একটি ম্যাচে হলুদ কার্ড দেখার কারণে পাকেতার ওপর বাজি ধরা হয়েছিল। এছাড়া, ২০২৩ সালের মে মাসে লিডস ইউনাইটেডের বিপক্ষে পাওয়া হলুদ কার্ডের ঘটনাও সন্দেহের তালিকায় রয়েছে।

তদন্তের স্বার্থে পাকেতা এফএ-কে তাঁর ফোনের তথ্য, ব্যাংক স্টেটমেন্টসহ প্রয়োজনীয় সব ধরনের সহযোগিতা করেছেন। এমনকি, পুরোনো ফোনটি নষ্ট করে ফেলার কারণেও তিনি তদন্তের আওতায় এসেছেন।

এই বিষয়ে পাকেতা এক বিবৃতিতে বলেছেন, “আমি অত্যন্ত বিস্মিত এবং হতাশ যে এফএ আমার বিরুদ্ধে অভিযোগ এনেছে। আমি তাদের তদন্তে সহযোগিতা করেছি এবং সব তথ্য দিয়েছি। আমি সব অভিযোগ অস্বীকার করছি এবং আমার নাম পরিষ্কার করতে লড়ব।”

পাকেতার আইনজীবী হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন নিক ডি মারকো। এর আগে তিনি লেস্টার সিটিকে প্রিমিয়ার লিগের নিয়ম ভাঙার অভিযোগ থেকে বাঁচাতে সহায়তা করেছিলেন।

তথ্য সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *