বিখ্যাত মার্কিন কমেডিয়ান ও অভিনেত্রী লুসিল বল, যিনি ‘আই লাভ লুসি’ (I Love Lucy) খ্যাত, তাঁর প্রয়াণের ছত্রিশ বছর পরেও আজও মানুষের মনে উজ্জ্বল হয়ে আছেন। তাঁর মৃত্যুর পর কেটে গেছে দীর্ঘ সময়, কিন্তু তাঁর কাজের প্রভাব আজও বিনোদন জগতে বিদ্যমান।
লুসিল বলের জন্ম ১৯১১ সালে, এবং তিনি হলিউডের ইতিহাসে এক উজ্জ্বল নক্ষত্র ছিলেন। তাঁর অভিনয়শৈলী, কৌতুকবোধ, এবং নারী হিসেবে সাফল্যের দৃষ্টান্ত আজও অনেকের কাছে অনুকরণীয়।
‘আই লাভ লুসি’ ছিল তাঁর জীবনের সবচেয়ে বড় সাফল্য, যা বিশ্বজুড়ে কোটি কোটি মানুষের কাছে জনপ্রিয়তা লাভ করে। এই ধারাবাহিকের মাধ্যমে তিনি প্রমাণ করেছিলেন যে একজন নারীও কমেডিতে কতটা সফল হতে পারেন।
১৯৮০ সালের ফেব্রুয়ারিতে তিনি একবার বলেছিলেন, “সত্য না বললে বই লেখা উচিত না। আর সেটা করতে হলে বয়স অন্তত পঁচাশি হতে হয়, তবে আমি এত দিন বাঁচতে চাই না।
১৯৮৯ সালের ২৬শে এপ্রিল, ৭৭ বছর বয়সে এই কিংবদন্তি অভিনেত্রীর জীবনাবসান হয়। তাঁর মৃত্যুর কারণ ছিল গুরুতর স্বাস্থ্য জটিলতা। এর আগে তিনি হৃদরোগে আক্রান্ত হন এবং অস্ত্রোপচারও হয়।
কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত, অস্ত্রোপচারের কয়েক দিন পরেই তাঁর শরীরে আবারও জটিলতা দেখা দেয়, যা তাঁর জীবন কেড়ে নেয়।
লুসিল বল শুধু একজন অভিনেত্রীই ছিলেন না, তিনি ছিলেন একজন সফল প্রযোজকও। তাঁর স্বামী ডেসি আর্নাজের সঙ্গে মিলে তিনি ‘দেসিলু স্টুডিওস’ (Desilu Studios) প্রতিষ্ঠা করেন, যা ছিল হলিউডের ইতিহাসে একটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা।
তিনি প্রথম নারী হিসেবে এই স্টুডিওর প্রধান হন এবং ‘স্টার ট্রেক’ (Star Trek) ও ‘মিশন: ইম্পসিবল’ (Mission: Impossible)-এর মতো জনপ্রিয় টেলিভিশন অনুষ্ঠান তৈরি করেন।
তাঁর প্রয়াণে সারা বিশ্বে শোকের ছায়া নেমে আসে। ভক্তরা তাঁকে শেষ শ্রদ্ধা জানাতে ছুটে আসেন, যা ছিল নজিরবিহীন। তাঁর অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ায় সাধারণ মানুষের ভালোবাসাই প্রমাণ করে তিনি কতটা জনপ্রিয় ছিলেন।
লুসিল বলের অবদান শুধু অভিনয় জগতেই সীমাবদ্ধ ছিল না। তিনি নারীদের জন্য নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছেন, দেখিয়েছেন কীভাবে একজন নারী একই সঙ্গে সফল অভিনেত্রী, প্রযোজক এবং উদ্যোক্তা হতে পারেন।
তাঁর এই সাহস ও দৃষ্টান্ত আজও অনেকের কাছে অনুপ্রেরণা। তাঁর জীবন ও কর্ম নিয়ে নির্মিত হয়েছে বিভিন্ন চলচ্চিত্র ও প্রামাণ্যচিত্র, যা তাঁর স্মৃতিকে বাঁচিয়ে রেখেছে।
তাঁর সম্পর্কে নির্মিত সিনেমা ‘বিইং দ্য রিকার্ডোস’ (Being the Ricardos) এবং প্রামাণ্যচিত্র ‘লুসি এন্ড ডেসি’ (Lucy and Desi) দর্শকদের কাছে আজও জনপ্রিয়। মৃত্যুর পর, তাঁকে ‘প্রেসিডেন্সিয়াল মেডেল অফ ফ্রিডম’ (Presidential Medal of Freedom) সম্মানে সম্মানিত করা হয়, যা তাঁর প্রতি জাতির গভীর শ্রদ্ধার প্রমাণ।
লুসিল বলের হাসি, কৌতুক, এবং অভিনয় আজও মানুষকে আনন্দ দেয়, যা তাঁর শ্রেষ্ঠত্বের প্রমাণ।
তথ্য সূত্র: পিপল