লুই এনরিকে: পিএসজির সাফল্যের পেছনে কার কারিশমা?

প্যারিস সেন্ট জার্মেইয়ের (পিএসজি) দায়িত্বে আসার পর লুইস এনরিকে যেন এক নতুন রূপে ধরা দিয়েছেন। ফরাসি ক্লাবটিকে চ্যাম্পিয়ন্স লিগের ফাইনালে তোলার পেছনে তার কৌশল ও খেলোয়াড় নির্বাচন নিয়ে ফুটবল বিশ্বে চলছে ব্যাপক আলোচনা।

এই স্প্যানিশ কোচের কোচিং ক্যারিয়ার এবং মাঠের বাইরের জীবন কেমন, আসুন সেই বিষয়ে কিছু তথ্য জেনে নেওয়া যাক।

ফুটবল খেলোয়াড় হিসেবে লুইস এনরিকের উত্থান হয় ১৯৮৮ সালে, স্পেনের দ্বিতীয় বিভাগের দল স্পোর্টিং গিজনের হয়ে। ১৯৯১ সালে তিনি যোগ দেন রিয়াল মাদ্রিদে।

সেখানে তিনি লা লিগা, কোপা দেল রে এবং স্প্যানিশ সুপার কাপ জেতেন। তবে খেলোয়াড় হিসেবে প্রত্যাশা অনুযায়ী পারফর্ম করতে পারেননি তিনি।

১৯৯৬ সালে বার্সেলোনায় যোগ দেন এনরিকে। এখানে তিনি তার সেরাটা দেন এবং বার্সার হয়ে লা লিগা, কোপা দেল রে ও স্প্যানিশ সুপার কাপ জেতেন। ২০০৪ সালে খেলোয়াড় জীবনকে বিদায় জানিয়ে কোচিংয়ে আসেন তিনি।

কোচিং ক্যারিয়ারের শুরুতে তিনি বার্সেলোনার ‘বি’ দলের দায়িত্বে ছিলেন। এরপর ইতালির ক্লাব এএস রোমা এবং স্পেনের সেল্টা ভিগোর মতো দলের দায়িত্ব পালন করেন।

তবে সবচেয়ে বড় সাফল্য আসে বার্সেলোনার মূল দলের কোচের দায়িত্ব নিয়ে। ২০১৫ সালে তার অধীনে বার্সেলোনা চ্যাম্পিয়ন্স লিগ জেতে।

সেবার মেসির নেতৃত্বে দল ট্রেবলও (লা লিগা, কোপা দেল রে, চ্যাম্পিয়ন্স লিগ) জয়লাভ করে।

এরপর ২০১৮ সালে স্প্যানিশ জাতীয় দলের কোচের দায়িত্ব পান এনরিকে। ২০২২ বিশ্বকাপের আগে স্পেনকে অন্যতম ফেভারিট হিসেবে ধরা হলেও, তারা শেষ ষোলোতে অপ্রত্যাশিতভাবে মরক্কোর কাছে হেরে যায়।

এরপর তিনি জাতীয় দলের কোচের পদ থেকে সরে দাঁড়ান। অনেকেই ধারণা করেছিলেন, এনরিকে হয়তো ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগের কোনো ক্লাবের দায়িত্ব নিতে পারেন।

কিন্তু সবাইকে অবাক করে দিয়ে তিনি পিএসজির সাথে চুক্তিবদ্ধ হন।

পিএসজির মতো তারকাবহুল একটি দলে এনরিকের প্রধান কাজ ছিল দলটিকে ঢেলে সাজানো। মেসি, নেইমার ও এমবাপ্পের মতো তারকাদের বিদায়ের পর তিনি দলে নতুন খেলোয়াড়দের যুক্ত করেন এবং দলের খেলার ধরনে পরিবর্তন আনেন।

তার অধীনে পিএসজি এখন ইউরোপের অন্যতম আকর্ষণীয় আক্রমণাত্মক দল।

খেলোয়াড়দের ফিটনেসের ওপর এনরিকের বিশেষ নজর রয়েছে। তিনি নিয়মিত শরীরচর্চা করেন এবং খেলোয়াড়দেরও ফিট থাকার পরামর্শ দেন।

মাঠের বাইরে তিনি একজন নিবেদিতপ্রাণ মানুষ। ব্যক্তিগত জীবনে তিনি তার পরিবারের প্রতি খুবই আবেগপ্রবণ।

তার ছোট মেয়ে সানার (৯ বছর বয়সে অস্টিওসারকোমা নামক হাড়ের ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে মারা যায়) সঙ্গে তার গভীর সম্পর্ক ছিল। মেয়ের স্মৃতিতে তিনি একটি ফাউন্ডেশনও তৈরি করেছেন, যা একই রোগে আক্রান্ত শিশুদের সাহায্য করে।

এনরিকের কোচিং দর্শন সবসময়ই আক্রমণাত্মক ফুটবল খেলার দিকে মনোযোগ দেয়। তিনি খেলোয়াড়দের অনুপ্রাণিত করেন এবং তাদের কাছ থেকে সেরাটা বের করে আনতে চেষ্টা করেন।

সম্প্রতি প্রকাশিত একটি প্রামাণ্যচিত্রে এনরিকের জীবন ও কাজের বিভিন্ন দিক তুলে ধরা হয়েছে, যা দর্শকদের কাছে ব্যাপক জনপ্রিয়তা পেয়েছে। সেখানে দেখা যায়, তিনি কিভাবে দলের খেলোয়াড়দের সঙ্গে মিশে যান এবং তাদের খেলা উন্নত করার চেষ্টা করেন।

বর্তমানে, এনরিকের প্রধান লক্ষ্য হলো পিএসজিকে চ্যাম্পিয়ন্স লিগ জেতানো। যদি তিনি সফল হন, তবে এটি হবে তার কোচিং জীবনের আরেকটি মাইলফলক।

তথ্য সূত্র: আল জাজিরা

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *