বিজ্ঞানীরা বলছেন, ফুসফুস এবং হৃদরোগের মতো মারাত্মক অঙ্গের ক্ষতি সারিয়ে তোলার সম্ভাবনা এখন হাতের নাগালে। উন্নত চিকিৎসার মাধ্যমে মানুষের জীবনযাত্রার মান উন্নত করার ক্ষেত্রে এটি একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ হতে পারে।
বর্তমানে, চিকিৎসকেরা সাধারণত রোগের অগ্রগতি ধীর করার চেষ্টা করেন। কিন্তু নতুন এই চিকিৎসা পদ্ধতিগুলো ক্ষতিগ্রস্ত অঙ্গকে সারিয়ে তোলার ওপর জোর দেয়। ক্যালিফোর্নিয়ার একটি গবেষণা প্রতিষ্ঠান, স্ক্রিপস রিসার্চ, এই পদ্ধতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে।
তারা এমন কিছু ওষুধ তৈরি করেছে যা শরীরের নিজস্ব স্টেম সেলকে সক্রিয় করে তোলে। স্টেম সেলগুলি শরীরের টিস্যু তৈরি এবং মেরামতের কারিগর হিসেবে কাজ করে।
চিকিৎসা বিজ্ঞানীরা দীর্ঘদিন ধরে এই বিষয়ে গবেষণা করছেন। স্ক্রিপস রিসার্চের গবেষকরা ফুসফুস, হৃদপিণ্ড, অস্থিসন্ধি এবং চোখের ক্ষতিগ্রস্ত টিস্যু সারানোর জন্য ওষুধ তৈরি করছেন।
তাদের তৈরি করা ওষুধগুলো ক্ষতিগ্রস্ত অঞ্চলের স্টেম সেলগুলিকে সক্রিয় করে তোলে, যা নতুন টিস্যু তৈরি করতে সাহায্য করে। ইঁদুর, শূকর এবং অল্প সংখ্যক মানুষের ওপর এই পদ্ধতির পরীক্ষামূলক প্রয়োগ করা হয়েছে এবং এতে ইতিবাচক ফল পাওয়া গেছে।
স্ক্রিপস রিসার্চের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (CEO) এবং প্রেসিডেন্ট, পিট শুলৎজ জানিয়েছেন, “আমরা আগামী দুই থেকে তিন বছরের মধ্যে ফুসফুস এবং হৃদরোগের ক্ষতি সারিয়ে তুলতে পারব প্রমাণ করতে সক্ষম হব।
হৃদরোগের চিকিৎসায় আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতি দেখা যাচ্ছে। হার্ট অ্যাটাকের পর ক্ষতিগ্রস্ত হৃদপিণ্ডের টিস্যু পুনরায় তৈরি করার জন্য স্ক্রিপস রিসার্চ একটি নতুন ওষুধ তৈরি করেছে।
এই ওষুধটি ইনজেকশনের মাধ্যমে হৃদপিণ্ডের চারপাশে প্রবেশ করানো হয়। এর ফলে হৃদপিণ্ডের ক্ষতিগ্রস্ত অংশে নতুন এবং সুস্থ কোষ তৈরি হয়।
শূকরদের ওপর এই ওষুধ প্রয়োগ করে ভালো ফল পাওয়া গেছে। পরীক্ষার ফলাফলে দেখা গেছে, হৃদপিণ্ডের কার্যকারিতা উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে।
গবেষকরা আশা করছেন, ২০২৭ সাল থেকে মানুষের ওপর এই ওষুধের পরীক্ষামূলক প্রয়োগ শুরু করা যাবে।
তবে, এই চিকিৎসা পদ্ধতি এখনো প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে। গবেষকরা বলছেন, মানুষের শরীরে এই চিকিৎসা নিরাপদ ও কার্যকর কিনা, তা নিশ্চিত করতে আরও অনেক পরীক্ষার প্রয়োজন।
এই চিকিৎসা পদ্ধতি ব্যবহারের ক্ষেত্রে কিছু চ্যালেঞ্জও রয়েছে। যেমন, কোষের অতিরিক্ত বৃদ্ধি বা ক্যান্সার হওয়ার সম্ভাবনা। তবে বিজ্ঞানীরা বলছেন, ছোট আকারের পরীক্ষায় এখন পর্যন্ত তেমন কোনো সমস্যা দেখা যায়নি।
ইউনিভার্সিটি অফ সাউদার্ন ক্যালিফোর্নিয়ার গবেষকরাও স্টেম সেল নিয়ে কাজ করছেন। তারা প্রাপ্তবয়স্কদের রক্ত থেকে স্টেম সেল নিয়ে হৃদপিণ্ডের পেশী কোষ তৈরি করছেন এবং প্রতিস্থাপন করছেন।
এই পদ্ধতিটি ইঁদুর, ইঁদুর, গিনিপিগ, প্রাইমেট এবং শূকরদের ওপর পরীক্ষা করা হয়েছে। গবেষকরা আশা করছেন, ২০২৭ সাল থেকে মানুষের শরীরেও এর প্রয়োগ শুরু করা যাবে।
এই গবেষণাগুলো সফল হলে, হৃদরোগ, ফুসফুসের রোগ এবং আর্থ্রাইটিসের মতো বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিদের জীবনযাত্রার মান অনেক উন্নত হবে। তবে, চিকিৎসা বিজ্ঞানীদের মতে, এই চিকিৎসা পদ্ধতি এখনো অনেক পরীক্ষার মধ্যে দিয়ে যেতে হবে।
মানুষের শরীরে এর নিরাপত্তা এবং কার্যকারিতা নিশ্চিত করার পরেই এটি ব্যবহারের উপযুক্ত হবে।
তথ্য সূত্র: ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক