লুটনের ট্রিপল মার্ডার: স্কুলে শিশুদের গণ-হত্যার ভয়ঙ্কর পরিকল্পনা ফাঁস!

লুটনে এক ভয়াবহ হত্যাকাণ্ডের ঘটনা, স্কুলের শিশুদের উপর হামলার পরিকল্পনা ভেস্তে দিল পুলিশ।

যুক্তরাজ্যের লুটন শহরে এক মর্মান্তিক ঘটনার বিবরণ পাওয়া গেছে। ১৯ বছর বয়সী এক যুবক, নিকোলাস প্রসপার, তার নিজের মা এবং দুই ছোট ভাইকে হত্যা করে।

শুধু তাই নয়, সে তার পুরনো প্রাথমিক বিদ্যালয়ে গিয়ে ত্রিশ জন শিশু ও শিক্ষককে হত্যার পরিকল্পনা করেছিল। তবে পুলিশের তৎপরতায় তার সেই ভয়ঙ্কর পরিকল্পনা ভেস্তে যায়।

লুটন ক্রাউন কোর্টে এই মামলার শুনানিতে প্রসপারের নৃশংসতার বিস্তারিত বিবরণ উঠে আসে। গত বছরের ১৩ই সেপ্টেম্বর, প্রসপার তার ৪8 বছর বয়সী মা জুলি আনা ফ্যালকন, ১৬ বছর বয়সী ভাই কাইল প্রসপার এবং ১৩ বছর বয়সী বোন জিজেল প্রসপারকে নিজ বাড়িতে খুন করে।

প্রসপার আদালতে তার অপরাধ স্বীকার করেছে। এছাড়াও, তার বিরুদ্ধে লাইসেন্স ছাড়া বন্দুক কেনা, জীবননাশের উদ্দেশ্যে বন্দুক ব্যবহার এবং একটি ছুরি নিয়ে জনসম্মুখে ঘোরাঘুরির অভিযোগ আনা হয়েছে।

আদালতে জানানো হয়, প্রসপার সেন্ট জোসেফ’স ক্যাথলিক প্রাইমারি স্কুলে হামলা চালিয়ে ৩০ জন শিশু ও ২ জন শিক্ষককে হত্যা করতে চেয়েছিল। এরপর সে নিজেও আত্মঘাতী হওয়ার পরিকল্পনা করে।

প্রসিকিউটর, টিমোথি ক্রে কেসি (King’s Counsel) জানান, “আসলে প্রসপারের মূল উদ্দেশ্য ছিল একজন কুখ্যাত সিরিয়াল কিলারের পরিচিতি লাভ করা। সে বিশ্বের অন্যান্য সিরিয়াল কিলারের মতো খ্যাতি অর্জন করতে চেয়েছিল।”

অনুসন্ধানে জানা যায়, প্রসপার আমেরিকার যুক্তরাষ্ট্র, নরওয়ে, অস্ট্রেলিয়া এবং নিউজিল্যান্ডের বন্দুক হামলার ঘটনাগুলো সম্পর্কে বিস্তারিত ইন্টারনেট গবেষণা করেছিল। তার ধারণা ছিল, এই ধরনের হামলা চালালে যুক্তরাজ্যের স্কুল বা অন্য কোন গণহারে মানুষ হত্যার ঘটনার চেয়ে বেশি সংখ্যক মানুষের মৃত্যু ঘটানো সম্ভব।

প্রমাণের ভিত্তিতে জানা যায়, প্রসপার একটি চিরকুটে লিখেছিল, তার এই হামলার ঘটনা “ইতিহাসের সবচেয়ে বড় ঘটনাগুলোর মধ্যে একটি হবে।” প্রসপারের এই পরিকল্পনা ছিল সুদূরপ্রসারী এবং অত্যন্ত সুপরিকল্পিত।

ঘটনার দিন, সে ঘুমন্ত অবস্থায় তার মা ও দুই ভাইকে গুলি করে হত্যার পরিকল্পনা করে। এরপর সকালের দিকে সেন্ট জোসেফ’স স্কুলে গিয়ে হামলা চালানোর কথা ছিল।

কিন্তু ১৩ই সেপ্টেম্বরের ভোরে পরিবারের সদস্যদের মধ্যে সন্দেহ জাগলে, তাদের মধ্যে চরম সহিংসতা হয়। এর ফলেই প্রসপারের পরিকল্পনা ভেস্তে যায়।

আদালত সূত্রে জানা যায়, জুলিয়ানাকে মাথার পেছনে গুলি করে হত্যা করা হয়। তার শরীরে ছুরিকাঘাতের চিহ্ন ছিল, যা দেখে মনে হয় তিনি নিজেকে বাঁচানোর চেষ্টা করেছিলেন।

জিজেলকে মুখের উপর গুলি করে হত্যা করা হয়। তার লাশ ডাইনিং টেবিলের নিচে পাওয়া যায়, যা দেখে মনে হয় সে আত্মরক্ষার জন্য সেখানে লুকিয়েছিল।

কাইলকে একাধিকবার গুলি করা হয় এবং তার শরীরে একশোটির বেশি ছুরিকাঘাতের চিহ্ন পাওয়া যায়।

ফরেনসিক দল ঘটনাস্থলে পৌঁছে পুরো ফ্ল্যাটে রক্তের দাগ দেখতে পায়। দেয়ালের উপরে, মেঝেতে এবং বাতাসে রক্তের ছিটা ছিল।

গুলির শব্দ ও চিৎকারে প্রতিবেশীরা পুলিশকে খবর দেয়। ঘটনাস্থল থেকে পালানোর সময় প্রসপারের একটি সিসিটিভি ফুটেজ পাওয়া যায়, যেখানে দেখা যায় ভোর ৫টা ৩৩ মিনিটে সে একটি ব্যাগ হাতে ফ্ল্যাট থেকে বের হচ্ছে।

ব্যাগের মধ্যে একটি শটগান ও ৩০ রাউন্ড গুলি ছিল।

পরে পুলিশ তাকে আটক করে এবং তার কাছ থেকে একটি ছুরি উদ্ধার করা হয়। প্রসপারের দেখানো একটি ঝোপ থেকে পুলিশ শটগানটি উদ্ধার করে।

প্রসপারের পরিকল্পনার বিস্তারিত বিবরণ সম্বলিত একটি চিরকুট উদ্ধার করা হয়। যেখানে সে লিখেছিল, পুরো হামলাটি “সবচেয়ে বড় ঘটনা” হবে।

চিরকুটে সেন্ট জোসেফের প্রাথমিক বিদ্যালয়ের একটি ক্লাসরুমের ছবি এঁকে, সেটিতে “সবাইকে মারো” কথাটি লিখেছিল।

আটক হওয়ার পর প্রসপার, পুলিশের কাছে জানায় যে, সে প্রথমে ১২ই সেপ্টেম্বর হামলাটি করার কথা ভেবেছিল, তবে ১৩ই সেপ্টেম্বর, শুক্রবার হামলার দিনটি বেছে নেয়, যাতে এটিকে আরো ‘গুরুত্বপূর্ণ’ মনে হয়।

আদালতে আরও জানানো হয়, প্রসপার অনলাইনে এক ব্যক্তির কাছ থেকে ৬৫০ পাউন্ড (বাংলাদেশি টাকায় প্রায় ৯১,০০০ টাকা) দিয়ে একটি শটগান কিনেছিল। বন্দুক কেনার জন্য সে একটি জাল লাইসেন্স তৈরি করেছিল।

তথ্য সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *