প্রাচীন মিশরের এক উজ্জ্বল শহর, লাক্সর। নীল নদের তীরে অবস্থিত এই শহরটি শুধু একটি পর্যটন কেন্দ্রই নয়, বরং ইতিহাসের এক জীবন্ত সাক্ষী। ফারাওদের সাম্রাজ্যের স্মৃতিচিহ্ন আজও এখানে গেঁথে আছে, যা ভ্রমণকারীদের মন জয় করে।
কায়রোর বাইরে গিজা-তে অবস্থিত গ্র্যান্ড ইজিপশিয়ান মিউজিয়াম (Grand Egyptian Museum) ২০২২ সালে জনসাধারণের জন্য খুলে দেওয়ার পর থেকেই যেন পর্যটকদের আনাগোনা আরও বেড়েছে, আর সেই তালিকায় এবার যুক্ত হয়েছে লাক্সরের নাম।
প্রাচীনকালে লাক্সর “ওয়াসে” নামে পরিচিত ছিল, যার অর্থ ‘রাজদণ্ড-এর শহর’। এই শহরেই বাস করতেন দেবতাদের রাজা আমোন। পরে গ্রিকরা এর নামকরণ করে থিবস, যা স্থানীয় একটি মন্দিরের নাম থেকে এসেছে।
আধুনিককালে আমরা একে চিনি লাক্সর নামে, যা এসেছে আরবি শব্দ ‘আল-উকসুর’ থেকে, যার অর্থ প্রাসাদ। এখানকার মনোমুগ্ধকর দৃশ্য, নীল নদের তীরে বিস্তৃত রাস্তা, আর উৎসবের আমেজ—সবকিছুই যেন এক ঐশ্বর্যময় জীবনের ইঙ্গিত দেয়।
মিশরের ফারাওদের আমলে আমোন দেবতার উদ্দেশ্যে নির্মিত হয়েছিল বিশাল লাক্সর ও কার্নাক মন্দির কমপ্লেক্স। আজও এই মন্দিরগুলি প্রাচীন স্থাপত্যের এক দারুণ উদাহরণ। এছাড়াও রয়েছে মেম্ননের বিশাল মূর্তি, যা পর্যটকদের কাছে আজও অন্যতম আকর্ষণ।
ইতিহাসের পাতা ওল্টালে দেখা যায়, এই লাক্সর বহু বিখ্যাত মানুষের পদচিহ্ন বহন করে চলেছে। দ্বিতীয় শতকে এখানে এসেছিলেন রোমান সম্রাট হ্যাড্রিয়ান। ১৯৭০-এর দশকে জেমস বন্ড সিরিজের একটি সিনেমার শুটিংও হয়েছিল এখানে।
এমনকি, বিখ্যাত গোয়েন্দা চরিত্র হারকিউল পোয়ারো-ও ‘ডেথ অন দ্য নীল’ (Death on the Nile) গল্পে এই শহরে এসেছিলেন।
পর্যটকদের জন্য লাক্সরের আকর্ষণীয় স্থানগুলির মধ্যে অন্যতম হল নীল নদের পশ্চিম পাড়ে অবস্থিত আল মৌদিরা হোটেল। লেবাননের শিল্পী জেইনা আবুখায়ের ১৯৯৯ সালে এই হোটেলটি তৈরি করেন। এখানে এলে যেন এক অন্যরকম শান্তির ছোঁয়া পাওয়া যায়।
শিল্পী, সঙ্গীতশিল্পী এবং লেখকদের কাছে এটি খুবই প্রিয় একটি জায়গা। এখানকার রেস্তোরাঁতে নাইল পার্চ মাছ, মুসাফার মতো সুস্বাদু খাবার পাওয়া যায়।
ফ্যাশন ডিজাইনার রিক ওয়েন্স-এর মতে, আল মৌদিরা ১৯৮০ দশকের শেষের দিকের ‘চ্যাতো মারমন্ট’-এর মতোই, যা একই সাথে আকর্ষণীয় এবং সাধারণ। এই হোটেলে ভালো গাইড পাওয়া যায়, যারা আপনাকে এখানকার ঐতিহাসিক স্থানগুলো ঘুরে দেখাতে সাহায্য করবে।
এখানকার গাইডদের সাথে কলসি অফ মেমনন, রাজার উপত্যকা এবং লাক্সর মন্দির ঘুরে আসাটা একটা অসাধারণ অভিজ্ঞতা।
লাক্সর শহরটি যেন সময়ের সাক্ষী হয়ে আজও দাঁড়িয়ে আছে। এখানকার মন্দিরগুলোতে সূর্যের আলো পড়লে এক ভিন্ন পরিবেশ তৈরি হয়, যা মুগ্ধ করার মতো।
পর্যটকদের আনাগোনা, ঐতিহ্যপূর্ণ ঘোড়ার গাড়ি এবং আধুনিক সব যানবাহনের আনাগোনা—সবকিছু মিলিয়ে লাক্সর যেন এক স্বপ্নীল জগৎ। যারা ইতিহাস ভালোবাসেন এবং একটু অন্যরকম ভ্রমণের স্বাদ নিতে চান, তাদের জন্য লাক্সর হতে পারে আদর্শ গন্তব্য।
তথ্য সূত্র: ট্রাভেল + লেজার