ভয়ংকর খবর! বাড়ছে লাইম রোগের প্রাদুর্ভাব, এখনই সাবধান হন!

বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে বিশ্বজুড়ে বাড়ছে বিভিন্ন রোগ সৃষ্টিকারী জীবাণুর বিস্তার। উষ্ণতা বৃদ্ধি এবং আর্দ্রতা বেড়ে যাওয়ায় নতুন নতুন অঞ্চলে রোগের জীবাণু বহনকারী বাহক বা ভেক্টরদের সংখ্যা বাড়ছে, যা জনস্বাস্থ্যকে হুমকির মুখে ফেলছে।

সম্প্রতি, লাইম রোগের প্রকোপ বেড়ে যাওয়ায় বিজ্ঞানীরা নতুন করে চিন্তিত। এই রোগটি সাধারণত উত্তর আমেরিকা এবং ইউরোপে বেশি দেখা যায়, তবে জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে এর বিস্তার বাড়ছে।

লাইম রোগ মূলত *বোরেলিয়া বার্গডোরফেরি* নামক ব্যাকটেরিয়ার মাধ্যমে ছড়ায়। এই ব্যাকটেরিয়া বহন করে ‘ডিয়ার টিক’ বা ব্ল্যাক-লেগড টিক নামের এক ধরনের ছোট, মাকড়সার মতো প্রাণী।

এই টিকগুলো মানুষের শরীরে কামড়ানোর মাধ্যমে রোগের জীবাণু প্রবেশ করায়। রোগের প্রাথমিক লক্ষণগুলোর মধ্যে চামড়ায় গোলাকার ফুসকুড়ি দেখা যায়, যা অনেক সময় “বুলস আই” বা ষাঁড়ের চোখের মতো দেখতে হয়।

এছাড়াও জ্বর, মাথাব্যথা, ক্লান্তি এবং পেশী ও জয়েন্টে ব্যথা হতে পারে। রোগটি মারাত্মক রূপ নিলে স্নায়ু ও হৃদরোগের মতো সমস্যাও দেখা দিতে পারে।

বিশেষজ্ঞদের মতে, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে তাপমাত্রা বাড়ায় এবং আর্দ্রতা বৃদ্ধি পাওয়ায় এই টিকগুলো দ্রুত বাড়ছে। বিশেষ করে, তাপমাত্রা যখন ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াসের উপরে থাকে এবং আর্দ্রতা ৮৫ শতাংশের বেশি হয়, তখন এদের বংশবিস্তার বাড়ে।

জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে তাপমাত্রা বৃদ্ধি পাওয়ায় যুক্তরাষ্ট্র এবং উত্তর আমেরিকাতে রোগের বিস্তার ঘটছে।

স্ট্যানফোর্ড ইউনিভার্সিটির জীববিজ্ঞানের সহযোগী অধ্যাপক ড. এরিন মর্ডেকাই

যদিও লাইম রোগ বাংলাদেশে সরাসরি দেখা যায় না, তবে জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে আমাদের দেশেও রোগ সৃষ্টিকারী বিভিন্ন ভেক্টরের বিস্তার বাড়ছে। যেমন, ডেঙ্গু ও ম্যালেরিয়ার মতো রোগ সৃষ্টিকারী মশা বাড়ে বর্ষাকালে।

তাই, এই ধরনের রোগ থেকে বাঁচতে হলে সচেতনতা ও প্রতিরোধের কোনো বিকল্প নেই।

লাইম রোগ প্রতিরোধের জন্য বিশেষজ্ঞরা কিছু পরামর্শ দিয়েছেন। তাদের মধ্যে অন্যতম হলো, আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা কমাতে উপযুক্ত পোশাক পরা, যেমন লম্বা হাতা ও প্যান্ট এবং শরীরে কীটনাশক ব্যবহার করা।

এছাড়াও, ঘন ঘাসযুক্ত বা ঝোপঝাড়ের আশেপাশে হাঁটাচলার সময় বাড়তি সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। টিক শরীরে দেখা গেলে দ্রুত সেটি অপসারণ করতে হবে।

টিকের কামড় থেকে বাঁচতে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া জরুরি।

ফোর্ডহ্যাম ইউনিভার্সিটির বায়োলজিক্যাল ফিল্ড স্টেশনের পরিচালক ড. থমাস ড্যানিয়েলস

টিক অপসারণের জন্য চিমটা ব্যবহার করা যেতে পারে। টিকটিকে কোনোভাবে পোড়ানোর চেষ্টা করা উচিত নয়।

আমাদের মনে রাখতে হবে, জলবায়ু পরিবর্তন একটি বৈশ্বিক সমস্যা। এর প্রভাবে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে রোগের বিস্তার বাড়ছে। তাই, ব্যক্তিগত সচেতনতার পাশাপাশি পরিবেশ সুরক্ষার দিকেও আমাদের নজর দিতে হবে।

তথ্য সূত্র: সিএনএন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *