গণতান্ত্রিক কঙ্গো প্রজাতন্ত্রে (ডিআরসি) সক্রিয় এম২৩ বিদ্রোহী গোষ্ঠী সেখানকার সাধারণ মানুষের উপর ভয়াবহ নির্যাতন চালাচ্ছে। মানবাধিকার সংস্থা অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, এম২৩ গেরিলারা তাদের নিয়ন্ত্রিত এলাকাগুলোতে বেসামরিক নাগরিকদের ওপর নির্যাতন, হত্যা ও গুমের মতো ঘটনা ঘটাচ্ছে, যা আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইনের গুরুতর লঙ্ঘন।
সংস্থাটির মতে, গত জানুয়ারি মাস থেকে বিদ্রোহী গোষ্ঠীটির সহিংসতা বেড়ে যাওয়ার ফলে এই ধরনের ঘটনা ঘটছে। রুয়ান্ডা সমর্থিত এম২৩ বিদ্রোহীরা দেশটির পূর্বাঞ্চলে অবস্থিত গুমার মতো গুরুত্বপূর্ণ শহরগুলো দখল করে নিয়েছে। এর ফলস্বরূপ, সেখানকার কয়েক লক্ষ মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে।
অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের তদন্তকারীরা ফেব্রুয়ারি থেকে এপ্রিল মাসের মধ্যে গমা ও বুকাভুর এম২৩ কর্তৃক আটককৃত ১৮ জনের সঙ্গে কথা বলেছেন। তাদের মধ্যে অনেকেই জানিয়েছেন, কঙ্গোর সেনাবাহিনী বা সরকারের প্রতি সমর্থন জানানোর অভিযোগে তাদের আটক করা হয়েছিল। যদিও তাদের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগের কোনো প্রমাণ উপস্থাপন করা হয়নি।
আটককৃতদের অভিযোগ, তাদের অস্বাস্থ্যকর ও অতিরিক্ত জনাকীর্ণ কক্ষে রাখা হয়েছিল। সেখানে খাবার, জল, স্বাস্থ্যবিধি ও চিকিৎসার কোনো ব্যবস্থা ছিল না। এমনকি বন্দীদের মধ্যে কয়েকজনকে এইসব কারণে অথবা নির্যাতনের ফলে মারা যেতেও দেখেছেন তারা।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, হাতুড়ি দিয়ে পিটিয়ে ও গুলি করে হত্যার মতো নৃশংস দৃশ্যও তারা দেখেছেন। আটককৃত সবাই জানিয়েছেন, হয় তাদের ওপর নির্যাতন চালানো হয়েছে, অথবা অন্যদের মারধর করতে দেখেছেন তারা।
নির্যাতনের জন্য লাঠি, বিদ্যুতের তার অথবা গাড়ির বেল্ট ব্যবহার করা হতো। এমনকি নিখোঁজ স্বজনদের খোঁজ করতে গেলে এম২৩ যোদ্ধারা তাদের ফিরিয়ে দিতো। অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের মতে, এই ধরনের ঘটনাগুলো “জোরপূর্বক গুম” এর শামিল।
বিষয়টি নিয়ে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের পূর্ব ও দক্ষিণ আফ্রিকার আঞ্চলিক পরিচালক টিগেরে চাগুতা বলেছেন, “এম২৩ পূর্বাঞ্চলীয় ডিআরসিতে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনার কথা বললেও, তাদের হাতে আটককৃতদের প্রতি তারা যে ভয়াবহ আচরণ করে, তা আসলে ভিন্ন চিত্র তোলে ধরে। যারা তাদের বিরোধিতা করে, তাদের তারা নির্মমভাবে শাস্তি দেয় এবং অন্যদের ভয় দেখিয়ে চুপ করিয়ে রাখে, যাতে কেউ তাদের চ্যালেঞ্জ করার সাহস না পায়।
তিনি আরও বলেন, “আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক শক্তিগুলোকে অবশ্যই রুয়ান্ডাকে চাপ দিতে হবে, যাতে তারা এম২৩ কে সমর্থন দেওয়া বন্ধ করে।
জাতিসংঘ ও ডিআরসি’র সরকার রুয়ান্ডার বিরুদ্ধে এম২৩ কে অস্ত্র ও সেনা দিয়ে সাহায্য করার অভিযোগ করেছে। যদিও রুয়ান্ডা সরকার তা অস্বীকার করেছে। জাতিসংঘের অনুমান, প্রায় ৪ হাজার রুয়ান্ডান সেনা এম২৩ কে সমর্থন যোগাচ্ছে।
উল্লেখ্য, এম২৩ হলো ডিআরসি’র পূর্বাঞ্চলে সক্রিয় প্রায় ১০০টি সশস্ত্র গোষ্ঠীর মধ্যে একটি। খনিজ সম্পদে ভরপুর এই অঞ্চলের নিয়ন্ত্রণ নিয়েই মূলত তাদের মধ্যে সংঘাত চলছে। এই সংঘর্ষের কারণে ইতোমধ্যে ৭০ লক্ষেরও বেশি মানুষ ঘরছাড়া হয়েছে, যাদের মধ্যে শুধুমাত্র এ বছরই বাস্তুচ্যুত হয়েছে ১ লক্ষ মানুষ।
কঙ্গোর সেনাবাহিনী ও বিদ্রোহীরা যুদ্ধবিরতির ঘোষণা দিলেও, সেখানে সংঘর্ষ এখনো অব্যাহত রয়েছে। এম২৩ পূর্বে রাজধানী কিনশাসা পর্যন্ত অগ্রসর হওয়ার হুমকি দিয়েছিল, যা ১,৬০০ কিলোমিটারেরও বেশি দূরে অবস্থিত।
সম্প্রতি, রুয়ান্ডা ও ডিআরসি আগামী ২ মের মধ্যে একটি শান্তি চুক্তি তৈরির বিষয়ে সম্মত হয়েছে, যেখানে একে অপরের সার্বভৌমত্বের প্রতি সম্মান জানানো এবং সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোকে সামরিক সহায়তা না করার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে।
তথ্য সূত্র: আল জাজিরা