মাদাগাস্কারে অভ্যুত্থান! প্রেসিডেন্টের ক্ষমতা দখলের চেষ্টা?

মাagascar-এ অভ্যুত্থানের চেষ্টা, প্রেসিডেন্ট রাজিওনার বিরুদ্ধে বিক্ষোভে উত্তাল দেশ।

ভারত মহাসাগরের দ্বীপ রাষ্ট্র মাদাগাস্কারে অভ্যুত্থানের একটি চেষ্টা চলছে বলে দেশটির প্রেসিডেন্ট আন্দ্রি রাজিওনা রবিবার ঘোষণা করেছেন। এর আগে শনিবার দেশটির সেনাবাহিনীর একটি বিশেষ ইউনিট, তরুণ প্রজন্মের নেতৃত্বে চলা সরকার বিরোধী বিক্ষোভে যোগ দেয় এবং প্রেসিডেন্টের পদত্যাগ দাবি করে।

গত কয়েক সপ্তাহ ধরে মাদাগাস্কারে ব্যাপক অস্থিরতা চলছে। বিক্ষোভকারীরা ‘জেনারেশন জেড মাদাগাস্কার’ নামে একটি গোষ্ঠীর ব্যানারে একত্রিত হয়েছে। জাতিসংঘের তথ্য অনুযায়ী, বিক্ষোভে অন্তত ২২ জন নিহত এবং বহু লোক আহত হয়েছে। যদিও সরকার এই সংখ্যাটি নিয়ে ভিন্নমত পোষণ করেছে।

প্রেসিডেন্ট রাজিওনার কার্যালয় থেকে রবিবার প্রকাশিত এক বিবৃতিতে বলা হয়, “আমরা দেশ এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে জানাতে চাই যে, ক্ষমতা দখলের জন্য অবৈধ ও জোরপূর্বক একটি প্রচেষ্টা চালানো হয়েছে।” বিবৃতিতে আরও বলা হয়, “এই গুরুতর পরিস্থিতি বিবেচনা করে, প্রজাতন্ত্রের প্রেসিডেন্ট…অস্থিতিশীল করার এই প্রচেষ্টার তীব্র নিন্দা জানাচ্ছেন এবং সাংবিধানিক শৃঙ্খলা ও জাতীয় সার্বভৌমত্ব রক্ষার জন্য দেশের সকল শক্তিকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানাচ্ছেন।”

বিবৃতিতে অভ্যুত্থান চেষ্টার সঙ্গে জড়িতদের নাম প্রকাশ করা হয়নি। তবে সেনাবাহিনীর এলিট ক্যাপসট (CAPSAT) ইউনিটের সদস্যরা শনিবার প্রেসিডেন্ট রাজিওনার বিরুদ্ধে চলা বিক্ষোভে যোগ দেন এবং তাদের পদত্যাগের দাবি জানান। ক্যাপসট ইউনিটের কর্নেল মাইকেল রন্দ্রিয়ানির একটি সাঁজোয়া যান থেকে বিক্ষোভকারীদের উদ্দেশ্যে বলেন, “আমরা কি একে অভ্যুত্থান বলব? আমি এখনো জানি না।”

শনিবারের বিক্ষোভ ছিল সাম্প্রতিক সময়ের মধ্যে সবচেয়ে বড় বিক্ষোভগুলির একটি।

আফ্রিকার পূর্ব উপকূলের কাছে অবস্থিত প্রায় ৩ কোটি ১০ লক্ষ মানুষের দ্বীপ রাষ্ট্র মাদাগাস্কার। ১৯৬০ সালে ফ্রান্সের কাছ থেকে স্বাধীনতা লাভের পর থেকে দেশটিতে বেশ কয়েকজন নেতাকে অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতাচ্যুত করা হয়েছে। প্রেসিডেন্ট রাজিওনা নিজেও ২০০৯ সালে সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে গঠিত একটি অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান হিসেবে প্রথম ক্ষমতায় আসেন। ২০১৮ সালে তিনি প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন এবং ২০২৩ সালে বিরোধী দলগুলোর নির্বাচন বয়কটের মধ্যে দিয়ে তিনি পুনরায় নির্বাচিত হন।

বিদ্যুৎ ও জল সরবরাহ সহ বিভিন্ন পরিষেবা এবং সরকারের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ তুলে গত ২৫শে সেপ্টেম্বর দেশটিতে বিক্ষোভ শুরু হয়। ধীরে ধীরে এই বিক্ষোভ প্রেসিডেন্ট রাজিওনার নেতৃত্ব এবং সরকারের প্রতি অসন্তোষের রূপ নেয়। বিক্ষোভকারীরা দারিদ্র্য, জীবনযাত্রার উচ্চ মূল্য, উচ্চশিক্ষায় প্রবেশাধিকার এবং সরকারি কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে দুর্নীতি ও অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ সহ বিভিন্ন বিষয় উত্থাপন করেছে।

নাগরিক সংগঠন ও শ্রমিক ইউনিয়নগুলোও এই বিক্ষোভে যোগ দিয়েছে। রাজধানী আন্তানারিভো এবং অন্যান্য প্রধান শহরগুলোতে রাত্রিকালীন কারফিউ জারি করা হয়েছে। পরিস্থিতি শান্ত করতে রাজিওনা গত ২৯শে সেপ্টেম্বর প্রধানমন্ত্রীসহ তার পুরো মন্ত্রিসভা ভেঙে দেন। তবে তিনি একজন সামরিক জেনারেলকে নতুন প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নিয়োগ দিলেও বিক্ষোভকারীরা তাদের আন্দোলন অব্যাহত রেখেছে।

বিক্ষোভের মূল উদ্যোক্তা ‘জেনারেশন জেড’ প্রতিবাদকারীরা তাদের নিজস্ব ওয়েবসাইট, ফেসবুক পেজ এবং অন্যান্য সামাজিক মাধ্যম ব্যবহার করে সংগঠিত হচ্ছে। তারা একটি ‘গোফান্ডমি’ পেজ খুলে অর্থ সংগ্রহ করছে। তারা নেপাল ও শ্রীলঙ্কার সরকার পতনের মতো আন্দোলনের দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়েছে বলে জানা গেছে।

তথ্য সূত্র: অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *