আফ্রিকার বিভিন্ন দেশে তরুণ প্রজন্মের সরকার বিরোধী বিক্ষোভ এখন আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে। সম্প্রতি মাদাগাস্কারে সরকার বিরোধী বিক্ষোভে দেশটির প্রেসিডেন্টের ক্ষমতাচ্যুতি আন্তর্জাতিক মহলে আলোড়ন সৃষ্টি করেছে।
এই প্রেক্ষাপটে, অনেকেই প্রশ্ন তুলছেন, আফ্রিকার অন্যান্য দেশের সরকারগুলোর জন্য এটি কি একটি সতর্কবার্তা? বিশেষভাবে, যেখানে তরুণ প্রজন্মের মধ্যে অসন্তোষ বাড়ছে এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এই বিক্ষোভগুলোতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে।
গণমাধ্যম সূত্রে জানা যায়, মাদাগাস্কারের ঘটনার সঙ্গে মিল রয়েছে এমন বিক্ষোভ সম্প্রতি নেপাল, শ্রীলঙ্কা এবং বাংলাদেশেও সংগঠিত হয়েছে। মূলত, নব্বই দশকের মাঝামাঝি সময় থেকে ২০১০ সালের শুরুর দিকের সময়ের মধ্যে জন্ম নেওয়া প্রজন্ম ‘জেনারেশন জেড’ (Gen Z) -এর নেতৃত্বেই এই বিক্ষোভগুলো সংঘটিত হচ্ছে।
তাদের প্রধান অভিযোগগুলো হলো- দুর্নীতি, অর্থনৈতিক সুযোগের অভাব এবং সরকারের নীতি নিয়ে অসন্তুষ্টি। প্রযুক্তি, বিশেষ করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম, এই বিক্ষোভগুলো সংগঠিত করতে এবং এর বিস্তার ঘটাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে।
উদাহরণস্বরূপ, গত বছর বাংলাদেশেও সরকার বিরোধী তীব্র আন্দোলন হয়, যেখানে প্রধানত ছাত্ররা নেতৃত্ব দেয়। এই আন্দোলনের ফলস্বরূপ, দীর্ঘদিনের ক্ষমতাসীন সরকার ক্ষমতাচ্যুত হয়। একই ধরনের ঘটনা ঘটেছিল শ্রীলঙ্কাতেও, যেখানে তরুণ প্রজন্মের আন্দোলনের মুখে সরকার পরিবর্তন হয়।
আফ্রিকার দেশগুলোতেও একই ধরনের চিত্র দেখা যাচ্ছে। মরক্কোতে ‘GenZ 212’ নামে পরিচিত একটি আন্দোলন সক্রিয় রয়েছে, যারা সরকারের বিভিন্ন নীতির সমালোচনা করছে। কেনিয়াতে একটি বিতর্কিত কর বৃদ্ধি সংক্রান্ত বিলের বিরুদ্ধে হওয়া বিক্ষোভ পরবর্তীতে সরকার পরিবর্তনের দাবিতে রূপ নেয়।
এছাড়াও, উগান্ডা, মোজাম্বিকসহ বিভিন্ন দেশে তরুণ প্রজন্মের বিক্ষোভের খবর পাওয়া যাচ্ছে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, আফ্রিকার দেশগুলোতে তরুণ প্রজন্মের মধ্যে রাজনৈতিক সচেতনতা বাড়ছে। তারা তাদের অধিকারের বিষয়ে সোচ্চার হচ্ছে এবং পরিবর্তনের জন্য চাপ সৃষ্টি করছে।
তবে, অনেক আফ্রিকান সরকার, বিশেষ করে সামরিক শাসনের অধীনে থাকা দেশগুলো, সহজে ক্ষমতা ছাড়তে নারাজ।
বিশ্লেষকদের মতে, আফ্রিকার দেশগুলোতে সুশাসনের অভাব একটি বড় সমস্যা। দুর্নীতি, বেকারত্ব এবং মৌলিক পরিষেবাগুলোর দুর্বলতা তরুণ প্রজন্মের মধ্যে ক্ষোভের জন্ম দিচ্ছে। যেহেতু আফ্রিকার জনসংখ্যার একটি বড় অংশ তরুণ, তাই এই অসন্তোষ একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।
বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, জেনারেশন জেড-এর এই সক্রিয়তা আফ্রিকার দেশগুলোর জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ বার্তা। যদি এই সমস্যাগুলো সমাধান না করা হয়, তাহলে তরুণ প্রজন্মের নেতৃত্বে আন্দোলন আরও বাড়তে পারে।
এটি আফ্রিকার রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ তৈরি করতে পারে।
তথ্য সূত্র: সিএনএন