আতঙ্কের খবর! মদের কারণে বাড়ছে নারী মৃত্যু: বাড়ছে উদ্বেগ!

শিরোনাম: মহিলাদের মধ্যে বাড়ছে অ্যালকোহল-সংক্রান্ত মৃত্যুহার: এক উদ্বেগজনক চিত্র

সাম্প্রতিক বছরগুলোতে অ্যালকোহল সেবনের কারণে নারীর স্বাস্থ্যহানি উদ্বেগজনক হারে বাড়ছে। বিশ্বজুড়ে এই প্রবণতা বিশেষভাবে লক্ষণীয়, যেখানে পুরুষদের তুলনায় নারীদের মধ্যে অ্যালকোহল-সংক্রান্ত মৃত্যুর সংখ্যা দ্রুত বাড়ছে।

চিকিৎসা বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এর কারণ হলো নারীদের মধ্যে মদ্যপানের প্রবণতা বৃদ্ধি এবং শারীরিক কিছু বৈশিষ্ট্য, যা তাদের অ্যালকোহলের প্রতি আরও সংবেদনশীল করে তোলে।

গবেষণা বলছে, অ্যালকোহল পানের ক্ষেত্রে নারী ও পুরুষের মধ্যেকার ব্যবধান কমছে। উদাহরণস্বরূপ, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে পরিচালিত এক জরিপে দেখা গেছে, গত মাসে প্রায় ৪৫ শতাংশ নারী অ্যালকোহল পান করেছেন, যেখানে পুরুষদের মধ্যে এই হার ছিল প্রায় ৫০ শতাংশ।

শুধু তাই নয়, অতিরিক্ত মদ্যপানের ক্ষেত্রেও নারী-পুরুষের মধ্যেকার ফারাক কমছে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, নারীদের শরীরে পুরুষের তুলনায় চর্বির পরিমাণ বেশি থাকে এবং জল কম থাকে। এর ফলে, একই পরিমাণ অ্যালকোহল গ্রহণ করলেও নারীদের রক্তে অ্যালকোহলের ঘনত্ব বেশি হয় এবং এটি দীর্ঘ সময় ধরে শরীরে থাকে।

এছাড়াও, নারীদের শরীরে অ্যালকোহল বিপাকের জন্য প্রয়োজনীয় এনজাইমের পরিমাণও কম থাকে। হরমোনের পরিবর্তনও এক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

অ্যালকোহলের ক্ষতিকর প্রভাবগুলো নারীদেহে মারাত্মক হতে পারে। অল্প পরিমাণে অ্যালকোহল পান করলেও হৃদরোগ, স্ট্রোক এবং কিছু ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়ে।

এমনকি স্তন ক্যান্সারের ঝুঁকিও এতে বৃদ্ধি পায়। এছাড়া, অতিরিক্ত মদ্যপান লিভারের ক্ষতি, অগ্ন্যাশয়ের সমস্যা এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা দুর্বল করে দিতে পারে।

গর্ভবতী অবস্থায় অ্যালকোহল পান করলে তা শিশুর শারীরিক ও মানসিক বিকাশে গুরুতর সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অনেক নারীই হয়তো বুঝতে পারেন না যে তারা কতটা অ্যালকোহল গ্রহণ করছেন। সাধারণত, এক গ্লাস ওয়াইন-এর সঠিক পরিমাণ হলো প্রায় ১৫০ মিলি লিটার।

কিন্তু অনেক সময়, গ্লাসের আকার বড় হওয়ার কারণে নারীরা অজান্তেই বেশি পরিমাণে অ্যালকোহল পান করেন।

অ্যালকোহল ব্যবহারের সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে সচেতনতা জরুরি। অতিরিক্ত মদ্যপান ত্যাগ করার জন্য সামাজিক অনুষ্ঠানে অ্যালকোহলের পরিবর্তে বিকল্প পানীয় বেছে নেওয়া যেতে পারে।

এছাড়াও, যারা মানসিক চাপ কমাতে অ্যালকোহলের ওপর নির্ভরশীল, তারা চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে পারেন। চিকিৎসকেরা এক্ষেত্রে বিকল্প স্ট্রেস ম্যানেজমেন্ট কৌশল শেখার জন্য থেরাপিস্টের কাছে যেতে অথবা সহায়তা দলের সঙ্গে যুক্ত হতে পরামর্শ দিতে পারেন।

মাদকাসক্তি নিরাময়ের জন্য কিছু ওষুধ রয়েছে, যা চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী সেবন করা যেতে পারে।

বর্তমানে, বিশ্বে অ্যালকোহল ব্যবহারজনিত সমস্যা একটি গুরুতর উদ্বেগের কারণ। তাই, নারীদের স্বাস্থ্য সুরক্ষায় অ্যালকোহলের ক্ষতিকর দিকগুলো সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি করা অত্যন্ত জরুরি।

অতিরিক্ত মদ্যপান থেকে বিরত থাকা এবং স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন প্রতিটি নারীর জন্য অপরিহার্য।

তথ্যসূত্র: ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *