নজরুল বন্দীর মতো: এল সালভাদরে ‘বন্দী’ হওয়া নাগরিকদের ফেরত চান মাদুরো!

যুক্তরাষ্ট্র থেকে বিতাড়িত করে এল সালভাদরের কারাগারে পাঠানো ভেনেজুয়েলার নাগরিকদের ‘অপহরণ’ হিসেবে উল্লেখ করেছেন দেশটির প্রেসিডেন্ট নিকোলাস মাদুরো। তিনি এই ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়ে আটককৃতদের ফিরিয়ে আনার দাবি জানিয়েছেন।

বুধবার এক ভাষণে মাদুরো এই মন্তব্য করেন। মাদুরো বলেন, “যুক্তরাষ্ট্রে কোনো অপরাধ না করা সত্ত্বেও আমাদের নাগরিকদের বন্দী করে এল সালভাদরের কুখ্যাত কারাগারে পাঠানো হয়েছে।

“এটিকে কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না। আমরা এর তীব্র প্রতিবাদ জানাচ্ছি।”

যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে এল সালভাদরের বর্তমান প্রেসিডেন্ট নাইব বুকেলির একটি চুক্তি রয়েছে। সেই চুক্তির অধীনেই মূলত এই নাগরিকদের এল সালভাদরে পাঠানো হয়েছে।

মাদুরো বুকেলির প্রতি ইঙ্গিত করে বলেন, “এই অপহরণের সঙ্গে বুকেলের জড়িত থাকা উচিত নয়।” তিনি আরও যোগ করেন, “তাদের কোনো বিচার হয়নি, আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ দেওয়া হয়নি, এমনকি তাদের সঙ্গে প্রতারণা করা হয়েছে।

এরপর হাতকড়া পরিয়ে বিমানে তুলে এল সালভাদরের কনসেনট্রেশন ক্যাম্পে পাঠানো হয়েছে।”

২০১৩ সাল থেকে ক্ষমতায় থাকা মাদুরো জানান, তার সরকার এল সালভাদর সরকারের কাছে আনুষ্ঠানিকভাবে একটি নথি পেশ করবে, যেখানে ভেনেজুয়েলার নাগরিকদের ফিরিয়ে দেওয়ার অনুরোধ জানানো হবে। এই দাবির সমর্থনে ভেনেজুয়েলার লাখো নাগরিক স্বাক্ষর করবেন বলেও তিনি উল্লেখ করেন।

সম্প্রতি, ট্রাম্প প্রশাসন ২০১৮ সালের একটি বিতর্কিত আইন ব্যবহার করে ২৩৮ জন ভেনেজুয়েলার নাগরিককে এল সালভাদরে ফেরত পাঠায়। যুক্তরাষ্ট্র দাবি করে, ফেরত পাঠানো ব্যক্তিরা ‘ট্রেন দে আরাগুয়া’ নামের একটি সংঘবদ্ধ অপরাধী চক্রের সদস্য।

যদিও আদালতের নির্দেশে এই পদক্ষেপ স্থগিত করার কথা ছিল। যুক্তরাষ্ট্রের এই পদক্ষেপের তীব্র সমালোচনা করে মাদুরো বলেন, “যুক্তরাষ্ট্র সরকার ভেনেজুয়েলার নাগরিকদের বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ উত্থাপন করছে।”

তিনি আরও বলেন, “আমাদের নাগরিকদের কোনো অপরাধ প্রমাণ করা যায়নি। তাদের সন্ত্রাসী বা অপরাধী হিসেবে চিহ্নিত করার কোনো সুযোগ নেই।”

এদিকে, এল সালভাদরে পাঠানো নাগরিকদের মধ্যে ২৩ জন দেশটির নাগরিকও ছিলেন। তাদেরও একই কারাগারে পাঠানো হয়েছে। মানবাধিকার সংগঠনগুলো বলছে, এই কারাগারের পরিবেশ অত্যন্ত অমানবিক এবং সেখানে বন্দীদের সঙ্গে চরম দুর্ব্যবহার করা হয়, যা মানবাধিকারের চরম লঙ্ঘন।

মঙ্গলবার রাজধানী কারাকাসে এই বিতাড়ন সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ করেন ভেনেজুয়েলার নাগরিকরা। তারা গণমাধ্যমে প্রকাশিত ছবি ও ভিডিওতে তাদের স্বজনদের শনাক্ত করতে পেরেছেন বলে দাবি করেন।

আটককৃতদের পরিবারের সদস্যরা তাদের স্বজনদের মুক্তি এবং দ্রুত দেশে ফিরিয়ে আনার দাবি জানান। অন্যদিকে, হোয়াইট হাউস এখন পর্যন্ত বিতাড়িত হওয়া ভেনেজুয়েলার নাগরিকদের ‘ট্রেন দে আরাগুয়া’র সঙ্গে জড়িত থাকার কোনো প্রমাণ উপস্থাপন করতে পারেনি।

এই গ্যাং মানব পাচার, অর্থ পাচার, মাদক চোরাচালানসহ বিভিন্ন অপরাধের সঙ্গে জড়িত। ট্রাম্প প্রশাসন জানুয়ারিতে ‘ট্রেন দে আরাগুয়া’ এবং এল সালভাদরের এমএস-১৩ গ্যাংকে বিদেশি সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে তালিকাভুক্ত করে।

যুক্তরাষ্ট্রের ইমিগ্রেশন অ্যান্ড কাস্টমস এনফোর্সমেন্ট (আইসিই) সংস্থা জানিয়েছে, তারা বিতর্কিত ব্যক্তিদের প্রোফাইল পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে পর্যালোচনা করে নিশ্চিত হয়েছে যে তারা অপরাধী দলের সদস্য।

তবে বিতাড়িত হওয়া ব্যক্তিদের নাম প্রকাশ করা হয়নি। এর আগে, ট্রাম্প প্রশাসনের বিতাড়িত করা কিছু ভেনেজুয়েলার নাগরিক জানিয়েছেন, তারা এই গ্যাংয়ের সঙ্গে জড়িত নন।

ড্যানিয়েল সিমানকাস রদ্রিগেজ নামের এক ব্যক্তি জানান, যুক্তরাষ্ট্রের কর্তৃপক্ষ তার শরীরে ট্যাটু এবং গ্যাংয়ের উৎপত্তিস্থল মারাকাই থেকে আসার কারণে তাকে সন্দেহ করেছিল।

মাদুরো বুধবার ঘোষণা করেছেন, তার সরকার যুক্তরাষ্ট্রে আটক হওয়া ভেনেজুয়েলার নাগরিকদের ফিরিয়ে আনার জন্য ফ্লাইটের সংখ্যা বৃদ্ধি করবে। তিনি বলেন, “আটক হওয়া সকল অভিবাসীকে ফিরিয়ে আনা হবে এবং তাদের সম্মান ও নিরাপত্তা দেওয়া হবে।

তারা তাদের মাতৃভূমি ও পরিবারের কাছে ফিরে যেতে পারবে।” তথ্য সূত্র: সিএনএন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *