ভেনেজুয়েলার আকাশে কি অস্ত্রের ঝনঝনানি? যুক্তরাষ্ট্র এবং রাশিয়ার মধ্যে ক্ষমতার লড়াই?
ওয়াশিংটন এবং কারাকাসের মধ্যে উত্তেজনা ক্রমশ বাড়ছে। একদিকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ভেনেজুয়েলার উপর সামরিক পদক্ষেপ নেওয়ার কথা বিবেচনা করছে, অন্যদিকে দেশটির প্রেসিডেন্ট নিকোলাস মাদুরো রাশিয়ার তৈরি অত্যাধুনিক ক্ষেপণাস্ত্রের বিশাল ভাণ্ডারের কথা ঘোষণা করেছেন। উভয় পক্ষের এই দ্বন্দ্বে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক নতুন মোড় নিতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প মাদক পাচার বন্ধের অজুহাতে ভেনেজুয়েলার অভ্যন্তরে সামরিক অভিযান চালানোর কথা বলছেন। তবে এর পেছনে মাদুরোকে ক্ষমতাচ্যুত করার বৃহত্তর পরিকল্পনাও থাকতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে মাদুরো সরকার তাদের সামরিক শক্তি প্রদর্শনে তৎপর হয়েছে।
ভেনেজুয়েলার প্রেসিডেন্ট নিকোলাস মাদুরো সম্প্রতি এক অনুষ্ঠানে জানান, তাদের কাছে রাশিয়ার তৈরি ৫,০০০ এর বেশি অত্যাধুনিক ‘ইগলা-এস’ (Igla-S) ক্ষেপণাস্ত্র রয়েছে। এই ক্ষেপণাস্ত্রগুলো স্বল্প পাল্লার এবং ভূমি থেকে আকাশে নিক্ষেপযোগ্য। এগুলো যুদ্ধবিমান, হেলিকপ্টার এবং ড্রোন ধ্বংস করতে সক্ষম। মাদুরো আরও জানান, দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে শুরু করে প্রতিটি শহরে এই ক্ষেপণাস্ত্র মোতায়েন করা হয়েছে।
অন্যদিকে, যুক্তরাষ্ট্র এরই মধ্যে ৪,৫০০ মেরিন সেনা ও নৌ সদস্যকে ক্যারিবিয়ান অঞ্চলে পাঠিয়েছে। তাদের মূল উদ্দেশ্য হলো মাদক পাচারকারীদের বিরুদ্ধে অভিযান চালানো এবং ভেনেজুয়েলার উপর সামরিক চাপ সৃষ্টি করা। তবে, মার্কিন কংগ্রেসের অনেক সদস্য এই অভিযানের বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন।
বিশ্লেষকদের মতে, যুক্তরাষ্ট্রের এই পদক্ষেপের মূল লক্ষ্য হলো মাদুরোকে ক্ষমতা থেকে সরানো। কিন্তু এখন পর্যন্ত সরাসরি সামরিক পদক্ষেপ নেওয়ার কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। মাদুরো অবশ্য যুক্তরাষ্ট্রের এই পদক্ষেপকে দেশের স্থিতিশীলতা নষ্ট করার চক্রান্ত হিসেবে দেখছেন। তিনি জনগণকে ঐক্যবদ্ধ থাকার আহ্বান জানিয়েছেন এবং সামরিক প্রতিরোধের প্রস্তুতি নিচ্ছেন। মাদুরোর দাবি, বর্তমানে তাদের মিলিশিয়া বাহিনীতে প্রায় ৮০ লক্ষ রিজার্ভ সেনা সদস্য রয়েছে।
‘ইগলা-এস’ ক্ষেপণাস্ত্রের ক্ষমতা সম্পর্কে জানা যায়, এটি ৬,০০০ মিটার পর্যন্ত দূরের লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানতে পারে এবং ৩,৫০০ মিটার উচ্চতায় থাকা লক্ষ্যবস্তুকেও ধ্বংস করতে সক্ষম।
আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশ্লেষকদের মতে, ভেনেজুয়েলার এই পরিস্থিতি আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে নতুন মেরুকরণ সৃষ্টি করতে পারে। একদিকে যেমন যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক হস্তক্ষেপের সম্ভাবনা বাড়ছে, তেমনই রাশিয়ার সামরিক সহায়তার কারণে পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে উঠছে।
তথ্যসূত্র: সিএনএন