ম্যাগাজিনের সোনালী যুগ: ক্ষমতায় ছিল যখন…

একসময় ম্যাগাজিনের দাপট ছিল বিশ্বজুড়ে। ফ্যাশন থেকে রাজনীতি, সিনেমা থেকে সংস্কৃতি – সবক্ষেত্রেই ম্যাগাজিনগুলো একচ্ছত্র আধিপত্য বিস্তার করত।

নব্বইয়ের দশকে, বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্রে, ম্যাগাজিনগুলো ছিল প্রভাবশালী এবং আকর্ষণীয় জগতের কেন্দ্রবিন্দু। প্রভাবশালী সম্পাদকদের বিলাসবহুল জীবনযাত্রা, পত্রিকার ভেতরের গল্প, ফ্যাশন ট্রেন্ড তৈরি, এমনকি রাজনীতির মোড় ঘোরানো – সবই ছিল ম্যাগাজিন সংস্কৃতির অবিচ্ছেদ্য অংশ।

সেই সময়ের একটি উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত ছিলেন জন এফ কেনেডি জুনিয়র। ১৯৯৫ সালে তিনি ‘জর্জ’ নামে একটি ম্যাগাজিন চালু করেন, যেখানে রাজনীতি এবং সেলিব্রিটিকে একত্রিত করার এক অভিনব প্রচেষ্টা ছিল।

সিন্ডি ক্রফোর্ডকে জর্জ ওয়াশিংটনের পোশাকে প্রথম সংখ্যার প্রচ্ছদে এনে পত্রিকাটি আলোচনার জন্ম দেয়। কেনেডি জুনিয়র চেয়েছিলেন এমন একটি ম্যাগাজিন তৈরি করতে যা শুধু আকর্ষণীয়ই নয়, বরং সমাজের গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা করবে।

তখনকার ম্যাগাজিন জগৎ ছিল বেশ জাঁকজমকপূর্ণ। সম্পাদকরা নিজেদের রুচি ও পছন্দের মাধ্যমে সমাজের রুচি নির্ধারণ করতেন।

তাদের জীবনযাত্রা ছিল ঈর্ষণীয়। নামকরা ম্যাগাজিনগুলোর সম্পাদকদের জন্য বিশাল অঙ্কের বেতন, বিলাসবহুল জীবন এবং বিশেষ সুযোগ-সুবিধা ছিল সাধারণ ব্যাপার।

উদাহরণস্বরূপ, ভ্যানিটি ফেয়ারের সম্পাদক টিনা ব্রাউন ফটোগ্রাফার অ্যানি লেইবোভিটজের ছবি তোলার জন্য এক বছরে ৪১,০০০ মাইল ভ্রমণ করিয়েছিলেন।

তবে এই চাকচিক্যের যুগেও কিছু সমস্যা ছিল। ম্যাগাজিনগুলো মূলত সমাজের একটি নির্দিষ্ট শ্রেণির মানুষের দৃষ্টিভঙ্গি তুলে ধরত, যাদের মধ্যে শ্বেতাঙ্গ এবং পুরুষদের প্রাধান্য ছিল।

সমাজের অন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ কণ্ঠস্বর এতে অনুপস্থিত থাকত।

কেনেডি জুনিয়রের ‘জর্জ’ ম্যাগাজিন এই চিরাচরিত ধারণাকে ভাঙতে চেয়েছিল। ম্যাগাজিনটি এমন সব মানুষের কথা বলতে চেয়েছিল, যারা রাজনৈতিক ম্যাগাজিনের চিরাচরিত পাঠকের বাইরে ছিল – নারী, তরুণ এবং দেশের সাধারণ মানুষ।

কিন্তু ম্যাগাজিনটি বেশিদিন টেকেনি। ১৯৯৯ সালে কেনেডি জুনিয়রের মৃত্যুর পর ম্যাগাজিনটি ধীরে ধীরে বন্ধ হয়ে যায়।

সময়ের সঙ্গে সঙ্গে দৃশ্যপট পাল্টেছে। ইন্টারনেট এবং সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের উত্থান ম্যাগাজিনগুলোর ক্ষমতা কমিয়ে দিয়েছে।

এখন তথ্যের অবাধ প্রবাহ, যেখানে কোনো নির্দিষ্ট গেটকিপারের প্রয়োজন হয় না। আজকের দিনে, ফ্যাশন বা সংস্কৃতির ধারণা তৈরি করার ক্ষেত্রে ভোগ (Vogue)-এর প্রচ্ছদের চেয়ে মেট গালা-র মতো অনুষ্ঠানগুলো বেশি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে।

বর্তমানে, ম্যাগাজিনগুলো টিকে থাকার জন্য ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মের দিকে ঝুঁকছে। কেউ কেউ এখনো তাদের ঐতিহ্য ধরে রেখেছে, যেমন – ভ্যানিটি ফেয়ার অস্কারের পার্টি করে, বা নিউ ইয়র্কার এখনো লাভজনকভাবে ব্যবসা করছে।

কিন্তু তাদের প্রভাব আগের মতো নেই।

তবে, ম্যাগাজিনগুলোর এই সোনালী যুগ আমাদের অনেক কিছু শিখিয়ে যায়। কীভাবে একটি ম্যাগাজিন একটি সমাজের সংস্কৃতি, ফ্যাশন, এবং রাজনৈতিক আলোচনাকে প্রভাবিত করতে পারে, তা এই সময়ের ম্যাগাজিনগুলো প্রমাণ করেছে।

যদিও তাদের ক্ষমতা কমেছে, ম্যাগাজিনগুলো তাদের সময়ের প্রতিচ্ছবি হিসেবে এখনো গুরুত্বপূর্ণ। তারা দেখিয়ে গেছে কীভাবে একটি নির্দিষ্ট সময়ে একটি মাধ্যম প্রভাবশালী হতে পারে, এবং সেই প্রভাবের পরিবর্তনশীলতা কীভাবে সময়ের সাথে সাথে পরিবর্তিত হয়।

তথ্যসূত্র: সিএনএন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *